পূর্ণেন্দু পত্রী

ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক

পূর্ণেন্দুশেখর পত্রী (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ – ১৯ মার্চ ১৯৯৭) (পূর্ণেন্দু পত্রী নামে সর্বাধিক পরিচিত; ছদ্মনাম সমুদ্রগুপ্ত) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, সাহিত্য গবেষক, কলকাতা গবেষক, চিত্র-পরিচালক ও প্রচ্ছদশিল্পী।

  • “যে আমাকে অমরতা দেবে

সে তোমার ছাপাখানা নয়,

সে আমার সত্তার সংগ্রাম

নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [১]

  • “স্বপ্নেই শুধু দ্বিতীয়বার ফিরে পাওয়া যায় শৈশব।

সব ধুলোবালি খোলামকুচি, সব উড়ে-যাওয়া আঁচল

রঙিন পরকলা জুড়ে জুড়ে আঁকা সব মুখচ্ছবি
বৃষ্টি বাদলের ভিজে গন্ধের ভিতরে লুকিয়ে কাঁদার সুখ।

স্বপ্নেই শুধু আরেকবার অগাধ জলের ভিতর থেকে মুখ তুলে তাকায় ছেলেবেলার লাল শালুক।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [২]

  • “সবচেয়ে দুর্ধর্ষতম বীরত্বেরও ঘাড়ে একদিন মৃত্যুর থাপ্পড় পড়ে

সবচেয়ে রক্তপায়ী তলোয়ারও ভাঙে মরচে লেগে
এই সত্যকথাটুকু কোনো মেঘ, কোনো বৃষ্টি, কোনো নীল নক্ষত্রের আলো

তোমাকে বলেনি বুঝি?”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [৩]

  • “এক একদিন ঘুম ভাঙার পর

মাথায় বেঠোফেনের অগ্নিজটাময় চুল,

আর মুখের দুপাশে মায়াকভস্কির হাঁড়িকাঠের মতো চোয়াল,
চোখের ভিতরে বোদলেয়ারের প্রতিহিংসাপরায়ণ চোখ,
মনের ভিতরে জীবনানন্দের প্রেমিক চিলপুরুষের মন,

আর হাসির ভিতরে রেমব্রান্টের হিসেব-না-মেলানো হাসির চুরমার!”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [৪]

  • “কাকে পাপ বলে আমি জানি

কাকে পুণ্যজল বলে জানি
মুকুটের কাঁটা কয়খানি।
অভিজ্ঞতায় বৃদ্ধ, আবেগে বালক,
জাত গোত্রহীন হয়ে ভেসে আছি সময়ের নাড়ীর ভিতরে

উলঙ্গ পালক!”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [৫]

  • “সমস্ত পাওয়ার পরও মানুষের তবু বাকি থাকে

কোনোখানে একটি চুম্বন।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী [৬]

  • “যখন সকল জামা পরা শেষ, মাথায় মুকুট,

যখন সকল সুখে পুষ্ট ওষ্ঠপুট
তৃষ্ণার কলসগুলি ভরে গেছে চরিতার্থতায়
অকস্মাৎ মানুষের মনে পড়ে যায়
বিসর্জনে ডুবে গেছে কবে কত প্রতিমা ও পরম লগন
মনে পড়ে বাকি আছে, মনে পড়ে বাকি রয়ে গেছে

কোনোখানে একটি চুম্বন।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [৭]

  • “সবাই মানুষ থাকবে না।

কেউ কেউ ধুলো হবে, কেউ কেউ কাঁকর ও বালি
খোলামকুচির জোড়াতালি।
কেউ ঘাস, অযত্নের অপ্রীতির অমনোযোগের
বংশানুক্রমিক দূর্বাদল।
আঁধারে প্রদীপ কেউ নিরিবিলি একাকী উজ্জ্বল।
সন্ধ্যায় কুসুমগন্ধ,
কেউ বা সন্ধ্যার শঙ্খনাদ।
অনেকেই বর্ণমালা
অল্প কেউ প্রবল সংবাদ।

যে আমাকে অমরতা দেবে
সে তোমার ছাপাখানা নয়,
সে আমার সত্তার সংগ্রাম

নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [৮]

  • “তোমার তূণীর ভরা থাক বিশ্বাসে

শব্দ বুনুক বজ্রের বীজধান।

হয়তো একদা মেঘে শোনা যাবে মেঘনার তোলপাড়

—আমি হতে চাই শামসুর রাহমান!”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [৯]

  • “আরম্ভের সব কিছু এইরূপ প্রতিশ্রুতিময়।

ক্রমে,
ভীষণ নীরবে
প্রতিশ্রুতি, গাছ ও মানুষ

একযোগে হরিতাভ হয়।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [১০]

  • “দেবতা আছেন কোথাও কাছাকাছি

হয়তো বোধে, হয়তো ক্রোধে, ক্ষোভে
হয়তো কারো উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোভে
অবিশ্বাসেও হয়তো কারু-কারু
তাঁরই ডাকে বজ্র ডাকে মেঘে
রৌদ্র ওঠে প্রতিজ্ঞায় রেগে
দৃপ্ত হাঁটে দীর্ঘ দেবদারু।

দেবতা আছেন কোথাও কাছাকাছি
জানি না ঘর বসত-বাটী ডেরা।
প্রতিদিনের খড়ে এবং কুটোয়
যা ফোটে বা ফুটতে গিয়ে লুটোয়
তার ভিতরেই বিদীর্ণ প্রায় তাঁহার

দুঃখী চলাফেরা।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [১১]

  • “সব খাওয়া হয়ে গেছে, সুখ, শান্তি, ঘাত-প্রতিঘাত

অপমান ও সম্মান

সম্মানের শাঁখ ও করাত
মায়া-মমতার থালা, মাছ দুধ ভাত
আশ্বিনের নীলবর্ণ শরবতে কার্তিকের হিম
কোজাগরী আকাশের পিলসুজে জ্যোৎস্নার পিদিম
পলাশ বনের ছবি, ডালে ডালে ফুলশুদ্ধ ঝাঁপি
পুকুরে ঝিনুক, সেই ঝিনুকেরই মতো ঠোঁট সলজ্জ গোলাপী
সব খাওয়া হয়ে গেছে, তবুও আসন ছুঁয়ে বসে আছি ভীষণ আশায়।

পাহাড়ের মতো খিদে পায়!”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [১২]

  • “আজ সব খুলে দিও,

কোনো ফুল রেখো না আড়ালে

ভূ-মধ্যসাগরও যদি চাই, দিও
দু'হাত বাড়ালে।
দ্বিপ্রহরে যদি চাই
গোধূলি বেলার রাঙা ঠোঁট
গোধূলিতে জ্যোৎস্না যদি চাই
কাঠের চেয়ারে বসে
যদি বলি হতে চাই
কীর্তিনাশা নদী
সমস্ত কল্লোল দিও
কোনো ঢেউ রেখো না আড়ালে।

ভূ-মধ্যসাগরও যদি চাই, দিও দু'হাত বাড়ালে।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [১৩]

  • “সকল দুয়ার খোলা আছে

নিমন্ত্রণ-লিপি গাছে গাছে

গাঢ় চুম্বনের মতো আকাশ নদীর খুব কাছে
রোদে ঝলোমলো।
কখন আসছো তুমি বলো?

বেলা যায়, দেরি হয়ে যায়
বাসি ফুল বাগানে শুকায়
অন্যান্য সমস্ত লোক আড়ম্বরপূর্ণ হেঁটে যায়
দূরের উৎসবে।

তোমার কি আরো দেরি হবে?”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [১৪]

  • “আমার পতাকা উড়ছে

পাখিদের স্বাধীনতা ছুঁয়ে।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী, পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা [১৫]

  • “সুখ নেইকো মনে

নেলকাটারটা হারিয়ে গেছে হলুদ বনে বনে।”  — পূর্ণেন্দু পত্রী [১৬]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা