বালিগ

ইসলামী আইনবিদ্যার ধারণা

বালিগ ইসলামী আইনগত পরিভাষায়, বালিগ বা বুলুগ (আরবি: بالغ অথবা بُلوغ,অর্থঃ পরিপক্কতা) বা মুকাল্লাফ (আরবি তাকলিফ হতে, অর্থ দ্বায়িত্ববান) বা মুরাহিক (আরবি রাহাক হতে, অর্থঃ ভুল করা, মন্দকাজে তাড়াহুড়া করা) বা মুহতালিম (আরবি ইহতিলাম হতে, অর্থঃ বয়প্রাপ্তি) বলতে সে ব্যক্তিকে বোঝায় যে বয়ঃপ্রাপ্তি বা বয়ঃসন্ধিতে পৌছেছে, এবং ইসলামী আইনের অধীনে সে পূর্ণ দ্বায়িত্ববান।

ইসলামে মানবজীবনকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়, প্রথমটি হল বয়ঃসন্ধি বা বুলুগিয়াতের আগে বা শিশুকাল, যখন মানুষ নিষ্পাপ গণ্য হয় এবং পরবর্তীটি বুলুগিয়াতের পরে বা প্রাপ্তবয়স্ক, যখন থেকে মানুষের উপর ইসলামী বিধান পূর্ণরূপে কার্যকর হয় ও ইহকালীন পরকালীন বিচারযোগ্য হয়। কোন মানুষ বালিগ হবার পূর্বে মারা গেলে স্বর্গবাসী বলে গণ্য হয়, এবং বালিগ দশা শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ শিশুকালে কোন ব্যক্তির দোষত্রুটি ও অপরাধ হাদীস অনুযায়ী অধর্তব্য হিসেবে নেওয়া হয়।

قَالَ یٰقَوۡمِ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ کُنۡتُ عَلٰی بَیِّنَۃٍ مِّنۡ رَّبِّیۡ وَرَزَقَنِیۡ مِنۡہُ رِزۡقًا حَسَنًا ؕ وَمَاۤ اُرِیۡدُ اَنۡ اُخَالِفَکُمۡ اِلٰی مَاۤ اَنۡہٰکُمۡ عَنۡہُ ؕ اِنۡ اُرِیۡدُ اِلَّا الۡاِصۡلَاحَ مَا اسۡتَطَعۡتُ ؕ وَمَا تَوۡفِیۡقِیۡۤ اِلَّا بِاللّٰہِ ؕ عَلَیۡہِ تَوَکَّلۡتُ وَاِلَیۡہِ اُنِیۡبُ
  • শুআইব বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বল তো, আমি যদি আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি বিশেষভাবে নিজের পক্ষ থেকে আমাকে উত্তম রিযক দান করে থাকেন। (তবে তা সত্ত্বেও আমি তোমাদের ভ্রান্ত পথে কেন চলব?)। আমার এমন কোন ইচ্ছা নেই যে, আমি যে সব বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করি, তোমাদের পিছনে গিয়ে নিজেই তা করতে থাকব। নিজ সাধ্যমত সংস্কার করা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য আমার নেই। আর আমি যা-কিছু করতে পারি, তা কেবল আল্লাহর সাহায্যেই পারি। আমি তারই উপর নির্ভর করেছি এবং তারই দিকে (প্রতিটি বিষয়ে) রুজূ হই।
    • (সূরা হুদ, আয়াত-৮৮)
وَقُلِ اعۡمَلُوۡا فَسَیَرَی اللّٰہُ عَمَلَکُمۡ وَرَسُوۡلُہٗ وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ  وَسَتُرَدُّوۡنَ اِلٰی عٰلِمِ الۡغَیۡبِ وَالشَّہَادَۃِ فَیُنَبِّئُکُمۡ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ۚ
  • এবং (তাদেরকে) বল, তোমরা আমল করতে থাক। আল্লাহ তোমাদের আমল দেখবেন এবং তাঁর রাসূল ও (অন্যান্য) মুমিনগণও। অতঃপর তোমাদেরকে সেই সত্তার কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, যিনি গুপ্ত ও প্রকাশ্য সবকিছু জানেন। তারপর তিনি তোমরা যা করতে তা তোমাদেরকে অবহিত করবেন।
    • সূরা আত তাওবাহ্ ( আয়াত নং - ১০৫
  • ধমকি বা কড়া কথার মাধ্যমে হোক আর শরীয়ত অনুমোদিত প্রহারের মাধ্যমেই হোক- সতর্ক করার উত্তম তরীকা হল- সবার সামনে মজলিসে শাস্তি বিধান করা। যাতে অন্যদের জন্যও তা উপদেশ হয়ে যায়।
    • (সূরা নূর, আয়াত-২)
  • আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ধরনের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, (২) নাবালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয়, (৩) পাগল, যতক্ষণ না জ্ঞানসম্পন্ন হয়।
    •  আবু দাউদ, ৪৪০৩, তিরমিযী ১৪২৩, সুনানে নাসায়ী ৩৪৬২,ইবনে মাজাহ ২০৪১
  • আমর ইবনে শুয়াইবের দ্বারা তার পিতা হতে বর্ণিত, তার দাদা বলেছেনঃ আল্লাহর রাসূল বলেছেনঃ তোমাদের শিশুদেরকে সাত বছর বয়সে (ফরজ) নামাজের নির্দেশ দাও, আর দশ বছর বয়স থেকে তাদের প্রহার কর যদি তারা তা না করে, আর তাদেরকে নিজ নিজ বিছানায় আলাদা করে দাও।
    •  আবু দাউদ (৪৯৫)


  • নাফে (রহ.) হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে (সবার সামনে) পেশ করেন, তখন আমি ১৪ বছরের বালক। (ইবনে ওমর বলেন) তিনি [মহানবী সা.)] আমাকে (যুদ্ধে গমনের) অনুমতি দেননি। পরে খন্দকের যুদ্ধে তিনি আমাকে পেশ করেন ও অনুমতি দেন। তখন আমি ১৫ বছরের যুবক। নাফে (রহ.) বলেন, আমি খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজের কাছে গিয়ে এ হাদিস শুনালাম। তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়সের সীমারেখা। তারপর তিনি তাঁর গভর্নরদের লিখিত নির্দেশ পাঠালেন যে (সেনাবাহিনীতে) যাদের বয়স ১৫ হয়েছে, তাদের জন্য যেন ভাতা নির্দিষ্ট করা হয়।
    • (বুখারি, হাদিস নম্বর ২৬৬৪, ৪০৯৭; মুসলিম, হাদিস নম্বর ১৮৬৮)
  1. প্রহার সংখ্যা যেন তিনের অধিক না হয়। (ফাতাওয়া শামী-১/৩৫২)
  2. চেহারা ও নাজুক অঙ্গে যেমন মাথায় পেটে ইত্যাদিতে আঘাত করা হয়। (আদ দুররুল মুখতার-৪/১৩)
  3. যখম হয়ে যায় বা কালো দাগ পড়ে যায় এমন জোরে না হয়। (ফাতাওয়া শামী-৪/৭৯) কারণ, নাবালেগ বাচ্চাকে এই অপরাধে তিনের অধিক প্রহার করা এবং (বালেগ, নাবালেগ সবার ক্ষেত্রেই) মুখমন্ডল ও নাজুক অঙ্গে আঘাত করা হারাম। আর প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রকে সংশোধনের উদ্দেশ্য তার অপরাধের ধরণ অনুযায়ী শরীয়তের দণ্ডবিধির আওতায় এনে বেত ইত্যাদি দ্বারা সীমিত সংখ্যায় (সর্বোচ্চ ১০ প্রহার করা জায়েজ আছে। উল্লেখ্য, বেত হতে হবে গিঁটহীন, সরল ও মাঝারী ধরনের মোটা, যা ব্যাথা পৌঁছাবে কিন্তু দাগ ফেলবে না। (ফাতাওয়া শামী-৪/১৩)
  4. কোনো ধরনের অমানবিক শাস্তি দেয়া-যেমন, হাত-পা বেঁধে পিটানো, পিঠমোড়া করে বেঁধে রাখা, সিলিংয়ে ঝোলানো, কপালে পয়সা দিয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে রাখা ইত্যাদি একবারে হারাম ও নাজায়েজ। (সূরা বাকারা আয়াত: ১৯০, বুখারী শরীফ, হাদীস নং-২৪৪৭, তুহফাতুল উলামা-১/৪৯২)
  5. শাস্তি প্রয়োগের সময় রাগান্বিত অবস্থায় শাস্তি প্রয়োগ করবে না। তবে কৃত্রিম রাগ প্রকাশ করতে পারবে। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৭১৫৮, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-১৭১৭)
  6. কোন বাচ্চার দ্বারা অন্য বাচ্চাকে বা এক ছাত্রের দ্বারা অপর ছাত্রকে শাস্তি দিবে না। এটা শাস্তি প্রদানের ভুল পন্থা। এতে বাচ্চাদের মধ্যে পরস্পরে দুশমনী সৃষ্টি হয়। (তুহফাতুল উলামা-১/৪৯২)
  7. শাস্তির পরিমাণ বেশী হয়ে গেছে আশংকা করলে পরবর্তীতে শাস্তিপ্রাপ্তকে ডেকে আদর করবে এবং কিছু টাকা বা অন্য কিছু হাদিয়া দিয়ে খুশি করে দিবে। (তুহফাতুল উলামা-১/৪৯৭)

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা