অপরিচিতা (আরটিভি নাটক)

সুমন আনোয়ার পরিচালিত ২০১৬-এর নাটক

অপরিচিতা নাটকটি জাকিয়া বারী মমরওনক হাসান অভিনীত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপরিচিতা গল্প অবলম্বনে রচিত। এতে চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন সুমন আনোয়ার।

কল্যাণী সম্পাদনা

  • [গল্পকথন] আমার নাম কল্যাণী। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান। এই জীবনটা দৈর্ঘ্যের হিসেবে বড় না গুণের হিসেবে বড়। তবু, ইহার বিশেষ একটা মূল্য আছে। ইহা সেই ফুলের মতো, যাহার বুকের উপর ভ্রমর আসিয়া বসিয়াছিল, এবং পদক্ষেপের ইতিহাস তাহার জীবনের মাঝখানে ফলের মতো গুটি ধরিয়া উঠিয়াছে।
  • থাক বাবা, ছবি দেখে কি মানুষ চেনা যায়? নাহয় দুদিন পরেই চিনলাম।
  • বিয়ের আগে কনের গা থেকে গহনা খুলে নেওয়া অমঙ্গল।
  • [শম্ভুনাথ মিত্রকে উদ্দেশ্য করে] আমাকে কিছু বলোনা তুমি। আমি তো তোমার মেয়ে। জীবনের জন্য সম্মান তো অনেক শেষরুপী। সেকথা তো তুমিই আমাকে শিখিয়েছ।

অনুপম সম্পাদনা

  • [সর্বশেষে]...এইতো জায়গা পাইয়াছি।
  • শুনিয়াছি কল্যাণীর নাকি ভালো পাত্র জুটিয়াছে। কিন্তু সে পণ করিয়াছে বিবাহ করিবে না। শুনিয়া আমার মন পুলকের আবেশে ভরিয়া গেল। আমি কল্পনায় দেখিতে লাগিলাম সে ভালো করিয়া খায় না। সন্ধ্যা হইয়া আসিলে চুল বাধে না। কাহার অপেক্ষায় যেন দিনাতিপাত করিতে থাকে।
  • আমি ভাবছি কল্যাণীর কথা। কী করছে ও এখন, কী ভাবছে। কত ছোট হলাম আমি, আমরা।... এই সময় হয়তো বধূ বরণে সবাই ব্যস্ত থাকতো। তা না হয়ে, লজ্জায়, অপমানে...।

শম্ভুনাথ মিত্র সম্পাদনা

  • আমার কল্যাণী যে ঘরে যাবে সে ঘর আলোকিত করে ফেলবে।
  • আমার কন্যার গহনা আমি চুরি করবো তাদের কাছে তো আমি আমার মেয়েকে দিতে পারি না।
  • [মামাকে উদ্দেশ্য করে] ঠাট্টা তো করেছেন আপনারা। ঠাট্টার সম্পর্কটাকে আমি আর স্থায়ী করতে চাই না।

অন্যান্য সম্পাদনা

  • হরিশ: মেয়ে যদি বলা হয় বনফুল, তবে কি আর বলবো। আমার সমস্ত শরীর মন, বসন্তের বাতাসে, বকুলবনের নব পল্লব রাশির মতো কাঁপিতে কাঁপিতে আলোছায়া খেলা করিতেছে।
  • মামা: [হরিশকে উদ্দেশ্য করে] এই তুমি সেদিনের ছোকড়া। নিয়ম কানুনের তুমি কি বোঝো রে?

সংলাপ সম্পাদনা

মামা: কি অবস্থা হরিশ। তাহলে বন্ধুর একটা ব্যবস্থা কর।
হরিশ: মামা সেই ব্যবস্থাই তো করতে এলাম। মেয়ের বংশ ভালো। মেয়ে উচ্চশিক্ষিত।
মামা: সে থাক। তা মেয়ের বাবার অবস্থা কেমন? কেমন দেবে থুবে? ছেলে কিন্তু আমাদের হাজারে একটা।

শম্ভুনাথ মিত্র: তোকে ছাড়া আমি কি করে থাকব রে মা?
কল্যাণী: তুমিই তো শিখিয়েছ বাবা। ভগবান সকলের জন্যই মঙ্গলময় ব্যবস্থা রাখে। নিয়মের বাইরে কি আমার স্থান হবে বাবা?

হরিশ: দাদা সবই তো বুঝলাম। মেয়ে কেমন দেখলে?
অনুপমের দাদা: হুম, চলনসই।
হরিশ: শুধু চলনসই?
অনুপম: আরে তুই দাদাকে চিনিস না? দাদার কাছে চলনসই মানে হচ্ছে চমৎকার।
অনুপমের দাদা: কিরে, অনুপম। শুভদৃষ্টির আগেই, তুই তোর নিজ মনে তার ছবি এঁকে ফেলেছিস?

মামা: দিন তারিখ ঠিক করার আগে আরও কিছু আলাপ সেড়ে নেওয়ার দরকার ছিল। বুঝতেই তো পারছেন।
শম্ভুনাথ মিত্র: আসলে আমি যে মেয়েকে সাজিয়ে দিবো সেটা আমার সামর্থের ভিতরেই। আপনাদের যদি কোন চাওয়া থাকে সেটা বলতে পারেন।
মামা: কত টাকা আর ক' ভরি গহনা দিচ্ছেন?
শম্ভুনাথ মিত্র: গহনা বিশ ভরি আর বিশ হাজার টাকা।
মামা: বিশ ভরি? না না, আপনি সেটা ত্রিশ ভরি করুন। আর টাকা নাহয় বিশ হাজার টাকা ঠিকই আছে। কি বলো দিদি?

শম্ভুনাথ মিত্র: তোমার মামা বলছিলেন বিয়ের কাজ শুরু হওয়ার আগে, উনি কনের সমস্ত গহনাগুলো যাচাই করতে চান। তুমি কি বল?
মামা: ও আর কি বলবে। আমি যেটা বলবো সেটাই হবে।
শম্ভুনাথ মিত্র: [অনুপমের দিকে তাকিয়ে] এটাই কি তবে ঠিক। উনি যা বলছেন সেটাই কি হবে? এ ব্যাপারে তোমার কি কিছু বলার নেই?
অনুপম: [নিশ্চুপ]
শম্ভুনাথ মিত্র: আচ্ছা ঠিক আছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। আমি কনের গা থেকে সমস্ত গহনাগুলো খুলে আনছি।

মামা: অনুপম যাও সভায় গিয়ে বস।
শম্ভুনাথ মিত্র: আর সভায় যেতে হবে না। আসুন, আপনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করি।
অনুপমের দাদা: সেকি বলছেন? লগ্ন?
শম্ভুনাথ মিত্র: ও নিয়ে আপনারা ভাববেন না।

শম্ভুনাথ মিত্র: আমি আপনাদেরকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি তো আপনাদের মতো ধনী নোই। এজন্য যোগ্য আয়োজনও করতে পারিনি। রাত অনেক হয়ে গিয়েছে। আপনাদের কষ্ট আমি আর বাড়াতে চাই না। এবার তবে...
মামা: চলুন, চলুন সভায়। আমরা প্রস্তুত।
শম্ভুনাথ মিত্র: গাড়ির কথা বলে দিই?

মামা: দিদি তুমি কোনো চিন্তা করো না। এরচেয়েও ভালো বিয়ে দেব অনুপমের।
অনুপমের মা: কর। তোদের যা ভালো মনে হয়।

অনুপম: সেদিন স্টেশনে আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল।
কল্যাণী: আরও আগেই দেখা হতে পারতো।
অনুপম: পারতো বলছেন কেন? পারতে চাই বলেই তো আপনার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।
কল্যাণী: আমি মাতৃ-আজ্ঞা গ্রহণ করেছি। মেয়েদের শিক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করবো।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা