আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (২৬ জুন ১৯২৩ - ৩ নভেম্বর ১৯৭৫) বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। একজন নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।

  • দেশের ভবিষ্যত সেনাবাহিনীর ভিত্তি হবে আপনারা। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে, যারা নিজেদের সেরা যোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করবে, তারাই আমাদের ভবিষ্যত সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবে।
  • অত্যাধুনিক সুসজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে এই যুদ্ধের বিজয়ী পরিণতি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তবে আমি আপনাদের বলছি, এই যুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আপনাদের সঙ্গে আছে।
  • আমাদের সংগ্রাম ইসলামের বিরোধী নয়। ইসলামের মূল্য ও শিক্ষা সংরক্ষণ করা হবে। অন্যান্য ধর্মের মূল্যবোধ ও শিক্ষাকেও রক্ষা করা হবে। আমরা একটি শোষণমুক্ত রাষ্ট্রের কল্পনা করি। আমাদের লক্ষ্য একটি সমতাভিত্তিক ও শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। যে সমাজে জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ-মানুষের মধ্যে কোনো বাধা থাকবে না।
  • যারা বাংলাদেশকে তাদের মাতৃভূমি হিসেবে গ্রহণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত তারা আমাদের ভাই। যারা কুইসলিং এর ভূমিকা পালন করছে, তাদের ধর্ম যাই হোক না কেন, তারা আমাদের শত্রু এবং বাংলাদেশের শত্রু। জনগণের আদালতে বিচার হয়েছে।
  • মুক্তিযুদ্ধ এখন কেবল মুক্তিফৌজ ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মুক্তিযুদ্ধ এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। দেশবাসী হানাদারদের বিতাড়িত করে স্বদেশ ভূমিকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।
    • ১২ আগস্ট ১৯৭১ মুজিবনগর থেকে পাঠানো এক বার্তায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান এই বার্তা দেন, উদ্ধৃতঃ ডেইলি স্টার বাংলা
  • বাংলাদেশ হবে শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা
  • স্বাধীনতার জন্য এই রক্তদান বৃথা যাবেনা,আজকের এই ত্যাগ তিতিক্ষা বাঙ্গালীকে বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে জাগরূক করে রাখবে।
    • উত্তরাঞ্চলে মুক্তিফোজ ক্যাম্প পরিদর্শনকালে, ১ জুলাই ১৯৭১ উৎসঃ স্বদেশ
  • শরণার্থীরা জমি ও সম্পত্তি যদি কেহ দখল করে থাকে তা হলে সে জমি ও সম্মত্তি তাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করা হবে । বাংলাদেশ থেকে যে সব ছিন্নমূল মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তাদের সকলকেই বাংলা দেশে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
  • দখলদার বাহিনী দেশব্যাপী যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাতে আজ সামগ্রিক অর্থনীতি ভেঙে গেছে। তাঁতির হাতে সুতো নেই, কৃষকের লাঙল নেই, ছাত্রের বই নেই, ব্যবসায়ীদের দোকান-পাট নেই। আর শিল্পপতিদের কারখানা কলকজা অপহৃত বা বিধ্বস্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে সুসমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এ সমস্যার সর্বাধিক সমাধান অত্যাবশ্যক। শুধু রিলিফ দিয়ে চিরদিন চলতে পারে না। তিনি বলেন যে, সরকার সেই চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
    • ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সাংবাদিক সম্মেলনে, উৎসঃ সংবাদ
  • দুর্দান্ত প্রচেষ্টার পরেও পাকিস্তান মিলিটারির গুপ্তসভা বাংলাদেশে তাদের অধিনস্ত এলাকাগুলোর ন্যায়সভা পুনস্থাপনে ব্যর্থ হয় এবং তারা কখনও একাজে সক্ষম হবে না।
    • বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ কামারুজ্জামানের এর সাক্ষাৎকার বিবরণী, ২০ মে ১৯৭১, উৎসঃ হিন্দুস্তান টাইমস
  • যারা বাংলাদেশকে ভালবাসেন না, তাদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই । আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান (বঙ্গবন্ধু)ভাবী প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ ।
  • ইয়াহিয়া বিশ্বের দৃষ্টিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ভারতকে যুদ্ধে জড়াতে চায়। আমাদের মহান বন্ধু ভারত অব্যাহতভাবে সহনশীলতার,গণতন্ত্রের প্রতি মর্যাদার এবং গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধের জন্য সংগ্রামরত মানুষের প্রতি সমর্থন জানানোর কর্মনীতি অনুসরণ করে আসছে।
  • অখণ্ড পাকিস্তান এখন মৃত এবং ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ঠাই নিয়েছে। বাংলাদেশে ইয়াহিয়া খান সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি ।স্ব আরোপিত এক নায়ক ইয়াহিয়ার বাংলাদেশ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের কোন অধিকার নাই। ইয়াহিয়া নয়,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারই বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি। আমরাই বৈধ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ । বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ছাড়া কোনো বিদেশী সরকারের চাপিয়ে দেয়া শাসনতন্ত্র মেনে নেবে না। আমরা দেশ শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিসংগ্রাম করেছি এবং আমাদের মুক্তিবাহিনী শত্রুকে দেশ থেকে বিতারিত করতে সক্ষম হয়েছে। জনগণ আওয়ামী লীগের পেছনে রয়েছে । মুক্তঞ্চল বাংলাদেশ সরকারের কেবল পূর্ণ নিয়ন্ত্রণেই নেই, সেখানে বেসামরিক প্রশাসন স্বাভাবিক কাজকর্ম পরিচালনা করছে।

তার সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • উত্তরের নক্ষত্র
    • কামারুজ্জামান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর উক্তি উদ্ধৃতঃকালের কণ্ঠ
  • মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে জনগণের সেবার জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ গ্রহণের জন্য যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, তা সবারই অনুসরণযোগ্য।
    • বঙ্গবন্ধুর চিঠি-সদ্য পদত্যাগকারী বাণিজ্যমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামানের কাছে লিখিত এক পত্রে বলেছেন (উৎসঃ বঙ্গবন্ধুর চিঠি, দৈনিক জনপদ, ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪, পৃ. ১) উদ্ধৃতঃ দৈনিক বাংলা
  • এ এইচ এম কামারুজ্জামানের উপস্থিত বক্তৃতা দেয়ার ছিল অসাধারন, তিনি কোন লিখিত স্ক্রিপ্ট ছাড়াই কথা বলতে পারতেন।
    • মাই ট্রাভেলস উইথ কামারুজ্জামান (খন্ড ২), ব্যক্তিগত সচিব (১৯৭২-১৯৭৫), উদ্ধৃতঃ ডেইলি অবজারভার
  • আমাদের বাবার মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। মায়ের কাছে শুনেছি বাবার রক্তমাখা দেহের ওপর চাদর চাপানো ছিল। মুখটা দেখে মনে হয়নি কী নিদারুণ কষ্টে তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে।
    • এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মেয়র, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, উদ্ধৃতঃ বাংলানিউজ২৪

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা