কুরবানী

হিজরি পঞ্জিকার জিলহজ্জ মাসের ১০-১২ তারিখ পর্যন্ত পালিত একটি উৎসব

কুরবানী (আরবি: قربانى), কুরবান অথবা আদ্বহা বা আযহা ( أضحية) কে ইসলামী আইন হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা ঈদ উল আযহার সময় পশু উৎসর্গের অনুষ্ঠান। ইসলামি মতে কুরবানী হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা। মুসলমানদের পবিত্র আল কোরআনের তিনটি স্থানে কুরবানির উল্লেখ আছে যার একটি পশু কুরবানির ক্ষেত্রে এবং বাকি দুটি সাধারণ ভাবনার কাজ বোঝাতে যা দ্বারা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যাা পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করাকে ইসলামে কুরবানি বলে।

  • আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানীর জন্য যাকিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের উপর ধার্য। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না, যতক্ষণ না কোরবাণী যথাস্থানে পৌছে যাবে। যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা কুরবানী করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ্ব ওমরাহ একত্রে একই সাথে পালন করতে চাও, তবে যাকিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কুরবানী করাই তার উপর কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা কোরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জ্বের দিনগুলোর মধ্যে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি রোযা রাখবে ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য, যাদের পরিবার পরিজন মসজিদুল হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। সন্দেহাতীতভাবে জেনো যে, আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন।
  • হে নবী! কিতাবিগণকে আদমের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা ভালো করে বর্ণনা করো। তারা যখন কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো। কিন্তু অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না। ক্ষিপ্ত হয়ে সে বলল, আমি তোমাকে খুন করবো। অপরজন বলল, প্রভু তো শুধু আল্লাহ-সচেতনদের কোরবানিই কবুল করেন।
  • হে নবী! ওদের বলুন, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ-আমার সবকিছুই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তিনি একক ও অদ্বিতীয়। এ আদেশই আমি পেয়েছি। আমি সমর্পিতদের মধ্যে প্রথম।
  • আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর সব সময় যেন মনে রাখে একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য। অতএব তাঁর কাছেই পুরোপুরি সমর্পিত হও। আর সুসংবাদ দাও সমর্পিত বিনয়াবনতদের, আল্লাহর নাম নেয়া হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করে, নামাজ কায়েম করে আর আমার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে দান করে।
  • কিন্তু মনে রেখো কোরবানির মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ-সচেতনতা। এই লক্ষ্যেই কোরবানির পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো। হে নবী! আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।
  • ছেলে যখন পিতার কাজকর্মে অংশগ্রহণ করার মতো বড় হলো, তখন ইব্রাহিম একদিন তাকে বলল, ‘হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে কোরবানি দিতে হবে। এখন বলো, এ ব্যাপারে তোমার মত কী? ইসমাইল জবাবে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। ইনশাল্লাহ! আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে বিপদে ধৈর্যশীলদের একজন হিসেবেই পাবেন।
  • মনে রেখো, এ ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে সুযোগ দিলাম এক মহান কোরবানির। পুরো বিষয়টি স্মরণীয় করে রাখলাম প্রজন্মের পর প্রজন্মে। ইব্রাহিমের প্রতি সালাম। এভাবেই আমি সৎকর্র্মশীলদের পুরস্কৃত করি।
  • অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্যেই নামাজ পড় ও কোরবানি দাও। নিশ্চয়ই তোমার প্রতি যেই বিদ্বেষ পোষণ করবে, বিলুপ্ত হবে ওর বংশধারা।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা