প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়

ভারতীয় লেখক

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৩ – ৫ এপ্রিল ১৯৩২) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী কথাসাহিত্যিক ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক। ছাত্রাবস্থায় 'ভারতী' পত্রিকায় কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে প্রভাতকুমারের সাহিত্য জীবনের শুরু। পরে গদ্য রচনায় হাত দেন। 'শ্রীমতী রাধামণি দেবী' ছদ্মনামে লিখে কুন্তলীনের প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। এক বার 'শ্রীজানোয়ারচন্দ্র শর্মা' ছদ্মনামে তার রচিত নাটক 'সূক্ষ্মলোম পরিণয়' মর্মবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রদীপ, প্রবাসী ও ভারতী পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। তার রচিত ১৪ টি উপন্যাস ও মোট ১০৮ টি গল্প নিয়ে ১২ টি গল্প-সংকলনের সম্ভার আছে বাংলা সাহিত্যে। তার প্রথম উপন্যাস 'রমাসুন্দরী' ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ধারাবাহিক ভাবে 'ভারতী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'রত্নদীপ'। এটি নাট্য ও চলচ্চিত্ররূপে জনপ্রিয় হয়েছে। সরল ও অনাবিল হাস্যরসের গল্পলেখক হিসাবে প্রভাতকুমার সমধিক প্রসিদ্ধ। সাধারণ আটপৌরে জীবনের লঘু ও দুর্বল দিকগুলো হাস্যরসে পরিবেশিত হয়েছে। বাঙালি জীবনের সুখ ও দুঃখের জীবন দোলার ছন্দে ছন্দময় হয়ে সার্থক হয়েছে।

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • রবীন্দ্র-কবিমানসের স্বমন্দাকিনীই ছোটগল্পে মর্ত্যভাগীরথীরূপে মানুষের কাছে আনন্দ-বেদনায় কলনাদিনী, তাই তার পাবনপ্রবাহে মৃৎপুত্তলিকাও ক্ষণে ক্ষণে দেবতার অমর মহিমায় দীপ্তমান। প্রভাতকুমারের যমুনা মৃত্যু সহোদরা কালিন্দী, তার নির্মল জলে পার্থিব জীবনেরই স্বমহিমচ্ছায়া প্রতিবিম্বিত।
    • জগদীশ ভট্টাচার্য; প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প, জগদীশ ভট্টাচার্য সম্পাদিত, কলকাতা, প্রকাশ ভবন, ২০১০।
  • তোমার গল্পগুলি ভারি ভালো। হাসির হাওয়ায় কল্পনার ঝোঁকের পালের উপর পাল তুলিয়া একেবারে হু হু করিয়া ছুটিয়া চলিতেছে, কোথাও কিছুমাত্র ভার আছে বা বাধা আছে তাহা অনুভব করিবার জো নাই।
  • বাংলা সাহিত্যে গত যুগের ছোটগল্পে প্রভাতকুমারের স্থান রবীন্দ্রনাথের পরেই।
  • বিদেশিনী চরিত্রচিত্র আমরা বিদেশী সমাজেই দেখতে অভ্যস্ত, স্বদেশীয় নরের সংস্রবে বিদেশিনীকে আমরা একটু সন্দেহের চক্ষেই দেখে থাকি, রস গ্রহণে বাধা পড়ে। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের অনেক ভাল গল্পেও আমরা এই অবস্থায় পড়েছি।
  • প্রভাতকুমারের (গল্প-উপন্যাসের) নারীচরিত্র অনেক এবং বহু বিচিত্রতাপূর্ণ। ছোট গল্পের মধ্য দিয়ে অপূর্ব রসসৃষ্টিই তাঁর বঙ্গসাহিত্যে অমূল্য দান।
  • বহু সমালোচকের মতে বঙ্কিমযুগের পর উপন্যাসসাহিত্যে যখন ভাঁটা পড়ে গেল, যখন একমাত্র সব্যসাচী রবীন্দ্রনাথ ছাড়া অন্য সাহিত্যিকেরা বিদেশী উপন্যাসের অনুবাদ এবং ছোট গল্প লেখা নিয়েই বিভোর ছিলেন, ঠিক সেই যুগে (১৯০৯-১০) “প্রবাসী”তে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের “নবীন সন্ন্যাসী” এবং “ভারতী”তে অনুরূপা দেবীর “পোষ্যপুত্র” আত্মপ্রকাশ করে বাংলা সাহিত্যকে উপন্যাসের জোয়ারে প্লাবিত হতে সুযোগ দিয়েছিল।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা