নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
আধুনিক ভারতীয় বাংলা কবি ও লেখক
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (১৯ অক্টোবর ১৯২৪ - ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কবি। নীরেন্দ্রনাথের মোট প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ ৩০টি। শিশুদের জন্য ১৮টি ছড়ার বই লিখেছেন। তাঁর প্রথম গদ্যগ্রন্থ ‘কবিতার ক্লাস’ এবং একমাত্র উপন্যাস ‘পিতৃপুরুষ’। ‘নীরবিন্দু’ হলো তাঁর আত্মজিবনিক রচনা। নীরেন্দ্রনাথের প্রথম কবিতার বই ‘নীল নির্জন’ ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়। ‘উলঙ্গ রাজা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৭৪ সালে তিনি ‘সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার’ পান।
উক্তি
সম্পাদনা- যেন মূর্ত মানবতা, সদ্য হাঁটতে শেখার আনন্দে
সমগ্র বিশ্বকে তুমি পেতে চাও
হাতের মুঠোয়। যেন তাই
টাল্মাটাল পায়ে তুমি
পৃথিবীর এক-কিনার থেকে অন্য-কিনারে চলেছ।- কলকাতার যীশু, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- ভারবি, কলকাতা, প্রকাশকাল- বৈশাখ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ১২০
- যাও, তাকে যেমন করেই হোক
খুঁজে আনো।
সে এসে একবার এই উলঙ্গ রাজার সামনে
নির্ভয়ে দাঁড়াক।
সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
জিজ্ঞাসা করুক:
রাজা, তোর কাপড় কোথায়?- উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের উলঙ্গ রাজা কবিতা
- কবি, তুমি গদ্যে সভায় যেতে চাও?
যাও
পা যেন টলে না, চোখে সবকিছুকে-তুচ্ছ-করে-দেওয়া
কিছুটা ঔদাস্য যেন থাকে।
যেন লোকে বলে,
সভাস্থলে
আসবার ছিল না কথা, তবুও সম্রাট এসেছেন।- কবি, কবিতার বদলে কবিতা, প্রকাশক- বিশ্ববাণী প্রকাশনী, কলকাতা, প্রকাশকাল- আষাঢ় ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ২৫
- আমরা কেউ মাস্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।
সে রো্দ্দুর হতে চেয়েছিল!
ক্ষান্তবর্ধণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,
জাম আর জাম়রুলের পাতায়
যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।- অমলকাস্তি, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- ভারবি, কলকাতা, প্রকাশকাল- বৈশাখ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৪৯
- কবিতা আসলে শব্দ নয়, বরং শব্দকে ব্যবহার করবার এক রকমের গুণপনা। ভাষার মধ্যে যা কিনা অন্যবিধ একটি দ্যোতনা এনে দেয়।
- কবিতা কী, কবিতার কী ও কেন- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, প্রকাশকাল- সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ২০
- সৌন্দর্যের সঙ্গে এই যে পরিচয়, প্রাপ্তি হিসেবে এরই মূল্য হয়তো সর্বাধিক। কবিতা এই পরিচয়ের ক্ষেত্র রচনা করে দিচ্ছে; একের উপলব্ধিকে সে সর্বজনের করে তুলছে। শুধু তা-ই নয়, আমরা দেখতে পাচ্ছি, যা ছিল একটি বিশেষ মানুষের একটি বিশেষ মুহূর্তের অনুভূতি, তাকে সে উত্তীর্ণ করে দিচ্ছে নিত্যকালের দুয়ারে।
- কবিতা কেন , কবিতার কী ও কেন- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, প্রকাশকাল- সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ৩৬
- স্পষ্ট কথাটিকে আজ অন্তত একবার খুব স্পষ্ট করে বলে দেওয়া ভাল।
অন্তত একবার আজ বলা ভাল,
যা-কিছু সামনে দেখছি ধোঁয়া বা পাহাড় কিংবা পরস্পর আলাপনিরত
ক্ষিপ্র পশু—
হয়তাে এ ছাড়া কোনও দৃশ্য নেই।- কবিতা, কল্পনালত৷, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- ভারবি, কলকাতা, প্রকাশকাল- বৈশাখ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৮৮
- কবি অনেক সময় সেই স্তরের ভাষা ব্যবহার করেন, যে-স্তরে অনায়াস-বিচরণের প্রস্তুতি তাঁর অনেক পাঠকেরই নেই। ‘সূর্য’ বললে যে-পাঠক ব্যাপারটা তক্ষুনি বুঝতে পারেন, ‘ত্বিষাম্পতি’ বললে তাঁর হয়তো অসুবিধে হয়। ‘প্রহরী’ বললে যে-পাঠক অর্থটা তক্ষুনি ধরতে পারেন, ‘কঞ্চুকী’ বললে তাঁর বিড়ম্বনার হয়তো অবধি থাকে না।
- কঠিন কবিতা, কবিতার কী ও কেন- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, প্রকাশকাল- সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ৬৮
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।