উৎপল দত্ত

বাঙালি অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক

উৎপল দত্ত ( ২৯ মার্চ ১৯২৯ - ১৯ আগস্ট ১৯৯৩) বাংলা গণনাট্য আন্দোলনের সময়ে বিশিষ্ট অভিনেতা এবং নাট্যকার। তার জন্ম অবিভক্ত বাংলার বরিশালে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ)। তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ইংরেজি বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

উৎপল দত্তের উক্তি

সম্পাদনা
  • “আমি শিল্পী নই। নাট্যকার বা অন্য যে কোনো আখ্যা লোকে আমাকে দিতে পারে। তবে আমি মনে করি আমি প্রপাগান্ডিস্ট। এটাই আমার মূল পরিচয়।”  — উৎপল দত্ত


  • “অভিনয় এখানে পয়সা কামাবার উপায়। বেশ্যাবৃত্তি বলতে পারেন!”  — ছায়ানট, উৎপল দত্ত, উৎপল দত্ত নাটক সমগ্র, প্রথম ভাগ, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ১৫


  • “পরিচালক মনে করেন কতগুলি আসবাবপত্রের মতন এক্সট্রাদের সাজিয়ে নিয়ে ভালো ভালো ক্রাউড সিন নিতে হবে, তাঁর কাছে এক্সট্রারা আসবাব। প্রোডিউসার মনে করেন এরা কতগুলি অনাবশ্যক জীব - তাঁর পয়সা খসাবার জন্যই এরা উপস্থিত হয়েছে; তাঁর কাছে এক্সট্রারা এক ধরনের চোরm প্রোডাকশন ম্যানেজারের মধ্যে এরা রক্তবীজের বংশ; অতজনকে পাঁচটাকা হারে দিতে গেলে নিজের থাকে কি? তাই তিনি চেষ্টা করেন মালিকের খাতায় পাঁচ টাকা হারে লিখিয়ে তিন টাকা করে হাতে গুঁজে দিয়ে কোন মতে বিদায় করতে। তার চোখে এক্সট্রারা মূর্তিমান বিবেক; দংশনের জ্বালায় তিনি সারাদিন গালাগালি করে প্রতিশোধ নেন। চা দেয় যে ছোকরাটি-সেও জানে এক্সট্রাদের ভাঙা-হাতল ময়লা কাপে ঠান্ডা চা বিতরণ করতে গিয়ে তারকাদের কাছ থেকে গালি খাওয়ার কোন মানে হয় না। তাই সেও এক্সট্রা দের মহাক্ষুধার প্রতি রসালো মন্তব্য করে, উপস্থিত সকলকে হাসিয়ে নিজেকে বাঁচায়।”  — ছায়ানট, উৎপল দত্ত, উৎপল দত্ত নাটক সমগ্র, প্রথম ভাগ, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ১৫


  • “শুন গো ভারত ভূমি

কত নিদ্রা যাবে তুমি
উঠ ত্যজ ঘুমঘোর
হইল হইল ভোর

দিনকর প্রাচীতে উদয় ।”  — উৎপল দত্ত, টিনের তলোয়ার


  • “মুখে রং মেখে চক্রবেড় ধুতি পরে, লাল-নীল জোড়া আর ছত্রি পরে রাজা উজির সাজো কেন? এত নেকাপড়া করে টিনের তলোয়ার বেঁধে ছেলেমানুষী করো কেন? ...যা আছে তাই সাজো না! গায়ে বিষ্ঠা আর কাদা লেগে আছে দেখছো? ...সেটা দেখাতে নজ্জা হয় বুঝি? ...হেঁ:, চাটুজ্যে বামুনের জাত যাবে তাতে।”  — উৎপল দত্ত, টিনের তলোয়ার


  • “আমি বহুদিন যাবৎ লক্ষ্য করেছি আপনাদের কদর্য জীবনবোধ বর্জিত নাটকের মিথ্যা আড়ম্বর। বাইরে পুরাতন সমাজ বিধ্বস্ত হচ্ছে আর নাট্যশালায় আপনারা কাশ্মীরের যুবরাজের মূর্খ প্রেমের অলীক স্বর্গ রচনা করে চলেছেন।”  — উৎপল দত্ত, টিনের তলোয়ার


  • “বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের শতবার্ষিকীতে প্রণাম করি সেই আশ্চর্য মানুষগুলিকে- যাহারা কুষ্ঠগ্রস্থ সমাজের কোন নিয়ম মানেন নাই, সমাজও যাহাদের দিয়াছিল অপমান ও লাঞ্ছনা। যাহারা মুৎসুদ্দীদের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকিয়াও ধনীদের মুখোশ টানিয়া খুলিয়া দিতে ছাড়েন নাই। যাহারা পশুশক্তির ব্যাদিত মুখগহ্বরের সম্মুখে টিনের তলোয়ার নাড়িয়া পরাধীন জাতির হৃদয়বেদনাকে দিয়াছিল বিদ্রোহ-মূর্তি। ...যাহারা সৃষ্টিছাড়া, বেপরোয়া, বাঁধনহারা। যাহারা মাতাল, উদ্দাম, সৃষ্টির নেশায় উন্মাদ। যাহাদের উল্লসিত প্রতিভায় সৃষ্টি হইল বাঙালির নাট্যশালা, জাতির দর্পণ, বিদ্রোহের মুখপত্র। যাহারা আমাদের শৈলেন্দ্রসদৃশ পূর্বসূরী।”  — উৎপল দত্ত


  • “কয়লা হলো প্রস্তরীভূত শক্তি-কত যুগ আগে ওরা ছিল পৃথিবীর বুকের উপর, সূর্যের দিকে আকাশের দিকে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে, গভীর অরণ্যের রূপে। তারপর একদিন মুখ লুকোলো মাটির তলায়-যুগ যুগ ধরে তিল তিল করে সঞ্চয় করল উত্তাপ, বজ্রের শক্তি, পৃথিবী থেকে, সূর্য কিরণ থেকে। চেহারা হলো পোড়া, কালো, কর্কশ, ভেতরে রইল অগ্নিসম্ভাবনা, ঠিক যেমন খেটে খাওয়া মানুষ।”  — অঙ্গার, উৎপল দত্ত, উৎপল দত্ত নাটক সমগ্র, প্রথম ভাগ, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ১০৮


  • “একটি জাম্পার তারের মতো কাজ করুন এবং অন্যের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনুন।”  — উৎপল দত্ত [১]


  • “অভিনন্দন! আপনি আপনার জীবনের একটি নতুন যাত্রা শুরু করছেন, যেখানে "আমি" পরিবর্তিত হয়ে "আমরা" হবে। একটি গভীর শ্বাস নিন, এবং

"আমি" হিসাবে চলতে থাকুন এবং তারপরে নিজেকে "আমরা" এর মজবুত অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করুন।”  — উৎপল দত্ত [২]


  • “মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়াই আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনের উদ্দেশ্য।”  — উৎপল দত্ত [৩]


  • “মার্কভ প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন, আপনার আগামীকাল শুধুমাত্র আপনার আজকের কর্মক্ষমতা উপর নির্ভর করে।”  — উৎপল দত্ত [৪]


  • “অনুগ্রহ হলো যে কোনো ব্যক্তির বিস্ময়কর একটি গুণ। এটি শান্তি, সম্প্রীতি এবং আনন্দ নিয়ে আসে। অনুগ্রহের সাথে, আপনার হারানোর কিছু নেই।

দুধের কথা ভাবুন, সাদা ফোঁটা এবং জল পাশাপাশি বসবাস করছে কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়াই এবং মানুষের পুষ্টি জোগাচ্ছে। এক বাটি দুধ শান্তির প্রতিনিধিত্ব করে, কাউকে খুশি করতে এবং হাসি দিতে প্রস্তুত।”  — উৎপল দত্ত [৫]


  • “অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আসল আত্মবিশ্বাসের মৃত্যু ঘটায়”  — উৎপল দত্ত [৬]


  • “জীবনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ:

তোমার দেশ তোমার পিতামাতা তোমার পরিবার এবং তোমার স্বাস্থ্য”  — উৎপল দত্ত [৭]


  • “রাইডের অপেক্ষায় ঠান্ডায় কোণে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং যেকোন পরিবহন ব্যবস্থার কর্মচারীরা শুধুমাত্র সেই ব্যক্তির জন্য বিদ্যমান এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে, তাদের নিজস্ব স্বার্থের ঊর্ধ্বে এবং তার বাইরে।”  — উৎপল দত্ত [৮]


  • “জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য হল আপনার শারীরিক উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি।”  — উৎপল দত্ত [৯]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা