ফল

সপুষ্পক উদ্ভিদের ফুল থেকে হয়, যা বীজ ছড়ায়

ফল শব্দটি বিভিন্ন পরিস্থিতে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়। যেমন খাবার তৈরিতে এবং আর জীববিজ্ঞানে ব্যবহৃত ফল শব্দটি সমার্থক নয়। ফল বলতে কোন সপুষ্পক উদ্ভিদ, যা বীজ ছড়ায়। এ বীজ গাছে থাকলে তাকে অনেক সময় ফল বলা যায় আবার বীজ ফলের মধ্যও অবস্থান করে তবে সকল বীজই ফল হতে আসে না।আবার কোনো কোন ফল ফুল থেকে নাও হতে পারে।

সতেজ ফল
   

 ফুল কহে ফুকারিয়া, ফল, ওরে ফল,
কত দূরে রয়েছিস্ বল্ মোরে বল্।
ফল কহে, মহাশয়, কেন হাঁকাহাঁকি—
তোমারি অন্তরে আমি নিরন্তর থাকি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,সঞ্চয়িতা ,১৯৫৫ (পৃ. ২৯২)
  • শিয়াল পণ্ডিত আখ খেতে বড় ভালোবাসে, তাই সে রোজ আখ খেতে যায়। একদিন সে আখের ক্ষেতে ঢুকে, একটি ভিমরুলের চাক দেখতে পেল। ভিমরুলের চাক সে আগে কখনো দেখেনি, সে মনে করল ওটা বুঝি আখের ফল।
    • টুনটুনির বই,আখের ফল,উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ,১৯৬৪ (পৃ. ১০৯)
  • লেখক। “মহাশয়, আমার এ ফল ফুলের দোকান। মিঠাই মণ্ডার নহে, যে, নিজের হাতে গড়িয়া দিব। আমার মাথার জমীতে কতক গুলা গাছ আছে। আপনি আমার সঙ্গে বন্দোবস্ত করিয়াছেন, আপনাকে নিয়মিত ফল ফুল যোগাইতে হইবে। কিন্তু ঠিক্ নিয়ম অনুসারে ফল ফুল ফলেও না, ফুটেও না; কখন্‌ ফলে, কখন্ ফুটে বলিয়া অপেক্ষা করিয়া থাকিতে হয়। কিন্তু তাহা করিলে চলে না, আপনি প্রত্যহ তাগাদা করিতে থাকেন, কৈ হে, ফুল কই, ফল কই?
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,বিবিধ প্রসঙ্গ ,১৮৮৩ (পৃ. ৮৩-৮৪)
   

 জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিয়ে ক্ষুধার লাগি’,
ছুটি যদি জোটে তবে অর্দ্ধেকে
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী।
বাজারে বিকায় ফল তণ্ডুল
সে শুধু মিটায় দেহের ক্ষুধা
হৃদয়-প্রাণের ক্ষুধা নাশে ফুল
দুনিয়ার মাঝে সেই তো সুধা।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ,ফুলের ফসল
   

 আজি মাের দ্রাক্ষাকুঞ্জবনে
গুচ্ছ গুচ্ছ ধরিয়াছে ফল।
পরিপূর্ণ বেদনার ভারে
মুহুর্তেই বুঝি ফেটে পড়ে,
বসন্তের দুরন্ত বাতাসে
নুয়ে বুঝি নমিবে ভূতল;
রসভরে অসহ উচ্ছ্বাসে
থরে থরে ফলিয়াছে ফল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,চৈতালি ,১৯৫৭ (পৃ. ১৭)
   

 গিরিনদী বালির মধ্যে
যাচ্ছে বেঁকে বেঁকে
একটি ধারে স্বচ্ছ ধারায়
শীর্ণ রেখা এঁকে।
মরু-পাহাড়-দেশে
শুষ্ক বনের শেষে
ফিরেছিলেম দুই প্রহরে
দগ্ধ চরণতল-
বনের মধ্যে পেয়েছিলেম
একটি আঙুর ফল॥

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,ক্ষণিকা ,১৯৯৩ (পৃ. ১০৫)
  • ব্রাহ্মণ ফল পাইয়া পুলকিত-চিত্তে স্বগৃহে প্রত্যাগমন পূর্ব্বক ব্রাহ্মণীকে ডাকিয়া তাহার হস্তে ঐ ফল প্রদান করিয়া বলিলেন হে ব্রাহ্মণি দেবতা আমার প্রতি প্রসন্ন হইয়া এই ফল দিয়াছেন এবং কহিয়াছেন যে নর ইহা ভক্ষণ করিবে সে অমর হইবেক। বিপ্রকান্তা ইহা শুনিয়া বিলাপ করিতে করিতে কহিলেন পূর্ব্ব জন্মে আমরা কি পাপ করিয়াছিলাম, তাহাতে এজন্মে অন্নাভাবে অস্থি চর্ম্ম সার হইয়াছে, এবং এই অবস্থায় চিরজীবী হইলে কত ক্লেশ ভােগ করিতে হইবে বলাযায় না, এক্ষণে আমাদের চিরজীবী হওয়া অপেক্ষা মরণ মঙ্গল, অতএব এ ফলে আমাদিগের কিছুই প্রয়ােজন নাই, তুমি রাজাকে এই ফল দিয়া তাঁহার নিকট হইতে কিঞ্চিৎ অর্থ লইয়া আইস, তাহা হইলে জঠরজ্বালা নিবারণের উপায় হইবেক।
    • লাল্লু লাল ,বত্রিশ সিংহাসন ,নীলমণি বসাক অনূদিত ,১৮৫৪ (পৃ. ২৬-২৭)
   

 চরিত্র না বুঝে যদি মিত্রতা করিবে,
বিষময় ফল তায় সর্ব্বথা ফলিবে।
মিত্রতা করহ যদি সুজনের সনে,
তোমারে সুজন তবে ক’বে সর্ব্বজনে।
যদ্যপি মিত্রতা কর প্রতারক সনে,
তোমাকেও প্রবঞ্চক ক’বে নরগণে।
যদিও কুজন সনে মিত্রতা না কর,
কিন্তু তার সহবাসে সদা কাল হর,
তোমারে কুজন তবু বলিবে সকলে,
অসতের সঙ্গে নানা মন্দ ফল ফলে।
অতএব লোক বুঝে মিত্রতা করিবে,
নতুবা নিন্দার ভার বহিতে হইবে।

নারায়ণচন্দ্র বিদ্যারত্ন ,নীতিকণা ,১৮৯৬ (পৃ. ২)
  • প্রায় সমুদায় উদ্ভিদেরই ফলের মধ্যে বীজ জন্মে। সেই বীজ ভূমিতে বপন করিলে তাহা হইতে নুতন উদ্ভিদ উদ্ভব হয়। কতকগুলি উদ্ভিদ এরূপ আছে যে উহাদের শাখা অথবা মূলের কিয়দংশ ভূমিতে রোপণ করিয়া দিলে নুতন উদ্ভিদ জন্মায়।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ,বোধোদয় ,১৮৫২ (পৃ. ৬৭)
   

 সেই তো আমি চাই।
সাধনা যে শেষ হবে মোর
সে ভাব্‌না তত নাই।
ফলের তরে নয় তো খোঁজা,
কে বইবে সে বিষম বোঝা—
যেই ফলে ফল ধুলায় ফেলে
আবার ফুল ফুটাই॥

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,গীতালি ,১৯৪৬ (পৃ. ৪৫)
  • একদিন শঙ্খ কোন কারণে আশ্রমের বাহিরে গিয়াছে, এমন সময়ে লিখিত তথায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। শঙ্খকে আশ্রমে না পাইয়া, লিখিত এদিক-ওদিক বেড়াইতে বেড়াইতে দেখিলেন আশ্রমের একটি গাছে অতি চমৎকার ফল পাকিয়া রহিয়াছে। বোধহয় তখন লিখিতের খুব ক্ষুধা হইয়াছিল, তাই ফল দেখিবামাত্রই তিনি ভাবিলেন, ইহার কয়েকটি পাড়িয়া খাই। এই মনে করিয়া তিনি কয়েকটি ফল পাড়িয়া আনন্দের সহিত ভক্ষণ করিতে লাগিলেন, ঠিক সেই সময়ে শঙ্খও আশ্রমে আসি!’ উপস্থিত হইলেন।
    • উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র,মহাভারতের কথা ,শঙ্খ ও লিখিত (পৃ. ৬০৯)
   

 দেখলাম কি কুদরতিময়।
বিনা বীজে আজগবি গাছ চাঁদ ধরেছে তায়॥
নাই সে গাছের আগাগোড়া
শূন্যভরে আছে খাড়া
ফল ধরে তার ফুলটি ছাড়া
দেখে ধাঁধাঁ হয়॥
বলবো কি সেই গাছের কথা
ফুলে মধু ফলে সুধা
সৌরভেতে হরে ক্ষুধা
দরিদ্রতা যায়॥
জানলে গাছের অর্থবাণী
চেতন বটে সেহি ধনি
গুরু বলে তারে মানি,
লালন ফকির কয়॥

মতিলাল দাশ ,লালন-গীতিকা, পীযূষকান্তি মহাপাত্র সম্পাদিত ,১৯৫৮ (পৃ. ১২৩)
  • আত্মরক্ষার জন্যেই অধিকাংশ গাছ নানারকমের ফন্দি-ফিকিরের আশ্রয় নেয়। কিন্তু কেবল নিজেকে বাঁচিয়েই সকলে সন্তুষ্ট নয়, বংশরক্ষার জন্যে তাদের যে-সব উপায় খাটাতে হয় সেগুলিও এক-এক সময় কম সাংঘাতিক নয়। অনেক গাছের ফল বা বীজ দেখা যায় যেন কাঁটায় ভরা। এইরকম কাঁটাওয়ালা নখওয়ালা ফল সহজেই নানা জানোয়ারের গায়ের চামড়ায় লেগে এক জায়গার ফল আর-এক জায়গায় গিয়ে পড়ে। তাতে জানোয়ারের অসুবিধা খুবই হতে পারে কিন্তু গাছের বংশ বিস্তারের খুব সুবিধা হয়। এক-একটা ফলের কাঁটার সাজ অনাবশ্যকরকমের সাংঘাতিক বলে মনে হয়।
    • সুকুমার রায় ,সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী ,পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর সম্পাদিত ,১৯৬০ (পৃ. ২০৪)
  • আফিমের একটু বেশী মাত্রা চড়াইলে, আমার বোধ হয়, মনুষ্য সকল ফল বিশেষ—মায়াবৃন্তে সংসার-বৃক্ষে ঝুলিয়া রহিয়াছে, পাকিলেই পড়িয়া যাইবে। সকলগুলি পাকিতে পায় না—কতক অকালে ঝড়ে পড়িয়া যায়। কোনটি পোকায় খায়, কোনটিকে পাখিতে ঠোক্‌রায়।
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ,কমলাকান্ত ,১৮৮৫ (পৃ. ১২)
  • নুমানের মায়ের নাম ছিল অঞ্জনা। বানরের স্বভাব যেমন হইয়া থাকে, অঞ্জনার স্বভাবও ছিল অবশ্য তেমনিই। হনুমান কচি খোকা, তাহাকে ফেলিয়া অঞ্জনা বনের ভিতরে গেল, ফল খাইতে। বনে গিয়া সে মনের সুখে গাছে গাছে ফল খাইয়া বেড়াইতে লাগিল, এদিকে খোকা বেচারা যে ক্ষুধায় চ্যাঁচাইতেছে, সে কথা তাহার মনেই হইল না।
    • উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র,পুরাণের গল্প,হনুমানের বাল্যকাল (পৃ. ৬৭৬)
  • উজ্জয়িনী নগরে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বহুকালাবধি তপস্যা করিতেছিলেন। এক দিন তিনি আপন উপাস্য দেবতার নিকট বরস্বরূপ এক অমরফল পাইয়া আনন্দিত মনে গৃহে আসিয়া ব্রাহ্মণীর নিকট কহিলেন দেখ দেবতা তপস্যায় তুষ্ট হইয়া আজি আমাকে এই ফল দিয়াছেন এবং কহিয়াছেন ইহা ভক্ষণ করিলে নর অমর হয়! ব্রাহ্মণী শুনিয়া অতিশয় খেদ করিয়া কহিলেন হায় অমর হইয়া আর কত কাল এ যন্ত্রণা ভোগ করিব। তুমি কি সুখে অমর হইবার অভিলাষ কর বুঝিতে পারি না। বরং এই দণ্ডে মৃত্যু হইলে সংসারের ক্লেশ হইতে পরিত্রাণ হয়।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ,বেতালপঞ্চবিংশতি ,১৮৬৮ (পৃ. ৯)

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা