গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী

বাঙালি লেখিকা।

গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী (১৮ আগস্ট ১৮৫৮ - ১৬ আগস্ট ১৯২৪) ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক এক মহিলা কবি। মাত্র ১০ বছর বয়েসে কলকাতায় বিয়ে হয়। পিতা ও স্বামীর কাছেই তিনি শিক্ষা লাভ করেন। বাল্যকাল থেকে সংস্কৃত পড়ার দিকে, কবিতা লেখার দিকে এবং ছবি আঁকার দিকে তাঁর ঐকান্তিক আকর্ষণ ছিল, উত্তরকালে এই সব দিকেই তিনি শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। ছোটবেলার স্মৃতি অবলম্বন করে গ্রামের দৃশ্য এবং কলকাতার অন্তঃপুরের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর অনেক কবিতায়। ১৮৭২ সালে প্রথম রচনা ‘জনৈক হিন্দু মহিলার পত্রাবলী’ প্রকাশিত হয়। গিরীন্দ্রমোহিনীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ছিল কবিতাহার (১৮৭৩)। কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভারতকুসুম (১৮৮২), অশ্রুকণা (১৮৮৭), আভাষ (১৮৯০), শিখা (১৮৯৬), অর্ঘ্য (১৯০২) প্রভৃতি।


মা নাই ঘরেতে যার ছেলে কোলে নাই যার,
  যত কিছু সব তার মিছে!
চাঁদে-চাঁদে হাসা-হাসি চাঁদে-চাঁদে মেশামিশি
  স্বর্গে-মর্তে প্রভেদ কি আছে!
 —গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী
  • মাটিতে নিকানো ঘর দাওয়াগুলি মনোহর
      সমুখেতে মাটির উঠান।
    খড়ো চালখানি ছাঁটা লতিয়া করলা-লতা
      মাচা বেয়ে করেছে উত্থান!
    পিঁজারায় বস্ত্র বাধা, “বউ-কথা” কহে কথা,
      বিড়ালটি শুইয়া দাবাতে;
    মঞ্চে তুলসীর চারা  গৃহে শিলা কড়ি-ঝারা,
      পোকা শুয়ে দড়ির দোলাতে।
    • গ্রাম্য ছবি, অশ্রকণা কাব্যগ্রন্থ, গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর শ্রেষ্ঠ কবিতা, ড.বারিদবরণ ঘোষ সম্পাদিত, প্রকাশক: ভারবি, কলকাতা,-প্রথম প্রকাশ: আশ্বিন ১৪০৮, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা ৭৭
  • মা নাই ঘরেতে যার ছেলে কোলে নাই যার,
      যত কিছু সব তার মিছে!
    চাঁদে-চাঁদে হাসা-হাসি চাঁদে-চাঁদে মেশামিশি
      স্বর্গে-মর্তে প্রভেদ কি আছে!
    • গার্হস্থ্য চিত্র, অশ্রকণা কাব্যগ্রন্থ, গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর শ্রেষ্ঠ কবিতা, ড.বারিদবরণ ঘোষ সম্পাদিত, প্রকাশক: ভারবি, কলকাতা,-প্রথম প্রকাশ: আশ্বিন ১৪০৮, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা ৭৯
  • কখন গেছে ঘুমে মুদিয়া আখিঁদুটি,
    চেতনা চুপে-চুপে কখন নেছে ছুটি,
    মুদিত আঁখিদ্বার, নির্জন রুদ্ধ ঘরে,
    জানি না, এসেছিল কেমন পথ ধরে!
    • শ্রাবণে, শিখা কাব্যগ্রন্থ, গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর শ্রেষ্ঠ কবিতা, ড.বারিদবরণ ঘোষ সম্পাদিত, প্রকাশক: ভারবি, কলকাতা,-প্রথম প্রকাশ: আশ্বিন ১৪০৮, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা ১০৭-১০৮

গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীকে নিয়ে উক্তি

সম্পাদনা
  • তাঁর বইগুলির মধ্যে যে ভাবমাধুর্য্য ও ভাষার সারল্য দেখতে পাই, তা’ আজকের দিনে দুর্লভ। রক্ষণশীল সম্ভ্রান্ত পরিবারের অন্তঃপুরবাসিনী নারী সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় কতদূর উন্নতি করতে পারে, তিনি তাঁর উজ্জ্বল নিদর্শন। গদ্যে এবং পদ্যে তিনি সমান স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে রচনা ক’রে গেছেন। কালিদাসের কুমারসম্ভব বাংলায় অনুবাদ করে তিনি তাঁর সংস্কৃত ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
    • গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী সম্পর্কে অনুরূপা দেবী, সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৩
  • গিরীন্দ্রমোহিনীর কাব্যগ্রন্থসমূহ সাহিত্যরসিক সমাজে বিশেষ সমাদর লাভ করিয়াছিল। ‘জাহ্নবী’ (১৩১১, আষাঢ়) সম্পাদনেও তিনি বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। স্বদেশী আন্দোলনের সময় গিরীন্দ্রমোহিনী দেশসেবায় রত হন। মজিলপুরে এই সময় যে স্বদেশী প্রদর্শনী হয় তাহার অন্যতর সহকারী সম্পাদিকা ছিলেন গিরীন্দ্রমোহিনী। তাঁহার ‘রাখীবন্ধন’ কবিতাটি স্বদেশবাসীদের মনে বিশেষ প্রেরণা জোগায়।
    • গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী সম্পর্কে সরলা দেবী চৌধুরানী, জীবনের ঝরাপাতা- সরলা দেবী চৌধুরানী, পরিচ্ছেদ তের, প্রকাশক- শিশু সাহিত্য সংসদ প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২৫

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা