জহির রায়হান
বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার
জহির রায়হান (১৯ আগস্ট ১৯৩৫ — ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার। বাংলা সাহিত্যের গল্প শাখায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। চলচ্চিত্রে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে মরণোত্তর বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
উক্তি
সম্পাদনা- আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো।
- আরেক ফাগুন উপন্যাস লেখক- জহির রায়হান প্রকাশক-অনুপম প্রকাশনী পৃষ্ঠা-৭২
- ধীরে ধীরে রাত বাড়তে লাগলো। চাঁদ হেলে পড়লো পশ্চিমে। উঠোনের ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলো। পরীর দীঘির পারে একটা রাতজাগা পাখির পাখা ঝাপটানোর আওয়াজ শোনা গেলো। রাত বাড়ছে। হাজার বছরের পুরনো সেই রাত
- হাজার বছর ধরে লেখক- জহির রায়হান পৃষ্ঠা-৬৪
- ছুরি দিয়ে কেটে কেটে জীবনটাকে বিশ্লেষণ করার মতো প্রবৃত্তি না হলেও জীবনের ক্ষনস্থায়ী মুহূর্ত গুলো,টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে দেখা দেয় মনে।সেখানে আনন্দ আছে,বিষাদ আছে।ব্যর্থতা আছে, সফলতা আছে।হাসি আছে, অশ্রুও আছে।
- বরফ গলা নদী লেখক- জহির রায়হান প্রকাশনী-অনুপম প্রকাশনী পৃষ্ঠা-৩১
- কি দিয়েছি আর কি পেয়েছি তার হিসেব করতে গেলে তো আর দেশকে ভালোবাসা যাবে না। দেশকে ভালোবাসতে হয় নিঃস্বার্থ ভাবে।
- জীবন থেকে নেওয়া
- ওরা আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে হিরোশিমায়। আমার মাকে খুন করেছে জেরুজালেমের রাস্তায়। আমার বোনটা এক সাদা কুত্তার বাড়িতে বাঁদি ছিলো। তার প্রভু তাকে ধর্ষণ করে মেরেছে আফ্রিকাতে। আমার বাবাকে হত্যা করে মেরেছে ভিয়েতনামে। আর আমার ভাই, তাকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মেরেছে ওরা। কারণ সে মানুষকে ভীষণ ভালোবাসতো।
- আর কতদিন পৃষ্ঠা-১৫
- ওদের জানিয়ে দাও
ওরা আমার ভাই-বোনকে
কুকুর বিড়ালের মত মেরেছে
ওদের স্টীম রোলারের নিচে
ওদের জানিয়ে দাও
ওরা দেখেও যদি না দেখে
বুঝেও যদি না বোঝে
- ১৪ বছর বয়সে লেখা প্রথম কবিতা ডেইলি স্টার
- আমি জহির রায়হান। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নই। আমি কেবল একজন লেখক এবং চলচ্চিত্রকার। কিন্তু আমি বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় দেখেছি। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো আমি কিছু পাকিস্তানি মিলিটারিদের একটা অপারেশনের সময় একটা মুভি ক্যামেরা হাতে রাস্তায় চলতে দেখতাম। তারা মানুষ গুলি করে মারার পর সেই মুভি ক্যামেরা দিয়ে মৃত লাশগুলোর ভিডিও চিত্র নিতো। ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার পর সেগুলোর ভিডিও চিত্র নিতো। তারা কিছু বাঙালিকে একত্র করে একটা দোকান লুট করতে বাধ্য করে। নিজেদের মুভি ক্যামেরা দিয়ে তারা সেই লুট করার ভিডিও চিত্র ধারণ করে। এরপর আমি শুনেছি এবং পরে নিজে দেখেছি যে তারা এই ধারণকৃত অংশগুলো ইডিট করে। এই ইডিট করা ভিডিওগুলো প্রেসে ছেড়ে দিয়ে বলে যে, বাঙালিরা অবাঙালিদের হত্যা করা শুরু করেছে। এই অরাজক ও বিভ্রান্তিমূলক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাদের (মিলিটারিদের)রাস্তায় নামতে হয়েছে। এটি ছিল পুরোপুরি একটা মিথ্যা বানোয়াট কথা।
- কলকাতার একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে জহির রায়হান বাংলা ইনসাইডার
- পাকিস্তানের গত তেইশ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল, পাকিস্তান কখনো জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হয়নি।...পাকিস্তানের এই মৃত্যুর জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলও দায়ী নয়।
- পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রবন্ধে বিডিনিউজ২৪
- আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে স্মরণীয় অবদান হচ্ছে দুটো।একটি সিনেমার জন্ম।অপরটি সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম।দুটোই বিপ্লব।একটা চারুকলার ক্ষেত্রে।অন্যটা সমাজ ব্যবস্থা ক্ষেত্রে।
- ‘অক্টোবর বিপ্লব ও সোভিয়েত চলচ্চিত্র’ প্রবন্ধে বিডিনিউজ২৪
- আমি দেখেছি, নিদারুণ যন্ত্রণায় ভুগে ভুগে, প্রতিদিন, প্রতি রাতে, প্রতিক্ষণে দেখেছি। লম্পট যারা, অসাধু যারা, মিথ্যেবাদী যারা, চরিত্রহীন আর মুখোশধারী যারা, তারা জিতে গেলো। সমাজ তাদের বাহবা দিল। তারা বিজয়ী বলেই হয়তো, মানুষের দল তাদের পক্ষই নিলো। আমার কথা কেউ শুনলো না, আমার ব্যাথা কেউ বুঝতে চেষ্টা করল না। আমার সততার কেউ কোন মূল্য দিল না।
- স্ত্রী সুমিতা দেবীকে লেখা চিঠির অংশ জাগোনিউজ২৪
- সৎ ছবির প্রাথমিক যে শর্ত সেটা হচ্ছে ছবিটাকে সব রকমের সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামিমুক্ত হতে হবে। বিষয়বস্তু এবং তার প্রকাশ, অভিব্যক্তি এবং তার ব্যঞ্জনায়, আবেগ এবং স্বতঃস্ফূর্ততায়, বক্তব্য এবং তার নির্ভীকতায় কোন রকম বিরোধ থাকলে চলবে না। কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মান্ধ সমাজে মুক্তবুদ্ধির চাষ করতে গেলেই বিরোধ ও বাধা স্বাভাবিক।
- সৎ ছবির বৈশিষ্ট্য সারাবাংলা
জহির রায়হানকে নিয়ে উক্তি
সম্পাদনা- এ এক অনন্য প্রতিভা, চলচ্চিত্রে এক নতুন যাত্রার সূচনা হলো। এক দুর্দান্ত প্রতিভাবান চলচ্চিত্রকারের মাইফলক।
- জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রটি দেখার পর সত্যজিৎ রায় [১]
- সেই একুশের সৈনিক জহির এই যুদ্ধেও তার ভূমিকা বেছে নিল—অস্ত্র হল তার মুভি ক্যামেরা। তারই নেতৃত্বে সূচিত হল স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সিনেমা।
- জহির রায়হান সম্পর্কে আলমগীর কবির সারাবাংলা
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় জহির রায়হান সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে জহির রায়হান সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।