পান্তা ভাত গ্রামীণ বাঙালি জনগোষ্ঠীর একটি জনপ্রিয় খাবার। নৈশভোজের জন্য রান্না করা ভাত বেঁচে গেলে সংরক্ষণের জন্য জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরদিন এই জলে ভিজিয়ে রাখা ভাত খাওয়া হয়। যাকে পান্তা ভাত বলা হয়। গ্রামীণ বাংলায় পান্তা ভাত সকালের খাবার হিসাবে খাওয়া হয়। সাধারণত লবণ, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া হয় ‌। অনেকেই আবার আলু ভর্তা,বেগুন ভর্তা,ডাল ভর্তা,শুটকি ভর্তা, সরিষার তেল, শুকনা মরিচ পোড়া ইত্যাদি সহযোগে পান্তা ভাত খেয়ে থাকেন। যা পান্তা ভাতের স্বাদ বৃদ্ধি করে।

ইলিশ মাছের সাথে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ ভর্তা, আঁচার, ডাল ভর্তা, আলু ভর্তা, কাঁচা মরিচ, এবং পেঁয়াজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পহেলা বৈশাখ তথা নববর্ষের জনপ্রিয় খাদ্য।

উক্তি সম্পাদনা

  • ও বগী তুই খাস কি?
    পান্তা ভাত চাস কি?
    পান্তা আমি খাই না
    পুঁটি মাছ পাই না
    একটা যদি পাই
    অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই।
    • কানা বগীর ছা, খান মুহাম্মদ মইনুদ্দীন [১]
  • আগের দিন ভাতে জল দিয়ে রাখলে সেটা হত পান্তা ভাত। ভাত যাতে পচে না যায়, রাতের খাবার শেষে ভাত রয়ে গেলে ওটাকে পান্তা করে রাখা হত।
    • একাত্তরের সাতসতেরো, বিজন সাহা, পৃষ্ঠা ৬৪[২]
  • পান্তাভাত কিন্তু ছাইভস্ম নয়। পান্তাভাতের দারুণ ক্ষমতা। তাই বুঝি। ভাত তো শুধু কার্বোহাইড্রেট মশাই! আমি অবশ্য সায়েন্স জানি না। তবে পান্তাভাত খাই বলে আমি গায়ে বেশ জোর পাই।
    • শীর্ষেন্দু ৭৫, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা ৫৫ [৩]
  • গ্রাম বাংলার ধনী গরীব সনাতন কাল হতে পান্তাভাতে অভ্যস্ত। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান এমনকি শাওতাল, মুন্ডার 'পান্তাভাত' প্রভাতের সঙ্গী। চরম দুর্দিনে কাঁচা মরিচ, লবন আর ঠান্ডা পানি মিশ্রিত ঠান্ডা ভাত বাঁচিয়ে রাখে গরীব অসহায় মানুষকে আকালে। এদের সাথে অবলীলায় হাসি মুখে পান্তাভাত খেয়ে নিজেকে সমর্পন করে দুঃখের দিনের বন্ধু হয়েছেন ঐশ্বর্য মন্ডিত সাধক প্রয়াত: মির্যা তাহের আহমদ সাহেব। খলিল জীবরানের ভাষায় যে খাদ্যে ভালোবাসা থাকে তা হয় মধুর। বাংলাদেশের গরীব মানুষের ভালোবাসার সুগন্ধ পেয়েছিলেন তিনি। তাই জীবনের শেষ অংশে বাংলাদেশের কথা ভুলেন নি। আহা! এ পান্তাভাতের দেশে তাঁর আসার বড় সখ ছিল।
    • হযরত মির্যা তাহের আহমদ (রাহে.)-এর বাংলাদেশ সফর, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাবুল, পৃষ্ঠা ৭২ [৪]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা