পূজা

হিন্দুদের পালনীয় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান

পূজা (সংস্কৃত: पूजा) হিন্দুদের পালনীয় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হিন্দুধর্মতে, দেবতাগণ, বিশিষ্ট ব্যক্তি অথবা অতিথিদের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। স্থান ও কালভেদে বিভিন্ন প্রকার পূজানুষ্ঠান এই ধর্মে প্রচলিত। যথা, গৃহে বা মন্দিরে নিত্যপূজা, উৎসব উপলক্ষে বিশেষ পূজা অথবা যাত্রা বা কার্যারম্ভের পূর্বে কৃত পূজা ইত্যাদি।

বারাণসীতে গঙ্গার পূজা ও আরতি।
  • বাঙ্গালা দেশে আমরা বারমাসে তের পার্ব্বণ দেখিয়া আসিতেছি, এখানে ১২ মাসের পূজা পার্ব্বণের সংখ্যা করিয়া উঠাই এক কঠিন ব্যাপার। কি গুর্খা, কি নেওয়ার, নেপালীদিগের ভিতর চির উৎসব চলিয়াছে। এত পূজা পার্ব্বন, আমোদ আহ্লাদ করিয়া কখন যে তাহারা জীবিকা উপার্জ্জনের অবসর পায় তাহাই ত এক সমস্যা। গুর্খাগণ হিন্দু, নেওয়ারগণ পূর্ব্বে বৌদ্ধ ছিল। এই উভয় সম্প্রদায়ের উৎসব এখন নেপালের জাতীয় উৎসব হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই কারণেই নেপালে পূজা পার্ব্বণের এত বাহুল্য দেখা যায়।
  • আমাদের বাড়ী দুর্গা ও জগদ্ধাত্রী—এই দুই পূজা হত। দুর্গোৎসব মহাসমারোহে সম্পন্ন হত। আমাদের উঠানের উপর সামিয়ানা খাটানো আর তিন দিন ধরে নৃত্য গীত আমোদ প্রমোদ, আমাদের আনন্দের আর সীমা থাকতো না।
    • সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ,আমার বাল্যকথা ,১৯৬০ (পৃ. ৬১)
  • রাজাকে অমান্য করা আমাদের সাধ্য নেই। ভগবানের পূজা নাই করলেম কিন্তু তাই বলে তাঁর অপমান করতে পারিনে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,নটীর পূজা ,১৯৪৫ (পৃ. ৮৭)
  • আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন—

আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন। যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে, সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে, তখন আপন শেষ শিখাটি জালবে এ জীবন— আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন। অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন-ডোরে, মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ’রে। যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে একে একে তারা, আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা, অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন— আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন।

    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,গীতবিতান ,১৯৯৩ (পৃ. ৯০)
  • জীবনে যত পূজা হল না সারা

জানি হে জানি তাও হয় নি হারা॥ যে ফুল না ফুটিতে ঝরেছে ধরণীতে যে নদী মরুপথে হারালো ধারা জানি হে জানি তাও হয় নি হারা। জীবনে আজো যাহা রয়েছে পিছে জানি হে জানি তাও হয় নি মিছে

    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,গীতবিতান ,১৯৯৩ (পৃ. ১২৪)
  • তুমি চাও নাই পূজা, সে চাহে পূজিতে;

একটি প্রদীপ হাতে রহে সে খুঁজিতে অন্তরের অন্তরালে। দেখে সে চাহিয়া, একাকী বসিয়া আছ ভরি তার হিয়া।

    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,নৈবেদ্য ,১৯৫১ (পৃ. ৫৩)
  • জাপানে প্রত্যেক গৃহস্থের বাটীতে তিনটী পবিত্র স্থান আছে। প্রথম, কামিদানা অর্থাৎ সৃষ্টিকর্ত্তা ভগবানের পূজাস্থান; দ্বিতীয়, বুদসুদান অর্থাৎ বুদ্ধবেদী; তৃতীয়, ইউজি-গেমি অর্থাৎ কুলদেবতা-গৃহ। এই সকল স্থানে প্রত্যহ যথারীতি পূজা হইয়া থাকে। সিনজুগণ দেবতার সম্মুখে দর্পন, শুভ্রবস্ত্র ও পানপাত্র স্থাপন করিয়া চাউল, সাকি ও বিবিধ মৎস্যসহযোগে উপাসনায় প্রবৃত্ত হইয়া থাকে। বৌদ্ধগণ দেবপূজায় মৎস্য ব্যবহার করে না। টৌরীশাখা, কদলীপত্র ও বিচালিনির্ম্মিত রজ্জু দেবকার্য্যে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। পূজাগৃহে প্রত্যহ দীপদান করা হয়।
    • উমাকান্ত হাজারী ,নব্য জাপান ও রুষ জাপান যুদ্ধের ইতিহাস ,১৯০৬ (পৃ. ৪০)
  • এই সে পরম মূল্য

আমার পুজার— না পূজা করিলে তবু শাস্তি নাই তার।

    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্ফুলিঙ্গ ,১৯৪৫ (পৃ. ৩০)
  • একটি অন্ধ ভিখারী রোজ মন্দিরে পূজা করতে যায়। প্রতিদিন ভক্তিভরে পূজা শেষ করে মন্দিরের দরজায় প্রণাম করে ফিরে আসে। মন্দিরের পুরোহিত সেটা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেন।
    • সুকুমার রায়

সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী ,পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর সম্পাদিত ,১৯৬০ (পৃ. ৩৭৫)

  • তিনি আর কা’কেও গৃহ দেবতার সেবা করতে দিতেন না; অথচ, তিনি নিজে মুখে আঁচল বেঁধে, নৈবেদ্য রচনা ও পূজার আয়োজন করতে গেলে, যে পূজা সকালে হবার কথা, তা সন্ধ্যার আগে কিছুতেই হতো না। আর এক কথা। তিনি রাঁধবার আগে কাঠগুলি জলে ধুয়ে নিতেন। ভিজে কাঠ, এজন্যে কিছুতেই সন্ধ্যার আগে দেবতার ভোগ হতো না। পচা গোররের দুর্গন্ধে ঠাকুরের ঘরে তিষ্ঠানো ভার। দেবতারা আর কত সহ্য় করিবেন। তাঁরা এই সব কারণে বড় কুপিত হলেন, ব্রাহ্মণীর পূজা গ্রহণ করলেন না। একদিন তিনি পূজার ঘরে প্রবেশ করবেন এমন সময়ে দৈববাণী হলো, সাবধান! তুমি। এঘরে আর কখনো এসো না।
    • পরমেশপ্রসন্ন রায় ,মেয়েলি ব্রত ও কথা,১৯০৮ (পৃ.৮৪)
  • নগেন ঠাকুর এবার পূজা করেন নাই শুনিয়া দুঃখিত হইলাম। তিনি সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ করিয়াছেন? আমি যত পূজা দেখিয়াছি তন্মধ্যে নগেন ঠাকুর এবং শ্রীশ্রীপূজ্যপাদ গুরুদেব মহাশয়ের পূজা সর্বাপেক্ষা ভক্তি আকর্ষণ করে। নগেন ঠাকুরের চণ্ডীপাঠ বড়ই মধুর এবং অভক্তকে ভক্ত করিয়া ফেলে।
    • সুভাষচন্দ্র বসু ,পত্রাবলী ,১৯৬০ (পৃ. ৩)
  • গণেশ বলিলেন, “এই যে আমি আপনাদের পূজা করিয়া সাতবার আপনাদিগকে প্রদক্ষিণ করিয়াছি। বেদে আর শাস্ত্রে আছে যে, পিতামাতাকে পূজা করিয়া প্রদক্ষিণ করিলে তাহাতে পৃথিবী প্রদক্ষিণের ফল পাওয়া যায়, ইহাতে সংশয় নাই। বেদের কথা যদি সত্য হয়, তবে অবশ্যই আমার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করা হইয়াছে। সুতরাং আমার শীঘ্র বিবাহ দিন, নচেৎ বেদের কথা মিথ্যা হইয়া যাইবে।”
    • উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র,পুরাণের গল্প,গণেশের বিবাহ (পৃ. ৬৬৯)

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা