নারিকেল

উদ্ভিদের প্রজাতি

নারিকেল, নারকোল, নারকেল বা ডাব (বৈজ্ঞানিক নাম: Cocos nucifera) পাম গাছের পরিবারের (আরেকেসি) সদস্য ও ""কোকোস"" গণের একমাত্র জীবিত প্রজাতি।"নারকেল" শব্দটি পুরো নারকেল, বীজ বা ফলকে বোঝায়, যা উদ্ভিদগতভাবে বাদাম নয়, বরং শাঁসালো ফল। "কোকোনাট" নামটি (প্রাচীনরূপে কোকোয়ানাট) এসেছে পুরানো পর্তুগিজ শব্দ কোকো থেকে, যার অর্থ "মাথা" বা "খুলি"। নারকেল শেলের উপর খাঁজকাটা ৩ টি চিহ্ন রয়েছে যা মুখের বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ,ফলে এটির এরূপ নামকরন। এদের উপকূলীয় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সর্বত্র পাওয়া যায় এবং এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বিশ্বের সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে।

নারিকেল (কোকোস নুসিফেরা)
  • সমুদ্রের ধারের জমিতেই নারিকেলের সহজ আবাস। আমাদের আশ্রমের মাঠ সেই সমুদ্রকূল থেকে বহুদূরে। এখানে অনেক যত্নে একটি নারিকেলকে পালন করে তোলা হয়েছে- সে নিঃসঙ্গ, নিষ্ফল, নিস্তেজ। তাকে দেখে মনে হয়, সে যেন প্রাণপণে ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে দিগন্ত অতিক্রম করে কোনো-এক আকাঙ্ক্ষার ধনকে দেখবার চেষ্টা করছে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,বনবাণী ,১৯৬৮ (পৃ. ৩৯)
  • আমি বলি, রমণীমণ্ডলী এ সংসারের নারিকেল। নারিকেলও কাঁদি কাঁদি ফলে বটে, কিন্তু (ব্যবসায়ী নহিলে) কেহ কখন কাঁদি কাঁদি পাড়ে না। কেহ কখন দ্বাদশীর পারণার অনুরোধে, অথবা বৈশাখ মাসে ব্রাহ্মণসেবার জন্য একটি আধটি পাড়ে। কাঁদি কাঁদি পাড়িয়া খাওয়ার অপরাধে যদি কেহ অপরাধী থাকে, তবে সে কুলীন ব্রাহ্মণেরা। কমলাকান্ত কখন সে অপরাধে অপরাধী নহে।
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ,কমলাকান্ত ,১৮৮৫ (পৃ. ১৬)
  • ব্রাহ্মণদিগের সেই প্রখর তপনতপ্ত ঘর্ম্মাক্ত ললাট এবং বাগ্‌বিতণ্ডাজনিত অধর-সুধাবৃষ্টি দেখিয়া দয়া হইল—জিজ্ঞাসা করিলাম, “হাঁ ভট্টাচার্য্য মহাশয়! ঝুনা নারিকেল কিনিতে আপত্তি নাই, কিন্তু দোকানে দা আছে? ছুলিবে কি প্রকারে?
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ,কমলাকান্ত ,১৮৮৫ (পৃ. ১২৭)
  • সিঙ্গাপুরে জিনিষপত্রের দাম চড়িয়াছে অসম্ভবভাবে। এখানকার ডলার ভারতবর্ষের দেড় টাকার সমান। চাউল কাট্টি হিসাবে বিক্রয় হয়; ১ কাট্টি আমাদের এক পোয়ার কিছু বেশী (১ ১/৩ পাউণ্ড)। চাউলের দাম প্রতি পাউণ্ড আধ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৬০ টাকা মণ। শুনিতেছি আরও চড়িবে। অথচ বার্মায় চাউল রহিয়াছে প্রচুর এবং দামও খুব সস্তা। কাপড় প্রায় দুষ্প্রাপ্য। নারিকেলের দেশে একটা নারিকেল কিনিতে লাগে প্রায় এক টাকা! রোগ হইলে ঔষধ পাওয়া যায় না।
    • এম. জি. মুলকর ,আজাদী সৈনিকের ডায়েরী ,১৯৪৫ (পৃ. ৪৪)
  • তৈল মানুষের খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান। ভারতের প্রদেশভেদে সর্ষপ তিল চীনাবাদাম ও নারিকেল তৈল রন্ধনে ব্যবহৃত হয়। ঘৃতের তাে কথাই নাই, ভারতবাসী মাত্রই ঘৃতভক্ত। চর্বির ভক্তও অনেক আছে। কার্পাসবীজের তৈলও আজকাল রন্ধনে চলিতেছে। কোনও কোনও স্থানে তিসির তৈলও বাদ যায় না। মাদ্রাজে রেড়ির তৈলে প্রস্তুত উপাদেয় আমের আচার খাইয়াছি।
    • রাজশেখর বসু ,লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী ,১৯৩৯ (পৃ. ৬৭-৬৮)
  • নারিকেলের মালপোয়া—একসের ময়দা নারিকেল জলে কিম্বা দুধে গুলিয়া তাহাতে আধপোয়া চিনি মিশ্রিত করিয়া কিঞ্চিৎ ঝুনা নারিকেল কোরা দিয়া কিঞ্চিৎ ছোট এলাচের গুঁড়া তাহার সহিত মিশ্রিত করিবে; একসের চিনির রস করিয়া একটি পৃথক পাত্রে রাখিবে; কড়ায় অর্দ্ধসের ঘৃত চড়াইয়া ঐ ময়দা গোলা গোল গোল করিয়া ভাজিয়া পূর্ব্বপাত্রস্থিত রসে নিক্ষেপ করিবে; অর্দ্ধ ঘণ্টা পরে তাহা আহারের উপহোগী হইবে।
    • ইন্দিরা দেবী ,আমার খাতা ,১৯১২ (পৃ.১৪৬)
  • একটু দধি বা তেঁতুল গোলা প্রভৃতি মিশাইয়া কালিয়া অম্ল স্বাদ বিশিষ্ট করিতে পার, অথবা নামাইবার পূর্ব্বে নারিকেল দুগ্ধ বা কুড়া, বাদাম বা পোস্ত বাটা অথবা মোয়াক্ষীর মিশাইয়া মালাইকালিয়া রাঁধিতে পার।
  • মোচা অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট করিয়া কুট। ভাপ দিয়া জল গালিয়া ফেলিয়া লও। আলু ছোট ছোট করিয়া কুটিয়া কষাইয়া রাখ। বুট ভিজাইয়া রাখ। ইঁচড়ের ন্যায় কালিয়া রাঁধ। বুটের পরিবর্ত্তে মটর ডালের চাপড়ি ভাজি, নারিকেল কুড়া এবং ছোট চিঙড়ী মাছাদি মিশাইতে পার।
    • কিরণলেখা রায়,বরেন্দ্র রন্ধন ,১৯২১ (পৃ. ১৭৬)
  • তোমাদের পোষা পাখীর গায়ে যদি এই রকম উকুন হয়, তবে অল্প পরিমাণে নারিকেল তেল তাহার পালক ও গায়ে মাখাইয়া দিয়ো। উকুন পতঙ্গজাতীয় প্রাণী। ইহাদের গায়ে নিশ্বাস টানিবার ছিদ্র আছে। তেলে সেই সকল ছিদ্র বন্ধ হইয়া গেলে উকুনরা নিশ্বাস ফেলিতে না পারিয়া মারা যায়।
    • জগদানন্দ রায় ,পোকা-মাকড় ,১৯২৪ (পৃ. ২৬০)
  • দূর সাগরের পারে

জলের ধারে ধারে নারিকেলের বনগুলি সব দাঁড়িয়ে সারে সারে।

    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,চিত্রবিচিত্র ,১৯৯১ (পৃ. ২৭)
  • দাতার নারিকেল কমে না, অর্থাৎ একটি নারিকেল পাড়িলে তৎস্থলে আর একটি হয়। বখিলের (কৃপণের) বাঁশ বাড়ে না; কারণ, বাঁশ যতই কাটা যায় ততই বৃদ্ধি পায়।
    • দীনেশচন্দ্র সেন ,বঙ্গ সাহিত্য পরিচয় ,১৯১৪ (পৃ. ১৫)
  • চলিতে চলিতে ক্রমে নদীর বাহুল্য কমিয়া আসিতে লাগিল। ক্রমে ভূমি দৃঢ় হইয়া আসিল; মৃত্তিকা লোহিত বর্ণ, কঙ্করময়, লোকালয় দূরে দূরে স্থাপিত, গাছপালা বিরল; নারিকেল-বনের দেশ ছাড়িয়া দুই পথিক তাল-বনের দেশে আসিয়া পড়িলেন। মাঝে মাঝে বড়ো বড়ো বাঁধ, শুষ্ক নদীর পথ, দূরে মেঘের মতো পাহাড় দেখা যাইতেছে। ক্রমে শাসুজার রাজধানী রাজমহল নিকটবর্তী হইতে লাগিল।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,রাজর্ষি ,১৯৬১ (পৃ.৯৯)
  • আর একটি কথা। আজ কাল কি গ্রামে কি সহরে সর্ব্বত্রই কেরোসিন তৈলের দীপ ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কিন্তু যেরূপ কেরোসিন দীপ হইতে অনর্গল ধূম নির্গত হইয়া গৃহ দুর্গন্ধময় ও শীঘ্র উত্তপ্ত করিয়া তুলে, সেরূপ নিকৃষ্ট দীপ গৃহে প্রজ্জ্বলিত করা স্বাস্থ্যের পক্ষে নিতান্ত ক্ষতিজনক। উৎকৃষ্ট কিরোসিন দীপ হইলেও বদ্ধগৃহে উহা ব্যবহার করা ভাল নহে। কারণ, উৎকৃষ্ট দীপ হইতেও অল্প পরিমাণে ধূম নির্গত হয় এবং অন্যান্য তৈল অপেক্ষা কিরোসিন তৈলের দীপ সমুদ্দীপ্ত বলিয়া এই দীপ্তির প্রভাবে শীঘ্রই গৃহের বাতাস উষ্ণ হইয়া উঠে। এই সকল কারণে কিরোসিন দীপের সম্মুখে বসিয়া পাঠ করা অপেক্ষা পাঠের সময় মোমবাতি অথবা অন্ততঃ পক্ষে দুইটি পলিতাবিশিষ্ট সরিষা বা নারিকেল তৈলের দীপ ব্যবহার করাও ভাল। শয়নকক্ষে সারারাত্রি কিরোসিনের আলো জ্বালাইয়া রাখা কোন ক্রমেই উচিত নহে।
    • স্বর্ণকুমারী দেবী ,গল্পস্বল্প ,১৮৯৩ (পৃ.৫৬)
  • এইরূপে আরও খানিক দূর গমন করিয়া একটা ভাঙ্গা দরজা আমার নয়নপথে পতিত হইল। প্রথলিত দিয়াশলাই এর কাটার সাহায্যে আমি সেই দ্বারের নিকট উপস্থিত হইলাম। দেখিলাম, একটা প্রকাণ্ড নারিকেল বৃক্ষ ভাঙ্গিয়া সেই দ্বারে পতিত, সম্ভবত সেই পতনশীল নারিকেলবৃক্ষের ভরেই দরজাটা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে।
    • প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় ,জোড়া পাপী ,১৯০৯ (পৃ. ২৮)
  • আমরা প্রতিদিন যাহা আহার করি তাহার অধিকাংশ সামগ্রীই কৃষিকর্ম্ম দ্বারা উৎপন্ন। কৃষি দ্বারা ধান্য প্রভৃতি নানাবিধ শস্য জন্মে। তন্মধ্যে ধান্য হইতে তণ্ডুল, যব হইতে ছাতু, গম হইতে ময়দা; মুগ, মসূর, মায, মটর, অরহর, ছোলা প্রভৃতি কলায় হইতে দ্বিদল জন্মে। তিল, সর্ষপ প্রভৃতি কতকগুলি শস্য আছে তাহা হইতে তৈল পাওয়া যায়। ইক্ষু হইতে গুড়, চিনি, মিছরি হয়। শাক, পটল, আলু, মুলা, লাউ, কুমড়া, ফুটী, তরমূজ, ইত্যাদি খাদ্য সামগ্রীও কৃষিকর্ম্ম দ্বারা উৎপন্ন হয়। আম, কাঁটাল, জাম, আতা, পেয়ারা, বাদাম, কিসমিস্, দাড়িম, নারিকেল, ইত্যাদি নানাবিধ মিষ্ট ও সুস্বাদ ফল বৃক্ষ হইতে জন্মে। যেখানে এই সকল ফলের বৃক্ষ অনেক থাকে তাহাকে উপবন, উদ্যান ও বাগান কহে।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ,বোধোদয় ,১৮৫২ (পৃ.৬৯)
  • কিন্নরী নামে অপর এক জাতীয় বীণা এতদ্দেশে বহুকালাবধি প্রচলিত আছে। কোন কোন গ্রন্থকারের মতে এই যন্ত্রের খোলটা অলাবু বা কাষ্ঠদ্বারা নির্ম্মিত না হইয়া পূর্ব্বকালে নারিকেলের খোলদ্বারা প্রস্তুত হইত, অধুনাতন সঙ্গীত কুতূহলীদিগের মধ্যে কেহবা বৃহৎ পক্ষীবিশেষের অণ্ড এবং আঢ্যেরা রজতাদি উৎকৃষ্ট ধাতুদ্বারা প্রস্তুত করাইয়া থাকেন; ফলতঃ নারিকেলখোলনির্ম্মিত কিন্নরীর ধ্বনির সহিত অণ্ডাদি নির্ম্মিত কিন্নরীর ধ্বনির কিছুমাত্র ইতর বিশেষ অনুভূত হয় না।
    • যন্ত্রকোষ,কিন্নরী বীণা ,শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর,(পৃ.২৪)
  • মাল-পোকার নাম বোধ হয় তোমরা শুনিয়াছ। ইহারা দেখিতে ঠিক্ বড় গোবরে পোকারই মত, কিন্তু ইহাদের মাথায় এক-একটা বাঁকানো শিং থাকে। গণ্ডারের মাথায় যেমন খড়্গ, ইহা যেন সেই রকমই খড়্গ। মাল-পোকা নারিকেল গাছের পরম শত্রু। নারিকেল গাছ হইতে কচি পাতা বাহির হইলে তাহার গোড়ায় গর্ত্ত করিয়া ইহারা একবারে গাছের ভিতরে আড্ডা করে এবং গাছ মারিয়া ফেলে।
  • জগদানন্দ রায় ,পোকা-মাকড় ,১৯২৪ (পৃ.২৬৮)

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা