বাদল সরকার
বাদল সরকার (১৫ জুলাই, ১৯২৫ - ১৩ মে, ২০১১) একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি নাট্যব্যক্তিত্ব। যিনি থার্ড থিয়েটার নামক ভিন্ন ধারার নাটকের প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত। ৭০ দশকের নকশাল আন্দোলনের সময় প্রতিষ্ঠান বিরোধী নাটক রচনার জন্যে তিনি পরিচিত হন, মঞ্চের বাইরে সাধারণ মানুষের ভেতর নাটক'কে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রথম কাজ বাদল সরকারের। তার নিজস্ব নাটক দল শতাব্দী গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে। ভারতে আধুনিক নাট্যকার হিসেবে হাবিব তনভীর, বিজয় তেন্ডুলকর, মোহন রাকেশ এবং গিরিশ কারনাডের পাশাপাশি বাংলায় বাদল সরকারের নাম উচ্চারিত হয়।
উক্তি
সম্পাদনা- “বয়স হয়েছে। বয়স আনন্দকে ভয় করে। সুখকে ভয় করে। স্বস্তি চায়। শান্তি চায় ইন্দ্রজিতের মেঘের আড়াল দরকার এখন।” — বাদল সরকার, এবং ইন্দ্রজিৎ, বাদল সরকার নাটক সমগ্র, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ২৬৪
- “১৯৬১ সালের আদমশুমারির হিসাবে কলকাতার বর্তমান লোকসংখ্যা ২৯,২৭,২৮৯। এর শতকরা প্রায় আড়াই ভাগ গ্র্যাজুয়েট বা আরো উচ্চশিক্ষিত। বিভিন্ন নামে এঁদের পরিচিতি। এঁরা মধ্যবিত্ত, যদিও এঁদের মধ্যে বিত্তের তারতম্য যথেষ্ট। এঁরা বুদ্ধিজীবী যদিও বুদ্ধি জীবিকা হলে অনেকেই অনাহারে মরতো। এঁরা শিক্ষিত, যদি ডিগ্রিকে শিক্ষা বলে ধরে নেওয়া চলে। এঁরা ভদ্রলোক, ছোটলোকদের থেকে নিজেদের পার্থক্যটা বোঝেন বলে। এঁরা অমল বিমল কমল। এবং ইন্দ্রজিৎ।” — বাদল সরকার, এবং ইন্দ্রজিৎ, বাদল সরকার নাটক সমগ্র, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ২৬৫
- “ঘুরছে। ঘুরছে আর ঘুরছে। কিন্তু মরছে না। অবাধ্য একগুঁয়ে স্বপ্নটা মরছে না কিছুতেই। যে জীবনটাকে সত্যি করে দেখে আর স্বপ্ন করে ভাবে- তাকে নিয়ে কি নাটক হয়?” — বাদল সরকার, এবং ইন্দ্রজিৎ, বাদল সরকার নাটক সমগ্র, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ৩০৩
- “পৃথিবীর মধ্যেই আরেকটা পৃথিবী রয়েছে সেটা থিয়েটারের পৃথিবী। সেখানে চোখ রাঙানো কাঁটাতারের বেড়া নেই। চোখ ভরা বেড়া ভাঙার স্বপ্ন।” — বাদল সরকার [১]
- “তুমি জানো এখানেই আমি শেষ,
আমি মৃত আমাতেই!
কেন তবু এতোবার বলো—
আরো চলো, আরো চলো,
এখনো নিষ্কৃতি নেই?’” — বাদল সরকার, এবং ইন্দ্রজিৎ, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ৩০৮
- “কেন তুমি ঘড়ি ধরে অফিসে তে ছুটবে?
কেন তুমি তরকারি বটি দিয়ে কুটবে?
তেল দিতে কেন বাছো অন্যের চরকাই?
সব্বাই করে বলে সব্বাই করে তাই।” — বাদল সরকার, এবং ইন্দ্রজিৎ, বাদল সরকার নাটক সমগ্র, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ২৯১
- “ভালো কমেডি রচনাও একটা জরুরি কাজ, তা "সিরিয়াস" নাটক নয় বলে তাকে অপরাধী করে গৌণ শিল্প হিসেবে দেখা চলবে না।” — বাদল সরকার, "কবিকাহিনী"-র ভূমিকা
- “স্ক্রিপ্টটি অনুসরণ করা হচ্ছিল (অর্থাৎ, এটি একটি ইম্প্রোভাইজড পারফরম্যান্স ছিল না), তবে "অনুসরণ করা" শব্দটি খুব কমই প্রয়োগ করা যেতে পারে। আসলে, চিত্রনাট্যটি মুখোমুখি হচ্ছিল শিল্পীদের। স্ক্রিপ্টের লাইনগুলি পরিবেশন করার সর্বোত্তম উপায় খুঁজে বের করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ছিল প্রতিটি পরিস্থিতি, প্রতিটি লাইনের মধ্য দিয়ে পুরো নাটকের অর্থের মুখোমুখি হওয়া, অন্বেষণ এবং একীভূত করার একটি প্রক্রিয়া। – যতক্ষণ না স্ক্রিপ্টটি আর নাট্যকারের লেখা নয়; বরং, এটি একটি এমন নাটকে পরিণত হয়েছে যা অভিনয়শিল্পীরা নিজেরাই তৈরি করেছেন।” — বাদল সরকার, "বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটার - ডাকবাংলা - ডাকবাংলা - এক ডাকে গোটা বিশ্ব" [২]
- “যদি কেউ কোনো সামাজিক তাগিদে থিয়েটারকে ব্যবহার করতে চান এবং তাঁর কাছে প্রথম বা দ্বিতীয় থিয়েটারের কোনোটাকেই সম্পূর্ণভাবে উপযোগী বলে মনে না হয়, তবে তাঁকে অনুসন্ধান করে একটি বিকল্প থিয়েটার তৈরি করতে হয়। যদি আংশিকভাবেও তা তৈরি হয়, তবে তাকে ‘তৃতীয় থিয়েটার’ নাম দেওয়া অযৌক্তিক বোধ হয় হবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা আমাদের থিয়েটারকে তৃতীয় থিয়েটার (থার্ড থিয়েটার) আখ্যা দিয়েছি।” — বাদল সরকার, [৩]
- “এই থিয়েটারে বাহ্যরূপে কিছু ক্ষেত্রে লোকনাট্যের সঙ্গে মিল আছে, কিন্তু পার্থক্য তার তুলনায় অনেক বেশি বিষয়বস্তুর দিক থেকে তো বটেই, আঙ্গিকেও। তৃতীয় থিয়েটার নমনীয় (ফ্লেক্সিবল), বহনীয় (পোর্টেবল) এবং সেই কারণেই সুলভ (ইনএক্সপেনসিভ)। ফলে তৃতীয় থিয়েটার টাকার উপর নির্ভরশীল নয়। টিকিট না বেচে, কোনোরকম অনুদান গ্রহণ না করে, শুধুমাত্র অভিনয় শেষে দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত দানের উপর ভিত্তি করে এই থিয়েটার চালানো সম্ভব...।” — বাদল সরকার, [৪]
- “তৃতীয় থিয়েটার একটা দর্শন, একটা দৃষ্টিভঙ্গী, একটা ভাবধারা।” — বাদল সরকার, [৫]
- “শেচনারদের সাহায্যে, আমি নতুন থিয়েটারের কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের সাথে যোগাযোগ করেছি, যেমন জুলিয়ান বেক এবং লিভিং থিয়েটারের জুডিথ মালিনা…। দ্য লিভিং থিয়েটারকে আমেরিকায় নতুন থিয়েটারের প্রথম প্রধান সূচনাকারী হিসাবে বিবেচনা করা হয় … লিগ্যাসি অফ কেইন নামে একটি নতুন প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে - অর্থ, প্রেম, যুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে নাটকের একটি সিরিজ, ও তাদের আন্তঃসম্পর্ক এবং মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক। … আমি তখন বুঝতে পারিনি কিন্তু, পরে, আমার থিয়েটারের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল প্রায় ঠিক এমনটাই হওয়া, যদিও আমার দর্শন এবং সেইসাথে আমার থিয়েটার লিভিং থিয়েটারের থেকে যথেষ্ট আলাদা। …” — বাদল সরকার, "বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটার - ডাকবাংলা - ডাকবাংলা - এক ডাকে গোটা বিশ্ব" [৬]
বাদল সরকার সম্পর্কে উক্তি
সম্পাদনা- “তাঁর দর্শনের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক পালাবদল নয়, বরং সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটানো। আর্থরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে ভাবিয়ে দর্শকের চেতনাকে জাগিয়ে সেই লক্ষ্যের পথকে সুগম করে তোলে বাদল সরকারের বিকল্প থিয়েটার।” — [৭]
- “নাটক বিনোদনের মাধ্যম হলেও তা কখনো কখনো হয়ে ওঠে প্রতিবাদের হাতিয়ার। এই কাজটাই করেছিলেন সুধীন্দ্রনাথ সরকার। যিনি থিয়েটার জগতে বাদল সরকার নামে পরিচিত। খানিকটা শখের থিয়েটার থেকে যাত্রা শুরু হলেও পরে তাঁর হাত ধরে জন্ম নেয় এক নাট্য দর্শনের।” — [৮]