কদর (আরবি: قدر) শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিমাপ করা, কোনো বস্তু উপযোগিতা অনুসারে পরিমিতরূপে তৈরি করা। এছাড়া শরীআতের পরিভাষায় ‘কদর’ শব্দটি আল্লাহর "তাকদীর" তথা বিধিলিপির অর্থেও ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ কদর হল স্বর্গীয় নিয়তি বা ভাগ্য।

এটি ইসলামের ঈমানের ছয়টি বিশ্বাসের একটি, বাকিগুলো হচ্ছে তাওহিদ, আসমানী কিতাবসমূহে বিশ্বাস, ইসলামের নবীদের উপর বিশ্বাস, মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস এবং ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস। এই ধারণাটি কুরআনের মধ্যে উল্লেখ করা হয় আল্লাহর “ফরমান” হিসাবে।

  • মুনাফিকরা (ভণ্ড) মুমিনদেরকে (বিশ্বাসী) ডেকে বলবে, ‘আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না?’ তাঁরা বলবে ‘হ্যাঁ!’, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। আর তোমরা অপেক্ষা করেছিলে [আমাদের অমঙ্গলের] এবং সন্দেহ পোষণ করেছিলে এবং আকাঙ্ক্ষা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল, অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ এসে গেল। আর মহাপ্রতারক (শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল।"
    • আল-কুরআন, সূরা ৫৭ (আল-হাদীদ), আয়াত ১৪
  • আর আল্লাহ যদি তাদের মধ্যে কোনো কল্যাণ জানতেন তাহলে অবশ্যই তাদেরকে শুনাতেন। আর যদি শুনাতেন তাহলেও তারা মুখ ফিরিয়ে নিত, এমতাবস্থায় যে, তাঁরা উপেক্ষাকারী।"
    • আল-কুরআন, সূরা ৮ (আল-আনফাল), আয়াত ২৩
  • আর তোমার রব এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে জনপদসমূহ ধ্বংস করে দেবেন, অথচ তার অধিবাসীরা সংশোধনকারী। যদি তোমার রব চাইতেন, তবে সকল মানুষকে এক উম্মতে পরিণত করতেন, কিন্তু তারা পরস্পর মতবিরোধকারী রয়ে গেছে, তবে যাদেরকে তোমার রব দয়া করেছেন, তারা ছাড়া। আর এজন্যই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমার রবের কথা চূড়ান্ত হয়েছে যে, ‘নিশ্চয়ই আমি জাহান্নাম ভরে দেব জিন ও মানুষ দ্বারা একত্রে।
    • আল-কুরআন, সূরা ১১ (হুদ), আয়াত ১১৭-১১৯
  • পৃথিবী এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোনো সমস্যা আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।
    • আল-কুরআন, সূরা ৫৭ (আল-হাদীদ), আয়াত ২২
  • যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরও বেশি। আর ধূলোমলিনতা ও লাঞ্ছনা তাদের চেহারাগুলোকে আচ্ছন্ন করবে না। তাঁরাই জান্নাতবাসী। তাঁরা তাতে স্থায়ী হবে।
    •  আল-কুরআন, সূরা ১০(ইউনুস), আয়াত ২৬
  • আলী ইবনে আবি তালিব হতে বর্ণিত যে, একদিন মুহাম্মদ একটি কাঠের কাঠি নিয়ে বসেছিলেন যেটি দিয়ে মাটিতে আঁকছিলেন। তিনি তাঁর মাথা তুললেন এবং বললেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার স্থান জান্নাত অথবা জাহান্নাম নির্ধারিত হয়নি।” তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে আমরা কেন ভালো কাজ করবো, আমরা কি কদরের (আল্লাহর ইচ্ছা) উপর নির্ভর করবো না এবং আমাদের কাজ ছেড়ে দেবো না? ”মুহাম্মদ বললেন: “না, তোমরা কাজ করতে থাকো, কারণ এর মাধ্যমেই তোমরা সহজে পৌছাতে পারবে যে কর্মের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল। এরপর তিনি একটি আয়াত পড়ে শুনান: “সুতরাং যে দান করেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব।
    • আল-লাইল ৯২: ৫-৭) — সহীহ মুসলিম

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা