আবদুল হক

বাংলাদেশি প্রাবন্ধিক

আবদুল হক (১৯১৮-১৯৯৭) বাংলাদেশের প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক এবং লেখক ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেছিলেন। এছাড়া তিনি দাউদ পুরস্কার হিলালী স্মৃতি স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন।

আবদুল হক বর্তমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার উদয়নগর গ্রামে ১৯১৮ সালের ১০ই অক্টোবর মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সমস্ত শিক্ষাজীবন জুড়ে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেমন কানসাট, টাঙ্গাইল, রাজশাহী ও কলকাতায় পড়াশোনা করেন। পাকিস্তান-পর্বে আবদুল হক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা নিয়ে ক্ষুরধার লেখা লিখে কলম-সৈনিক উপাধি লাভ করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে ১৯৪৭-পূর্বকালেই তিনি কলম ধরেন এবং এ বিষয়ক প্রথম লেখক হিসেবে স্বীকৃতি পান। পেশাগত জীবনে তিনি ১৯৬৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাংলা উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলা একাডেমীতে দায়িত্বরত ছিলেন। তাঁকে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম উত্তরসাধক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে আছে: 'ক্রান্তিকাল', 'সাহিত্য ঐতিহ্য মূল্যবোধ', 'বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ', 'সাহিত্য ও স্বাধীনতা, 'ভাষা আন্দোলনের আদিপর্ব', 'নিঃসঙ্গচেতনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ', 'চেতনার অ্যালবাম ও বিবিধ প্রসঙ্গ'। প্রবন্ধ রচনা ছাড়াও তিনি লিখেছেন কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটক। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

  • ব্যাক্তির চেতনা এই এই জীবনকালেই প্রথম আর শেষ কথা, কিন্তু সমগ্র মানবীয় চেতনা নয়।
    • চেতনার অ্যালবাম, চেতনার অ্যালবাম ও বিবিধ প্রসঙ্গ (১৯৯৩), আবদুল হক, বাংলা একাডেমি
  • ইতিহাসের স্মৃতির ভার একদিন মানুষের পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠবে মনে হয়।
    • চেতনার অ্যালবাম, চেতনার অ্যালবাম ও বিবিধ প্রসঙ্গ (১৯৯৩), আবদুল হক, বাংলা একাডেমি
  • রণনীতি এখন এই পর্যায়ে উঠেছে যে যুদ্ধে প্রতিপক্ষের যে-সব মানুষ মরে তারা আর মানুষ নয়, সংখ্যা মাত্র।
    • চেতনার অ্যালবাম, চেতনার অ্যালবাম ও বিবিধ প্রসঙ্গ (১৯৯৩), আবদুল হক, বাংলা একাডেমি
  • এক হিসাবে সাহিত্যের সব যুগই ক্রান্তির যুগ, কেননা জাগতিক পরিবর্তনের অভিসংঘাতে এবং নিজেরও প্রয়োজনে সর্বদাই সাহিত্যের রূপান্তর চলতে থাকে রূপান্তর চলতে থাকে তার আঙ্গিকের, রীতির, চিন্তাধারার।
    • আবদুল হক, ক্রান্তিকাল, পৃষ্ঠা ৯
  • তেলের সম্বল ফুরিয়ে এলেই যেমন প্রদীপ-শিখা নিভে যায়, জীবন-প্রদীপ নিভে গেলেই তেমনি মানুষের সবকিছু শেষ হয়ে যায় না, তারপরেও তার আত্মা থেকে যায়। মৃত্যুর এ-পারে সে বেঁচে থাকে না, কিন্তু মৃত্যুর ওপারে বেঁচে থাকে।
    • আবদুল হক, শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, পৃষ্ঠা ১৫
  • আমার আত্মার কাছে অতীতের ৩৫০ কোটি বছরের কোনো মূল্য নেই। আমার আত্মার কাছে মূল্যবান শুধু অনাগত কাল, যে অনাগত কাল তাকে বেঁচে থাকতে হবে।
    • -আত্মার অমরত্ব অনুচ্ছেদ, শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, আবদুল হক।
  • অসৎ ব্যক্তির সাথে থাকলে অনেক সৎ লোকেরও বিপদ হয়।
    • - আবদুল হক, গল্পে উপদেশ, পৃষ্ঠা ১১
  • মাখনদা নামে আমার এক হিন্দু প্রতিবেশীর এক সময় বাড়িতে মুরগি চরতে গেলে গালি-গালাজ করতেন। তখন আমার বাল্যকাল। বেশ কয়েক বছর পর তিনি নিজেই মুরগি পুষতেন-ডিম বিক্রি করার জন্য।
    • - আবদুল হক,আমার জীবন কথা: স্মৃতিকথা ও দিনলিপি, পৃষ্ঠা ১৮

আবদুল হক সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • আবদুল হক রাজনীতিবিদ বা সমাজকর্মী ছিলেন না। এ-কারণে সমাজ সম্পর্কে প্রদত্ত তাঁর মতামত প্রবন্ধের আকারে সাহিত্য হয়ে উঠেছে।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা