পরমাণু
পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা এবং গাঠনিক একক
মৌলিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে মৌলটির সমস্ত ধর্ম উপস্থিত থাকে এবং যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাকে মৌলিক পদার্থটির পরমাণু বলে। সমস্ত কঠিন, তরল, গ্যাস এবং আয়ন -এর গঠনের মূলে রয়েছে নিস্তরিত বা আধানগ্রস্ত পরমাণু। পরমাণুর আকার খুবই ক্ষুদ্র; সাধারনত এরা দৈর্ঘ্যে ১০০ পিকোমিটার
উক্তি
সম্পাদনা- প্রত্যেক জড় পরমাণু প্রাণ হইয়া উঠিতে চেষ্টা করিতেছে; প্রত্যেক ক্ষুদ্রতম প্রাণ পূর্ণতর জীব হইতে চেষ্টা করিতেছে; প্রত্যেক পূর্ণতর জীব, (যেমন মনুষ্য) অপূর্ণতার হাত এড়াইবার জন্য প্রাণপণ চেষ্ট করিতেছে। বিশাল জগতের প্রত্যেক পরমাণুর মধ্যে অভিব্যক্তির চেষ্টা অনবরত কার্য্য করিতেছে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - বিবিধ প্রসঙ্গ, জগৎ-পীড়া (১৮৮৩)।
- জগতের ক্ষুদ্রতম পরমাণুর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করিতেছে, সমস্ত জগৎ নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট নয়, এবং জগতের একটি পরমাণুও নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট নয়। এই অসন্তোষই বিশাল জগতের প্রাণ।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - বিবিধ প্রসঙ্গ, জগৎ-পীড়া (১৮৮৩)।
- তোমার চরণ-ধ্বনি যখন বাজে আমার কানে,
স্বর্গ মর্ত ভরিয়া যায় গানে গানে গানে।
সব পরমাণু নাচে “এসেছে সে এসেছে সে"
করবো কি-যে পাই না খুঁজে তোমার আসার টানে
যখন তোমার চরণধ্বনি বাজে আমার কাণে॥- সরলা বসু রায় - চিত্ত-প্রদীপ, যখন (১৯৪১)।
- পরমাণু বোমার বিরুদ্ধেও যদি প্রবল আন্দোলন হয় তবে সমগ্র সভ্য মানবসমাজের ধিক্কারের ভয়ে আমেরিকা-রাশিয়াকেও সংযত হতে হবে। আশার কথা, যাঁদের কোনও কূট অভিসন্ধি নেই এমন শান্তিকামীরা ঘোষণা করছেন যে পরমাণু-বোমা ফেলে জনপদ ধ্বংস আর অগণিত নিরীহ প্রজা হত্যার চাইতে মহাপাতক কিছু নেই।
- রাজশেখর বসু - বিচিন্তা, বিজ্ঞানের বিভীষিকা ১৯৫৬ (পৃ. ১৪৫-১৫৩)।
- মৃত দেহের প্রত্যেক অঙ্গ, প্রত্যেক অস্থি, প্রত্যেক পরমাণু বিচ্ছিন্ন হইতেছে; কিন্তু তাহার কিছুই বিনষ্ট হইতেছে না। অতএব কোন্ উপমিতি দ্বারা ইহা সপ্রমাণ হয় যে মৃত্যুর পরে আত্মারই বিনাশ হইবে। যখন একটি জড়ীয় পরমাণু বিনষ্ট হইতে পারে না, তখন কি ঈশ্বর আত্মার বিনাশই ইচ্ছা করিবেন?
- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর - ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস ১৮৬৯ (পৃ. ৪৭-৫৭)।
- শরীর পরমাণু বিশিষ্ট, অতএব সেই সকল পরমাণু পৃথক্ হইলে সে শরীর ভগ্ন হইতে পারে, কিন্তু আত্মা একই, তাহার বিনাশও নাই এবং ভঙ্গও নাই।
- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর - ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস ১৮৬৯ (পৃ. ৪৭-৫৭)।
প্রাকৃতিকী
সম্পাদনা— জগদানন্দ রায়, অমৃত ও গরল, ১৯১৪ (পৃ. ১৫৩-১৬২)।
- কোটী কোটী চঞ্চল পরমাণু দ্বারা যে জীব-দেহ গঠিত রহিয়াছে, তাহাতে এমন একটি পদার্থ প্রবেশ করিল, যাহার পরমাণু জীবপরমাণুর সহিত মিলিয়া গেল। বলা বাহুল্য ইহাতে উভয়ের পরমাণুই সাম্যাবস্থায় আসিয়া দাঁড়াইবে—জীবের মৃত্যু হইবে। আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ জীবশরীরে বিষের এই প্রকার কার্য্যই আবিষ্কার করিয়াছেন। বিষ শরীরে প্রবেশ করিলেই দেহের মুক্ত পরমাণুগুলির সহিত স্থায়িভাবে মিলিয়া যায়, কাজেই ইহার পর আর রাসায়নিক কার্য্য চলে না; প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।
- অণুগুলির ভিতরে যে-সকল পরমাণু আছে সেগুলি স্থায়িভাবে পরস্পরের সহিত মিলিয়া থাকে না। প্রাণ-রক্তে যে পুষ্টিকর পদার্থ থাকে তাহা টানিয়া লইয়া ইহারা জীবকোষে চালাইয়া দেয়; কোষ তাহা দেহস্থ করিয়া পুষ্টিলাভ করিতে থাকে। কাজেই দাঁড়াইতেছে এই যে, উক্ত অণুগুলিই বাহির হইতে খাদ্য আনিয়া কোষের বৃদ্ধিকার্য্যে সাহায্য করে, এবং ইহাদের ভিতরকার পরমাণুর মধ্যে স্থায়ী বন্ধন নাই বলিয়াই, ক্ষণিকের জন্য পুষ্টিকর জিনিষের পরমাণুর-সহিত মিলিয়া সেগুলিকে কোষের ভিতর চালাইতে পারে।
- মনে করা যাউক, দুইটি হাইড্রোজেনের পরমাণু ও একটি অক্সিজেনের পরমাণু লইয়া বৈজ্ঞানিক কোন পদার্থ প্রস্তুত করিতে বসিলেন। এগুলির মিশ্রণে অণুপ্রমাণ জল উৎপন্ন হইয়া পড়িল। কিন্তু ঐ দুই পরমাণু হাইড্রোজেনের সহিত এক পরমাণু অক্সিজেন না মিশাইয়া যদি দুই পরমাণু অক্সিজেন মিশানো যায়, তাহা হইলে আর জল প্রস্তুত হয় না। এমন একটা জিনিষ হয়, যাহার সহিত জলের অতি দূর সম্বন্ধও কল্পনা করিতে পারা যায় না।
অনূদিত উক্তি সমূহ
সম্পাদনা- পরমাণু এবং মানুষের বিবর্তনের মধ্যে একটি খুব আকর্ষণীয় সাদৃশ্য রয়েছে যা অনুসরণ করা হয় উদ্ঘাটনের দুটি পদ্ধতিতে। আমরা দেখেছি যে পরমাণুর নিজস্ব পারমাণবিক জীবন রয়েছে এবং সৌরজগতের প্রতিটি পদার্থের পরমাণুর একইভাবে নিজের মধ্যে একটি ছোট সিস্টেম রয়েছে, যার একটি ধনাত্মক কেন্দ্র বা কেন্দ্রীয় সূর্য রয়েছে এবং ইলেক্ট্রনগুলি বা ঋণাত্মক অংশটি এর চারিদিকে ঘূর্ণায়মান। এই হল পরমাণুর অভ্যন্তরীণ জীবন, এর আত্মকেন্দ্রিক দিক।
- এলিস বেইলি, দ্যা কংসসিওসনেস অফ দ্যা এটম (১৯২২)।
- আমরা এখনও পর্যবেক্ষণযোগ্য তথ্য সম্পর্কে বিবৃতি তৈরি করতে ধ্রুপদী পদার্থবিদ্যার বস্তুনিষ্ঠ ভাষা ব্যবহার করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা বলতে পারি যে কেন একটি ফটোগ্রাফিক প্লেট কালো হয়ে গেছে, বা কিভাবে মেঘের ফোঁটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরমাণু সম্পর্কে আমরা কিছুই বলতে পারি না। এবং এই ধরনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আমরা কী ভবিষ্যদ্বাণী করব তা নির্ভর করে আমরা যেভাবে আমাদের পরীক্ষামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করি।
- নিলস বোর, ফিসিক্স এন্ড বিয়ন্ড' - ১৯৭১ সালের সলভে কনফারেন্স।
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিমিডিয়া কমন্সে পরমাণু সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।
উইকিপিডিয়ায় পরমাণু সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে পরমাণু শব্দটি খুঁজুন।