আরজ আলী মাতুব্বর

বাংলাদেশী দার্শনিক

আরজ আলী মাতুব্বর (১৭ ডিসেম্বর, ১৯০০ – ১৫ মার্চ ১৯৮৫), একজন বাংলাদেশী দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং লেখক ছিলেন। তার প্রকৃত নাম ছিলো “আরজ আলী”। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাদে তিনি “মাতুব্বর” নাম ধারণ করেন। গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করেন, যেখানে শুধু কোরান ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের উপর শিক্ষা দেয়া হত। তিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্মদর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করেন। ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তার লেখায় উঠে এসেছে। তিনি তার ৮৬ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন পড়াশোনা করে। জ্ঞান বিতরণের জন্য তিনি তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্যপদ (১৯৮৫), বাংলাদেশ লেখক শিবিরের হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৮) ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর (বরিশাল শাখা) সম্মাননা (১৯৮২) লাভ করেন।

  • বিদ্যাশিক্ষার ডিগ্রি আছে জ্ঞানের কোনো ডিগ্রি নেই, জ্ঞান ডিগ্রিবিহীন ও সীমাহীন। [১]
  • হিন্দুদের নিকট গোবর পাক পবিত্র কিন্তু অহিন্দু মানুষ মাত্রেই অপবিত্র। পুকুরে সাপ, ব্যাঙ মরিয়া পচিলে উহার জল নষ্ট হয় না, কিন্তু বিধর্মী মানুষে ছুঁইলেও উহা হয় অপবিত্র। [২]
  • জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে শুধু আপন বিশ্বাসই নয়, সকল মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সকল ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা দরকার প্রতিটি জ্ঞান পিপাসু মানুষের। শুধু সীমাবদ্ধ পরিমন্ডলে আবদ্ধ হলে চলেনা। সীমানাকে অতিক্রম করে যেতে হবে ক্রমান্বয়ে। এর মধ্যেই ক্রমশ অতিক্রম করা যাবে নিজেকে।
    • আরজ আলী মাতুব্বর [৩]
  • মানবতাকেই আমি একটা ধর্ম মনে করি। মানবতাই একটা ধর্ম। আমি এটা পালন করি এবং অন্যকে পালন করতে পরামর্শ দেই।
    • আরজ আলী মাতুব্বর [৪]
  • লাইব্রেরীই আমার তীর্থস্থান। আমার মতে মন্দির, মসজিদ, গির্জা থেকে লাইব্রেরী বহু গুণে শ্রেষ্ঠ।
    • আরজ আলী মাতুব্বর [৫]
  • সকল সম্প্রদায়ের ধর্মযাজকেরা একই কথা বলিয়া থাকেন যে, তাহাদের আপন আপন ধর্মই একমাত্র সত্যধর্ম, অন্য কোন ধর্মই সত্য নহে। অন্যান্য ধর্মালম্বী লোকদের স্বর্গপ্রাপ্তি, পরিত্রাণ, নির্বাণ বা মোক্ষলাভ ঘটিবে না। এ যেন বাজারের গোয়ালাদের ন্যায় সকলেই আপন আপন দধি মিষ্টি বলা।
    • আরজ আলী মাতুব্বর [৬]

আরজ আলী মাতুব্বর সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • আরজ আলী মাতুব্বর একজন দার্শনিক ছিলেন এমন একটি বাক্য উচ্চারণ করতে আমার ভালো লাগে।
    • শামসুর রাহমান [৭]
  • আরজ আলী মাতুব্বর এদিক থেকে কী মধ্যবিত্ত, কী জনসাধারণ দুই হিসেবেই এদেশের প্রথম বাংলা ভাষা-ভাষী খাঁটি দার্শনিক এবং একই সঙ্গে ‘নলেজ’ ও ‘উইজডম’-এর অধিকারী। লেখাপড়া বেশি করলে ‘নলেজ’-এর পরিমাণ বেশি হয়ে যেত। যদি সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, কান্ট, হেগেল বেশি পড়তেন তবে ওঁদেরকে স্বীকার-অস্বীকার করা বা ওঁদের আশে-পাশে ঘোরা-ফেরা ছাড়া বেশি কিছু করতে পারতেন না। পা দুটো যে মাটিতে গাঁথা আছে সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনভাবনা ভেবেছেন। …আধুুনিক জীবন, আধুনিক সংস্কৃতি দ্বারা তাঁকে আক্রান্ত হতে হয়নি। স্বয়ম্ভু এক বৃক্ষের মতোই আস্তে আস্তে তাঁর তৈরি হওয়া।
    • হাসান আজিজুল হক [৮]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা