আবদুল মান্নান সৈয়দ

বাংলাদেশী লেখক ও গবেষক

আবদুল মান্নান সৈয়দ (৩ আগস্ট ১৯৪৩ - ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক। কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের উপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে বাংলা সমালোচনা-সাহিত্যে তার গবেষণাধর্মী অবদান ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। আধুনিক বাংলা কবিতার পথিকৃৎ এবং প্রধানতম কবি জীবনানন্দ দাশের ওপর আলোচনার জন্য তিনি সুবিখ্যাত।

২০০৯ সালে মান্নান সৈয়দ
  • বাংলা সাহিত্যের সবিশেষ স্বাতন্ত্র চিহ্নিত শক্তিমান লেখকদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথ থেকে শহীদুল জহির গ্রন্থটি প্রণীত হয়েছে।
    • মান্নান সৈয়দ, আবদুল (২০১১)। রবীন্দ্রনাথ থেকে শহীদুল জহির। লেখালেখি। ৯৮৪৭০৫০০০৯৮৭১। 
   

সকল প্রশংসা তাঁর যিনি ঊর্ধ্বাকাশের মালিক;
নক্ষত্রের চলাফেরা চলে যাঁর অঙ্গুলিহেলানে;
আমরা আশ্রিত তাঁর করুণায়: জীবনে, মরণে;
তাঁর আলো চন্দ্র-সূর্য, তারাদের আলোর অধিক
তাঁরই মুক্তা প্রজ¦লিত ঘন নীল রাত্রির ভেতরে;
তাঁরই হীরা দীপ্যমান দিবসের পূর্ণ ললাটে;
যুক্ত করেছেন তিনি তুচ্ছতাকে অসীম, বিরাটে,
সমস্ত সৌন্দর্য তাঁরই লোকাত্তর প্রতিভাস ধরে।
বিপর্যয় দিয়ে তুমি রহমত দিয়েছো তোমার
দুঃখের দিনের বন্ধু, হে পরোয়ারদিগার!
কষ্টের নিকষে তুমি আমাকে করেছো তলোয়ার,
সম্রাটেরও হে সম্রাট, হে পরোয়ারদিগার।
স্বপ্নের ঘোড়ার পিঠে আমাকে করেছো সওয়ার,
হে রহমানুর রহিম! হে পরোয়ারদিগার।

"সকল প্রশংসা তার"

জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ (১৯৬৭)

সম্পাদনা
   

কবিতাকে নোংরা থাকতে দাও, ব্লেডে ছেঁটে দিয়ো না তার আকীর্ণ চোয়াল : সংশোধনে স্বর্গ পায় একমাত্র মেয়েরাই—ব্যয়ের বাইরে আর ছিপের অতীত।

"টুকরো-টুকরো মৃত্যু"
   

জ্যোৎস্না কী? – না, জ্যোৎস্না হয় জল্লাদের ডিমের মতো চুলহীন জলবায়ুহীন মুণ্ডু, জোড়া-জোড়া চোখ, সাতটি আঙুলের একমুষ্টি হাত, রক্তকরবীর অন্ধকার, এবং একগুচ্ছ ভুল শিয়ালের সদ্যোমৃত যুবতীকে ঘিরে জ্বলজ্বলে চিৎকার।

"জ্যোৎস্না"। জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ। পাঠক সমাবেশ। ১৯৬৭। 
   

আমি যাবো, যে রাস্তা কুমারী তার প্রতি; যে-রাস্তায়
সোনালী তারার মতো বাঁশপাতা-খচা শুক্লাভায়;
তারার শরীর থেকে নেমে-আসা তপ্ত-লাল ধুলো;
সুন্দরতম ফেরেশতা হাঁটেন যে-রাস্তায়; কুলো
হয় ক্রমশ পত্রালি; বৃষ্টি হয় সোনালি প্রভাত;
রৌদ্র, নীল হরিণের দেহ থেকে রক্তসম্প্রপাত;
বাতাস, গোলাপি দীর্ঘশ্বাস; তরু যেন ক্রীতদাস
দাঁড় টেনে চলে যায় ছিঁড়ে শস্পমৃত্তিকার পাশ :-
স্পন্দমান যে-রাস্তার শেষে স্থির, ছোটো কুঁড়েঘর :
থেমে, ঠান্ডা কুয়ো থেকে পান করবো তরল ঈশ্বর।

"জ্যোৎস্না"। জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ। পাঠক সমাবেশ। ১৯৬৭। 

জ্যোৎস্না-রৌদ্রের চিকিৎসা (১৯৬৯)

সম্পাদনা
   

সবুজ চাঁদের নিচে প’ড়ে আছে আমার শরীর।
চেতনা, তারার নিচে। আমার চিৎকার উঠে যায়
অলীক ফিটনে চ’ড়ে ঘুরে-ঘুরে আরক্ত চাকায়
নীল শূন্যে। নদী : আমার জীবন; বাকি সব : তীর।

"মরণের অভিজ্ঞান"
   

আমি যাব, যে রাস্তা কুমারী তার প্রতি; যে-রাস্তায়
সোনালি তারার মতো বাঁশপাতা-খচা শুক্লাভায়;

"রাস্তা"
   

জিভের ডগায় তুমি ধরেছ মার্বেল,
তুমি কুমারীর সায়ার বিপন্ন গিঁট,
পিআনোর ভিতরে সমস্যা চুরি করে চলে-যাওয়া
                       তুমি কি মেঘের অগ্নি?
ভাগাড়ও জ্যোৎস্না দ্যাখে, তুমি তা-ই?

"কবিতা, বিপন্ন গিঁট"

ও সংবেদন ও জলতরঙ্গ (১৯৭৪)

সম্পাদনা
   

ভোরের দিকে
গৃহ-যুদ্ধ মুক্তি-যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

"মুক্তি-যুদ্ধ"

পরাবাস্তব কবিতা (১৯৮২)

সম্পাদনা
   

আলতামিরা গুহা থেকে পাগল বেরিয়ে এসে ছুটেছে বাইসন
পৃথিবী মাড়িয়ে, ভেঙে ফেলে ট্যাবু ও টোটেম,
একটু আড়াল বুঝে হরিণী লুকিয়ে পড়ে
            শহরের কোনো গলিপথে,
মসজিদের পাশে, আয়ত নয়নে দ্যাখে :
নিথর চৌবাচ্চা ব্যেপে খেলা করে লাল-নীল মাছ ॥

"লাল-নীল মাছ"

কবিতা কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (১৯৮২)

সম্পাদনা
   

একদিন মানুষ ছিলেন, এখন লেখক।
মানুষের সমস্যা কখনো পীড়ন করে না আর তাঁকে,
লেখকের সমস্যায় আপাদমস্তক জর্জরিত।

"লেখক"
   

আমার বন্ধু শাহজাহান হাফিজ ছিল জীবনানন্দের চেয়ে বেশি নির্জন।
চাঁদ দেখলে সে থরথর করে কাঁপত,
নদী দেখলে থরথর করে কাঁপত,
নতুন কবিতাবই দেখলে তার হাত কাঁপত—
            থরথর করে হাতের আঙুলগুলি কাঁপত,
তার গ্রামের বর্ণনা দিতে-দিতে উত্তেজনায় তার চোখে পানি এসে যেত,
কোনো মেয়ের মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারত না—
হাফিজ সামান্যে ছিল অসামান্য খুশি।

"আমার বন্ধু"

চতুর্দশপদী

সম্পাদনা
   

একদিন কুলিরোড ছিলে।
হাঁটু অব্দি ডোবানো ধুলোয় ছিলে এক নির্জন তাপস।
হড়হড় যেতে একদিন দেখেছিলেন তরুণ খরগোশ
যেন কোনো প্রাকৃতিক নিবিড় নিখিলে
বিদ্যুৎচমক তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন মটরশুঁটির খেতে।

"গ্রিনরোড"

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা