আহমদ রেজা খান বেরলভী

ইসলামী পণ্ডিত, আইনবিদ, সুফি, সংস্কারক

আহমদ রেজা খান (আরবি: أحمد رضا خان, ফার্সি, উর্দু: احمد رضا خان‎, হিন্দি: احمد رضا خان), সাধারণত আরবিতে আহমদ রিদা খান নামে পরিচিত, বা কেবল "আলা-হযরত" নামে পরিচিত (১৪ জুন ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ বা ১০ শাওয়াল ১২৭২ হিজরি - ২৮ অক্টোবর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ বা ২৫ সফর ১৩৪০ হিজরি), ছিলেন একজন ইসলামি পন্ডিত, আইনবিদ, ধর্মতাত্ত্বিক, তপস্বী, সুফি, উর্দু কবি, ব্রিটিশ ভারতে সংস্কারক এবং বেরেলভী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা।

উক্তি সম্পাদনা

  • সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যখন থেকে আমি জ্ঞান অর্জন করেছি তখন থেকে আমি আমার হৃদয়ে আল্লাহর শত্রুদের প্রতি তীব্র অপছন্দ উপলব্ধি করেছি।একবার আমি আমার গ্রামে গিয়েছিলাম (আপনে দেহত কো)। সেখানে গ্রামীণ আদালতে কিছু মামলা হয় এবং চার দিক থেকে আমাদের কর্মীদের (মুলাজিম) বদায়ুনে [আদালতে হাজিরা দিতে] যেতে হয়। আমি একেবারে একা ছিলাম। এটি এমন একটি সময় ছিল যখন আমি তীব্র কোলিক ব্যথায় ভুগছিলাম। সেদিন যোহরের সময় থেকে ব্যথা শুরু হয়েছিল। . . আমি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারিনি। [আহমদ রিজা তখন বর্ণনা করেন যে তিনি সাহায্যের জন্য আল্লাহ ও নবীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, এই আবেদনটি গৃহীত হয়েছিল এবং তিনি নামাজ পড়তে সক্ষম হন। কিন্তু ব্যথা আগের মতোই তীব্রভাবে ফিরে এল এবং তিনি শুয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সেখানে শুয়ে ছিলেন] গ্রামের একজন ব্রাহ্মণ আমার সামনে দিয়ে গেল। (নরাধম নিজে তৌহিদের ব্যপারে কিছু দাবি করেছিল এবং আমাকে খুশি করার জন্য মুসলমানদের সাথে প্রতারণা করেছিল।) গেট খোলা ছিল। আমাকে দেখেই সে ভেতরে এল। আর আমার পেটে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল, 'এখানে কি ব্যাথা করছে?' তার অপবিত্র (নাজিস) হাত আমার শরীরে স্পর্শ করার কারণে আমি এমন বিদ্বেষ (করাহাত, নাজরাত) অনুভব করলাম যে আমি আমার ব্যথা ভুলে গেলাম। এবং আমি এর চেয়েও বড় ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম, [ যখন জেনেছি] একজন কাফিরের হাত আমার পেটের উপর ছিল। এটি এমনই এক শত্রুতা ('আদাওয়াত) যা একজনের [কাফিরদের প্রতি পোষণ করা উচিত]।
    • উষা সান্যালে বর্ণিত - ব্রিটিশ ভারতে ভক্তিমূলক ইসলাম এবং রাজনীতি _ আহমদ রিজা খান বেরেলভি এবং তার আন্দোলন, ১৮৭০-১৯২০-অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (১৯৯৬), এছাড়াও জেইন ন, এম. (২০১০)। সরল পথ: হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উপর প্রবন্ধ, ১৭০৭-১৮৫৭।
  • আলহামদুলিল্লাহ! আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো কারণে আমার সন্তানদের বা সম্পদকে কখনো ভালোবাসিনি। যেকোন কিছুর প্রতি আমার টান ছিল একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। অতএব, আমার সন্তানদের প্রতি স্নেহ হলো সৃষ্টির প্রতি দয়ার কারণে এবং [এই কারণে যে] এটি একটি পুণ্যের কাজ (সাওয়াব)। আমার সন্তানরা আমার জন্য নেক আমল করার মাধ্যম। [যদিওবা] এটি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, [তবুও এটি] আমার স্বভাব।
  • সেই অবিশ্বাসীর মুখ পুড়ে যাক যে কখনো বলে নবীর কাপড় নোংরা হয়েছিল! মহান আল্লাহ যদি তাকে সঠিক শিষ্টাচার বোঝার তাওফীক দেন তাহলে সে কেন বলল না যে, ‘ধুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড়ে আশ্রয় নিয়েছে’?
  • কিয়ামের অনুশীলন উত্তম এবং গ্রহণযোগ্য কারণ এটি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান এবং প্রকৃতপক্ষে, এটি মহান 'উলামাগণের একটি অনুশীলন এবং আমরা তাদের অনুসরণ করি।
  • তুমি যদি আমার জীবন চাও, আমি তা বলি দেব। তুমি যদি আমার সম্পদ চাও আমি তা দেব। যাইহোক, একটি জিনিস আছে যা আমি কখনই কুরবানী করব না, এবং তা হল, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।
  • নিঃসন্দেহে সত্য এটাই যে, সকল আম্বিয়া ও মুরসালিন, নৈকট্যশীল ফেরেশতা এবং পূর্ববর্তি ও পরবর্তিদের সম্মিলিত জ্ঞান মিলে আল্লাহ পাকের জ্ঞানের সাথে [ঐ পরিমাণ] সম্পর্ক রাখে না, [যে পরিমাণ সম্পর্ক] একটি পানির ফোঁটার কোটিতম অংশের সাথে কোটি কোটি সমুদ্রের রয়েছে।
    • ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ১৪/৩৭৭
  • কোন দৌলত, কোন নেয়ামত, কোন সম্মান যা প্রকৃতপক্ষে দৌলত ও সম্মান, এমন নেই যেটি আল্লাহ পাক অন্য কাউকে দিয়েছেন আর রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রদান করেননি। যা কিছু যাকেই দান করা হয়েছে বা দান করা হবে, দুনিয়ায় বা আখিরাতে, তার সবই হুযুরে পাক (সা:) এর বদৌলতে, হুযুরে পাক (সা:) এর কারণেই, হুযুরে পাক (সা:) এর হাতে দান করা হয়েছে।
    • (ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ২৯/৯৩)

আহমদ রেজা খান সম্পর্কে উক্তি সম্পাদনা

  • আমার অন্তরে মাওলানা আহমদ রেজার প্রতি সীমাহীন ভক্তি ও শ্রদ্ধা রয়েছে। [যদিওবা] তিনি আমাদেরকে কাফির বলেন, কিন্তু তা ইশকে রাসুল (সা:) এর ভিত্তিতেই বলে থাকেন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তো বলেন না।
    • আশরাফ আলী থানভী, চটান লাহোর ২৩শে এপ্রিল ১৯৬২ ইং সংখ্যা আলা হযরতকা ফিকহী মকাম, লাহোর মুদ্রিত, পৃষ্ঠা-১১০, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ
  • শিষ্ঠাচার ও উন্নত নৈতিকতা সমৃদ্ধ কোন ব্যক্তি যখন কোন শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষিত না হয়েই গণিত শাস্ত্রে গভীর অন্তদৃষ্টি ধারণ করেন, তখন তা খোদা প্রদত্ত জন্মগত বৈশিষ্ট্যই বটে। আমার গবেষণাকর্ম ছিল একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান সম্পর্কে। কিন্তু ইমাম সাহেবের পদ্ধতি ও ব্যাখ্যাবলী ছিল স্বতঃস্ফুর্ত- যেন বিষয়টি সম্পর্কে তার গভীর গবেষণা রয়েছে। ভারতে এত প্রসিদ্ধ ব্যক্তি আর নেই। এত উচু মাপের জ্ঞানী ব্যক্তি আমার মতে আর কেউ নেই। মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর মাঝে এমন জ্ঞান নিহিত রেখেছেন যা সত্যি বিস্ময়কর। গণিত, ইউক্লিড, অ্যালজেব্রা ও সময় নির্ণয় ইত্যাদির ক্ষেত্রে তাঁর গভীর দৃষ্টি অত্যন্ত বিস্ময়কর। একটি গাণিতিক সমস্যা, যা আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেও সামাধান করতে পারিনি, তা এই জ্ঞানী ব্যক্তিটি কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাখ্যা করে দিলেন।
    • গণিতবিদ স্যার জিয়াউদ্দিন আহমদ, একরামে ইমাম আহমদ রেযা (মোহাম্মদ বুরহানুল হক), লাহোর, পৃষ্ঠা: ৫৯-৬০)
  • আমি আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা (রাহ:)-এর হুকুমগুলো মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করেছি এবং এর মাধ্যমে এই মতামত তৈরি করেছি; এবং তাঁর ফতোয়া তাঁর বুদ্ধিমত্তা, বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, তাঁর সৃজনশীল চিন্তার গুণমান, তাঁর চমৎকার এখতিয়ার তাঁর ইসলামী জ্ঞানের সমুদ্রের সাক্ষ্য দেয়। ইমাম ইমাম আহমদ রেজা একবার একটি মত তৈরি করলে তিনি তাতে অটল থাকেন; তিনি শান্তভাবে বিশ্লেষণের পরে নিজের মতামত প্রকাশ করেন, অতএব, তাঁর কোন ধর্মীয় হুকুম ও রায় প্রত্যাহার করার প্রয়োজন হয় না।... এমন প্রতিভাবান ও বুদ্ধিমান আইনজ্ঞের আবির্ভাব [পূর্বে কখনো] ঘটেনি।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা