জামাল উদ্দিন আহমেদ (চিত্রশিল্পী)

একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি

জামাল উদ্দিন আহমেদ (জন্ম ১৯৫৫) একজন বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী ও অধ্যাপক। চারুকলায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে।

  • শিল্পী শশিভূষণ পাল অনেক আগেই আমাদের দেশে আর্ট এবং পেইন্টিং চর্চার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিলেন। যার গুরুত্ব এখন আমরা বুঝছি।
  • পদক পেলে সব কিছু শেষ হয়ে যায় না। আরো নতুন চিত্রকর্ম করার অনুপ্রেরণা এটি।
  • শিল্পীরা তাদের কাজের মধ্য দিয়ে দেশের বাইরেও দেশকে পরিচিত করতে পারেন। বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠিত শিল্পী আছেন, যারা দেশের বাইরে নিয়মিত বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন তাদের প্রদর্শনীগুলোর মাধ্যমে।
  • সমালোচনা সবসময়ই ছিলো। এখনও আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাপের শিল্পীদের মধ্যে পিকাসোকেও সমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিলো। অনেকে বলতো, কি আঁকে? কাজ করে যাওয়া হচ্ছে সবচেয়ে ভালো।
  • আমি যতোটুকু জানি, ছাত্রদের তা ভালোভাবে শেখাতে সচেষ্ট থাকবো। দেশের বাইরে থেকে আমার যতোটুকু শেখা, তা আমার কাজের মাঝে এবং ছাত্রদের শেখানোর মধ্য দিয়েই উপস্থাপন করছি। এভাবেই আমি বেঁচে থাকবো।
  • আমার অঙ্কনে কখনো লাল রং দিই কোনো কালো বা ভয়ঙ্কর চরিত্র বোঝানোর জন্য বা সবুজ দেই একটা সতেজতার জন্য। আমি কখনো চিত্রণের রং দিতে চাই না, চাই মনের রং দিতে।
  • কোনো নারীর প্রতিবছর বাচ্চা নিলে যেমন শরীর ভালো থাকে না। তেমন কোনো চিত্রশিল্পীর প্রতিবছর একক প্রদর্শনী থাকলে তার হাত ভালো থাকে না।
  • আমাদের দেশে শিল্পীদের কদর খুব কম। আমাদের চিত্রকর্ম কোন সাধারণ ব্যক্তি তখনই কিনেন যখন তার বাড়ি-গাড়ি কেনার পর উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে যাই। কোনো ভাড়াটে তার বাড়ির দেওয়ালে কখনও চিত্রকর্ম টাঙায় না।
  • কখনও জোর করে আঁকতে চাই না। যেমন আজকের যুবক-যুবতী যারা আছে জাতীয় প্রদর্শনীতে ঘর-বাড়ি লাগিয়ে, ইটের গুড়া-ঠুরা দিয়ে, রং-টং লাগিয়ে জিতে নিলো পুরস্কার। সবাই তালি দিল। কিন্তু আমি ওটা করতে চাই না। আমি করতে চাই যেটা স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিকভাবে আসে।
  • একজন চিত্রশিল্পী যদি নগ্ন ছবি ভালো করে আঁকতে পরে তাহলে সে সব আঁকতে পারবে। তাঁর কাছে তখন চেয়ার-টেবিল আঁকা কোনো ব্যাপার না।
  • আমি যে শুধু নর-নারীর আবার বা পশুপাখির নানা ভঙ্গি আঁকি তা কিন্তু নয়। এর মাধ্যমে আমি মানুষের বিচিত্র মনোবিশ্লেষণ করি। একজন মানুষ কি ভাবেন কি চিন্তা করেন কিংবা তার আচার-আচরণ মনোভঙ্গি কি তা একজন মনোবিজ্ঞানীর চোখ দিয়েই অবলোকন করি গভীরতার সঙ্গে এবং তুলির মায়াবী স্পর্শে তুলে আনি পরম মমতায় ও যত্নে। যা জীবন্ত- এবং কথা বলে।
  • আমাদের বাংলাদেশের ঢাকার চারুকলা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৮-৯ হাজার পরীক্ষার্ত্রী পরীক্ষা দিলে মাত্র ১০০ জনের মতো উর্তীণ হয়। অথচ আমাদের সময় রীতিমত সবাইকে ডেকে ডেকে ভর্তি করানো হত। তবে সমস্যাটা হচ্ছে এখনকার শিক্ষার্ত্রীরা আমি শিল্প শিখব বলে নয় বরং আমি কোনো বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি সে জন্য ভর্তি হয়। এদের মধ্যে আমাদের মতো ওই যে চারুকলায় ভর্তি হয়ে আঁকা শিখবো সেই ইচ্ছা নেই।
  • আজকালকার শিক্ষার্ত্রীরা সরাসরি কোনো স্থানে গিয়ে বসে আঁকার বদলে ফোন ছবি তুলে নিয়ে গিয়ে বাসায় বসে ছবি আঁকে। এতে করে তারা দৃশ্যের অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বর্ণনা ও মনের অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হয় যেমন: কাঁচা পাতা, কাঁচা-পাকা পাতা, শুকনো পাতা, কাদা মাখা পাতা। আমার কাছে একটি ভুলে আঁকা ছবিই আদর্শ ছবি। কারণ ভুল হলেই তো দৃশ্যটি নিয়ে নড়াচড়া হবে, একদম আদর্শ ছবি হলে তো হবে না - ভুল হবে সেটি মুছলাম এবং তাতে রং ঝরে পড়বে তবেই তো ছবিটি জীবন্ত হয়ে উঠবে।
  • কোনো কিছু ভাঙার আগে সেটাকে গড়তে হয় কি করে সেটা জানতে হয়।

জামাল উদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • জামাল আহমেদ মানুষের ছবি আঁকেন, আঁকেন নগর প্রকৃতি। কখনও নর-নারী, কখনও বাংলার বাউল-ফকির। নারীর রূপ-রহস্য তাঁর ক্যানভাসে উঠে এসেছে অসাধারণ হয়ে। তিনি শান্তির পায়রারও দুলভ মুহুর্তগুলো ধরতে পেরেছেন।
    • বিএফএ মোহাম্মদ আসাদ, ২১শে আগস্ট ২০২০
  • জামাল আহমেদ এর অংকন শৈলী এক ধরনের বিশেষ নিপুণতায় ভাস্বর যা অন্য কোনো শিল্পীর মাঝে খুব একটা দেখা যায় না। পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যকলার আধুনিক সমন্বয় সাধনে জামাল এক নবধারার শুভ প্রয়োগ ও সূচনা করেছেন এ দেশের চিত্রকলার জগতে। আর এ কারণেই জামাল তার সতীর্থ, চিত্রকলা প্রেমিক ও ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় নাম।
  • অধ্যাপক জামালের জনপ্রিয়তার মূল কারণ হচ্ছে তার উজ্জ্বল রঙের বৈচিত্র্যে সাধারণ খেটে খাওয়া মেহনতী মানুষের জীবন-যাপন ক্যানভাসে তুলে আনার নিপুণ দক্ষতায়। তার বিষয়বস্তুর প্রতিপাদ্যই হল মানুষের নানা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছবিতে তুলে ধরা এবং তা কতটা বাস্তবতা, নিপুণতা ও দক্ষতার সঙ্গে তুলে আনা যায় এটিই হল বিশেষজ্ঞ।
  • জামাল আহমেদের এ পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে সত্তরটিরও অধিক একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং অন্য শিল্পীদের সঙ্গে প্রদর্শনীর সংখ্যা কয়েকশ’। দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের ও বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংগ্রহে রয়েছে শিল্পী জামালের চিত্রকর্মসমূহ। যা চিত্রশিল্পীদের ক্ষেত্রে বিরল।
    • ড. মুস্তাফা মজিদ
  • জামাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চিত্রশিল্পী। তিনি তার গভীর অন্তদৃষ্টি থেকে অসাধারণ দক্ষতাপূর্ণ অংকন-শৈলী দিয়ে সততা ও সাহসের সঙ্গে স্বাতন্ত্র্যসূচক উচ্চতর গুণগত বৈশিষ্ট্যের পর্যায় পৌঁছেছে। বিশেষত তার অংকিত নারীর মনোভঙ্গিপূর্ণ অবয়ব- যা সততই উজ্জ্বল রঙের বিশিষ্টতায় ফুটে ওঠে তার প্রিয়সব চরিত্র-চিত্রণে। এবং লক্ষণীয় যে, যেখানে কখনও নারীর বেদনাবিধুর মুখাবয়ব, কখনও ভালোবাসার প্রতীক্ষমাণ আকুলতা, কখনও আনন্দ, আবার কখনও হতাশায় ক্লান্ত নারীর অস্ফুট হাহাকার! এবং প্রয়োজনীয় রঙের ব্যবহার- কখনও উজ্জ্বল আবার কখনও গাঢ় এর ব্যঞ্জন ক্যানভাসকে সত্যিকার মূর্ত প্রতীকে রূপায়িত করে। আর সহজবোধ্যতই চিত্র সবাইকে অনায়াসে আকর্ষণ করে।
    • ২০১০ সালে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী
  • যেমন জামালের ছবিতে নারীর নানাভঙ্গি যেমন আছে তেমনি আছে বিস্তৃত পরিসরে বাংলার ফকির বাউল- যা তাকে বিশিষ্ট করে তুলেছে। তার অর্থ এই নয় যে জয়নুলের ছবির অনুকরণ ও অনুসরণ। জামাল তার নবতর ধারায় অবদান রেখে চলেছেন।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা