অরুণেশ ঘোষ

ভারতীয় কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও অনুবাদক

অরুণেশ ঘোষ (২৯শে ডিসেম্বর, ১৯৪১ - ২৪শে আগস্ট, ২০১১) বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও অনুবাদক। ১৯৬৫ সালে কয়েকজন আন্দোলনকারী ( অর্থাৎ শৈলেশ্বর ঘোষ এবং সুভাষ ঘোষ ) হাংরি মামলায় যখন রাজসাক্ষী হয়ে যান, আন্দোলনটি ভেঙে গিয়েছিল। সাত দশকের মাঝামাঝি অরুণেশ ঘোষ তার "জিরাফ" পত্রিকার মাধ্যমে হাংরি আন্দোলনকে পুনরায় জীবিত করে তোলার প্রয়াস করেন।

উক্তি সম্পাদনা

  • অজস্র কবিতা লেখা ছাপা হয়ে ঝরে যায়। সংখ্যাহীন কবিতা-গ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে পাঁচ- দশ জনের হাত ঘুরে হারিয়ে যায়। যারা বেশি প্রচারিত, পুরস্কৃত ও প্রতিষ্ঠিত, তারাও তাদের কলমে কালি শুকিয়ে আসার আগেই ঝরে যায়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, সময় থেকে সময়ে তাদের কবিতা প্রবাহিত হতে পারে না।
  • বাংলা কবিতা যখন রবীন্দ্র প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে উদ্বেল হয়ে উঠেছিল, রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতেই তাঁর প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে, সে সময়ের জটিলতার থেকে আজকের জটিলতা আরও বেশি মনে হয়। মনে হয়, আজ আরও বেশি অন্ধকার।
  • সমসাময়িক ভাসমান ঘটনাগুলোকে অনেকের কাছে চূড়ান্ত বলে মনে হয়। বিশৃঙ্খল ঘটনাপ্রবাহের নীচে, উপরিতলের উল্লাস ঘৃণা বিদ্বেষ আঘাত প্রত্যাঘাত সফলতা নিষ্ফলতা আর মরণপণ প্রতিযোগিতার নীচে নীচে থাকে আরও এক অন্তর্লীন স্রোত। স্রষ্টাকে তা বুঝতে হয়, সেই অন্তস্রোতকে ধরতে হয়, তুলে আনতে হয় ভাষায়।
  • রবীন্দ্র পরবর্তী কাব্য-কোলাহলের মধ্যে কারুর মনে ছিল না জীবনানন্দের কথা, দৃষ্টি ছিল না তাঁর দিকে। যেমন ভেঙে পড়া রাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের সময় কারুর চোখ থাকে না পতিত অবহেলিত নীচের তলার মানুষগুলোর দিকে। রাজপুরুষেরা, আমলারা, সেনাপতিমশাই ও সৈন্যধ্যক্ষরা, অভিজাত শ্রেণী ও বণিকেরা আর সুবিধাভোগী মধ্যস্তরের কোনো মানুষই ভাবতে পারে না। নীচের তলা থেকে বিশেষ কেউ একজন এসে ক্ষমতা দখল করে নেবে।
  • যে আগে জেগে ওঠে সে চায় অন্য সবাই জেগে উঠুক। সে তার একা জাগরণ নিয়ে তৃপ্ত থাকতে পারে না। কবি চায় তার দেশকে, জাতিকে জাগিয়ে তুলতে কিন্তু অনেক সময়ই তা ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে তার জীবৎকালে। যখন জেগে ওঠে তখন হয়তো কবি মৃত, রয়ে যায় তার লেখাগুলো।
  • পৃথিবীর কোনো ভাষায় আর কোনো কবিতা আন্দোলন, যেমন আমরা দেখেছি সর্বশেষ স্যুরলিয়ালিস্ট আন্দোলন, সে রকম কিছু হবে বলে মনে হয় না। প্রয়োজনও নেই আর কবিতা বা শিল্পের আন্দোলনের বা ম্যানিফেস্টোর। শুধু প্রয়ো কিছু কবি-ব্যক্তিত্বের, বিভিন্ন ভাষায় পৃথিবীর দিকে দিকে ।
  • কবিতার মূল শেকড় রস শুষে নেয় কবির জীবন থেকে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, কবির শৈশব কৈশোরের জীবন থেকে। যদিও একজন স্রষ্টা। সামান্যই এখান থেকে তুলে আনতে পারে। জীবনের যতটুকু তার মুঠোর মধ্যে, স্পর্শের আওতায় ও বোধের এলাকায় থাকে, তার বাইরে থাকে হাজার গুণ বেশি। কবি যতদিক থেকে যতভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন, বিশাল অতল অন্ধকার দেশ থেকে যায় ব্যাখ্যার অতীত। শুরু থেকেই আমার উৎসাহ না-জানা সেই দুর্গমের প্রতি, আমার অভিযাত্রা ছিল কুজ্‌ঝটিকাপূর্ণ অন্ধকার অভিমুখী। মূল শেকড় যেমন রস শুষে নেয় গভীর অস্তঃস্থল থেকে, তেমনি শাখা শেকড়গুলো ছড়িয়ে পড়ে দিক থেকে দিগন্তে। দেশ থেকে দেশান্তরে।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা