ক্ষিতিমোহন সেন

ভারতীয় ইতিহাসবেত্তা

ক্ষিতিমোহন সেন (২ ডিসেম্বর ১৮৮০ - ১২ মার্চ ১৯৬০) ছিলেন একজন বাঙালি গবেষক, সংগ্রাহক এবং শিক্ষক। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মধ্যযুগের সন্তদের বাণী, বাউল সঙ্গীত এবং সাধনতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা ও সংগ্রহে তার কৃতিত্ব উল্লেখযোগ্য। প্রায় পঞ্চাশ বছরের চেষ্টার ফলে সংগৃহীত বিষয়গুলো কয়েকটি বইতে তিনি প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি বেদ, উপনিষদ, তন্ত্র, স্মৃতিশাস্ত্র, সঙ্গীতশাস্ত্র এবং আয়ুর্বেদশাস্ত্রেও পারদর্শী ছিলেন।

উক্তি সম্পাদনা

  • যে সমাজ নারীকে জ্ঞানহীন করিয়া শুধু পুরুষকেই শক্তিশালী করিতে চায় বা পুরুষকে পঙ্গু করিয়া শুধু নারীকেই প্রবল করিতে চায় তাহারা পরম-পুরুষের এক অর্ধেক পক্ষাঘাতগ্রস্ত করিয়া তাঁহার অংশমাত্র লইয়া অগ্রসর হইতে চাহে।
  • কেহ কেহ বলিবেন, নারীদের প্রতি এইসব কথা (নারীগণ পূজনীয়া, মহাভাগা, পুণ্যা ও সংসারের দীপ্তিস্বরূপা) শুধু ভাবুকতা মাত্র। আসলে নারীরা দাসী মাত্র। কিন্তু তাঁহাদের মনে রাখা উচিত, তাহা হইলে তাঁহারাই হইলেন দাসীপুত্র। সংস্কৃতে ইহার চেয়ে ঘৃণ্য গালি আর নাই। সংস্কৃত নাটকগুলিতে অতি ইতরজনের প্রতি ইতরজনোচিত চরম গালাগালি হইল ‘দাস্যাঃ পুত্রঃ’।
  • যে সমাজে চরিত্র গুণ মনীষা সাধনা ও তপস্যার অপেক্ষা জন্মগত জাতিরই আদর অধিক, সে সমাজ কিছুতেই অগ্রসর হইতে পারে না।
    • সামাজিক অবিচার সত্ত্বেও ব্যক্তিমহিমার জয়, জাতিভেদ, ১৯৪৬, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ।
  • অতি উন্নত ও অতি অনুন্নত সাধনা এখানে পাশাপাশি রয়েছে বলে ধর্ম ও সাধনার তত্ত্বজিজ্ঞাসুর পক্ষে ভারতের মতো এমন উত্তম বিচারক্ষেত্র আর নেই। এখানে অগ্রসর অনগ্রসর সংস্কৃতির চরম দৃষ্টান্ত একই স্থানে মিলবে। পাশাপাশি নানা সংস্কৃতির যোগাযোগ জীবন্ত থাকাতে এদেশে কত রকম সাধনারই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এবং সেইজন্যেই এই দেশের ধর্ম ও সংস্কৃতির সম্পদ নানা বিচিত্র ঐশ্বর্যে ভরপুর।
    • ভারতে সংস্কৃতির বৈচিত্র, ভারতের সংস্কৃতি, ১৯৫৪, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ।
  • জগতে সকলের সর্ববিধ কল্যাণের জন্য মানুষের অচেতন মনকে জাগিয়ে তুলতে ও সাধনাকে স্থাপন করতে, দুঃখ-দুর্গতির প্রতিকার করতে, চাই জ্ঞান ও প্রেম। সব দুঃখের মূলেই অজ্ঞান ও অপ্রেম। সত্য-জ্ঞান ও দৃষ্টি ছাড়া তার প্রতিকার কই?
    • জ্ঞান ও ধর্ম, বাংলার সাধনা, ১৯৪৫, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ।
  • এদেশে (ভারতবর্ষে) ধর্মদর্শন শিবশক্তির মতই পরস্পরে যুক্ত। এককে ছেড়ে অন্যটি থাকতেই পারেন না। কাজেই দর্শনের কথা আলোচনার সঙ্গে ধর্মকেও আনতেই হবে।
    • জ্ঞান ও ধর্ম, বাংলার সাধনা, ১৯৪৫, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ।

ক্ষিতিমোহন সেন সম্পর্কে উক্তি সম্পাদনা

  • মৃত্যু থেকে মানুষের চিত্তকে পরিত্রাণ করার জন্যে বৈকুণ্ঠের অমৃতরসপ্রস্রবণের উপরেই আমাদের মরমিয়া কবিরা দৃঢ় আস্থা রেখেছিলেন, কোনো একটা বাহ্য আচারের রাজিনামার উপরে নয়। তাঁরা যে-রসের ধারাকে বৈকুণ্ঠ থেকে এনেছিলেন, আমাদের দেশের সামাজিক বালুর তলায় তা অন্তর্হিত। কিন্তু তা মরে যায়নি। ক্ষিতিমোহন বাবু ভার নিয়েছেন বাংলা দেশে সেই লুপ্ত স্রোতকে উদ্ধার করে আনবার।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা