আহসান হাবীব (কবি)
বাংলাদেশি কবি ও সাহিত্যিক
আহসান হাবীব (২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ - ১০ জুলাই ১৯৮৫) একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশি কবি ও সাহিত্যিক। দীর্ঘ দিন দৈনিক বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন সূত্রে তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে অভিভাবকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি চল্লিশের দশকের অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে পরিগণিত। বাংলা ভাষা সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং ১৯৯৪ সালে মরণোত্তর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
উক্তি
সম্পাদনারাত্রিশেষ
সম্পাদনা- নদীর জলে ঝলকে উঠবে মুক্তি,
বন্যা আসবে রেড রোডের প্রান্তে
কেননা
এদিকে আবার জাগবে নতুন সূর্য!- রেড রোডে রাত্রিশেষ
- রাতের পাহাড় থেকে খসে যাওয়া
পাথরের মতো অন্ধকার ধসে ধসে পড়ছে
দু’হাতে সরিয়ে তাকে
নির্বিকার নিরুত্তাপ মন এগোলো।- রেড রোডে রাত্রিশেষ
- রাতের পাহাড় থেকে খসে যাওয়া
পাথরের মতো অন্ধকার ধসে ধসে পড়ছে
দু’হাতে সরিয়ে তাকে
নির্বিকার নিরুত্তাপ মন এগোলো।- রেড রোডে রাত্রিশেষ
- মনে থাকে যার দহনের তৃষ্ণা তারি সেই মন জয়
সম্ভব নয়, তবু ভুল ক’রে ভালবাসতেই হয়।- এই মন – এ-মৃত্তিকা
- মনে থাকে যার দহনের তৃষ্ণা তারি সেই মন জয়
সম্ভব নয়, তবু ভুল ক’রে ভালবাসতেই হয়।- এই মন – এ-মৃত্তিকা
বিদীর্ণ দর্পণে মুখ
সম্পাদনা- সেই অস্ত্র আমাকে ফিরিয়ে দাও
সে অস্ত্র উত্তোলিত হলে
পৃথিবীর যাবতীয় অস্ত্র হবে আনত
সে অস্ত্র উত্তোলিত হলে
অরণ্য হবে আরো সবুজ- সেই অস্ত্র
- বলেছিলাম ভালোবাসবো।
ভালোবাসার জোরে এই
নদীকে আমি জনস্রোতের
কাছাকাছি নিয়ে যাবো- ভালোবাসা আবিষ্ট
দুই হাতে দুই আদিম পাথর
সম্পাদনা- আসমানের তারা সাক্ষী
সাক্ষী এই জমিনের ফুল, এই
নিশিরাইত বাঁশবাগান বিস্তর জোনাকি সাক্ষী
সাক্ষী এই জারুল জামরুল, সাক্ষী
পর্বের পুকুর, তার ঝাকড়া ডুমুরের ডালে স্থির দৃষ্টি
মাছরাঙা আমাকে চেনে
আমি অভ্যাগত নই
খোদার কসম আমি ভিনদেশি পথিক নই
আমি কোনো আগন্তুক নই।- উৎসর্গ
- দুপাশে ধানের ক্ষেত
সরুপথ
সামনে ধু ধু নদীর কিনার
আমার অস্তিত্বে গাঁথা। আমি এই উধাও নদীর
মুগ্ধ এক অবোধ বালক।- উৎসর্গ
- হাতে সানকি একটু ফেন
একটু পচা ভাতের আশায়
কাঁপবে আর তার দু’চোখে হঠাৎ
ক্লান্তির আঁধার নামলে:- ধান শুধু ধান
সারা দুপুর
সম্পাদনা- কবিতার লাবণ্যে শরীর তার সম্পন্ন
যদিও তার কোনো তৃষ্ণা নেই
অথচ তৃষ্ণার সমুদ্রও তার
দেহে অনায়াসে লীন হতে পারে
ট্রয়ের আত্মাকে আর হৃদয়কে
জ্বালিয়েছে যে আগুন।- তারা দুজন
মেঘ বলে চৈত্রে যাবো
সম্পাদনা- শব্দের মালায় আমি তোমাকে গাঁথতে চাই স্বাধীনতা
তুমি ঘরে বাইরে এমন উলুল ঝুলুল নৃত্যে মেতে আছো,
কি আশ্চর্য, আমার কলম
কিছুতেই তোমাকে যে ছুঁতেও পারে না- স্বাধীনতা
তার সম্পর্কে উক্তি
সম্পাদনা- রাত্রিশেষ বেরোয় ১৯৪৭-এ; এবং এ-কাব্যেই সর্বপ্রথম একজন মুসলমান কবি ব্যাপক বিংশ শতকী চেতনাসহ আত্মপ্রকাশ করেন। তিরিশি কবিরা যেসব চিত্রকল্প তৈরি করেছিলেন স্বকালের বন্ধ্যত্ব, শূন্যতা, ঊষরতা, অস্থিরতা জ্ঞাপনের জন্য, সেসব পুনরাবৃত্ত হলো তার কবিতায়।
- হুমায়ুন আজাদ, শামসুর রাহমান : নিঃসঙ্গ শেরপা, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৯৬, পৃ ১৫৭।
- তিনি কখনো নির্দিষ্ট বলয়ে অবস্থান করেননি। বিভিন্ন দিকে তিনি তাঁর নান্দনিক অভিরুচিকে পরিভ্রমণ করিয়েছেন। তিনি শুষ্ক খরতার রাজপথে নদী, জলস্রোত, পাল-ঘাট ইত্যাদি বিষয় এনেছেন, তেমনি আবার গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের মধ্যে নাগরিক মানুষের অস্তিত্বচেতনার সংস্থাপন করেছেন।
- মাসুদুল হক, বাংলাদেশের কবিতায় নন্দনতত্তব, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৮, পৃ ৬৭।
- আহসান হাবীবের প্রেম-চেতনা তাঁর কাব্যসত্তার অনিবার্য অংশ। প্রেমের কবিতায় তাঁকে পাওয়া যায় এক সার্থক কবি হিসেবে। কখনো সহজ-সরল ভাষায়, কখনো উপমায়, কখনো প্রকৃতি-নিসর্গ বর্ণনায় নিজের প্রেম-চেতনাকে নান্দনিক রূপ দান করেছেন। যদিও আহসান হাবীব মাটি, নদী ও মানুষের কবি, তবু প্রেমের কবিতার কবি হিসেবে বাংলা কবিতার আসরেও প্রতিষ্ঠিত তিনি।
- শিহাব শাহারিয়ার, ‘তুমি ভালো না বাসলেই বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে’, নরম রোদের আলোয়, শিখা প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০৫, পৃ ১৮।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় আহসান হাবীব সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।