* কুণ্ডলিনী জাগেন মানে , মানুষের মধ্যে যত ছোট ছোট হীনভাব আছে, মন সে-সব ছেড়ে বড়র দিকে লক্ষ্য করে । কারো যোগ-যাগ, কারাে বিদ্যা, কারাে ধর্ম, কারাে ভগবান, কারাে বড় বড় কর্ম-যাতে অনেক মানুষের ভালাে হয়—ওই সব দিকে প্রবৃত্তি যায়। জীবের মধ্যে কুণ্ডলিনী জাগার প্রথম লক্ষণই হলাে যে, যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থাকে হীন, কষ্টকর...বলে মনে হয় সে কিছুতেই আর সেই অবস্থায় থাকতে চায় না, বিষম ছটফটানী আসে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। ▼
বামাক্ষ্যাপা বা বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় (জন্ম ১২ ফাল্গুন ১২৪৪, মৃত্যু ২ শ্রাবণ ১৩১৮ ) ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু সাধক ও তান্ত্রিক । তিনি বীরভূম জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ও তারাপীঠে বাস করতেন। তিনি দেবী তারার ভক্ত ছিলেন এবং দেবী তারাকে "বড় মা" বলে ডাকতেন। মন্দিরের কাছে শ্মশানঘাটে সাধনা করতেন। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সমসাময়িক ছিলেন।
== উক্তি ==
▲কুণ্ডলিনী জাগেন মানে , মানুষের মধ্যে যত ছোট ছোট হীনভাব আছে, মন সে-সব ছেড়ে বড়র দিকে লক্ষ্য করে । কারো যোগ-যাগ, কারাে বিদ্যা, কারাে ধর্ম, কারাে ভগবান, কারাে বড় বড় কর্ম-যাতে অনেক মানুষের ভালাে হয়—ওই সব দিকে প্রবৃত্তি যায়। জীবের মধ্যে কুণ্ডলিনী জাগার প্রথম লক্ষণই হলাে যে, যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থাকে হীন, কষ্টকর...বলে মনে হয় সে কিছুতেই আর সেই অবস্থায় থাকতে চায় না, বিষম ছটফটানী আসে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য।
•* শাস্ত্র কি আবার লােক হাসবার উপদেশ দেয়।...মায়ের নামে যে মদ খেয়ে ঢলাঢলি করে, তার নাম করতে নেই। যারা কিছু জানে না,তারাই কেবল শাস্ত্রটাকে নষ্ট করে।
•* এমন মানুষ আছে যে কামশক্তিকে চৈতন্যমুখী করে অনেক উচ্চগতি পেয়েছে। শ্রেষ্ঠ প্রতিভা বিকাশের মূল হলাে ওই শক্তি, যা ক্রমে তােমায় শক্তির কেন্দ্রের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। মা জগদম্বার কোলে নিয়ে ফেলবে। তখন আর কিছু পাওয়ার বাকি থাকবে না। ভােগ-উপভােগগুলাে শেষ হয়ে গেলে,...কারাে কাছে যেতে হয় না। মা তারা আপনিই পর পর যা কিছু প্রয়ােজন, তা সব জানিয়ে দেন ঘরে বসে বসে পাবে সব।
•* মায়া ত্যাগ করবে কি!...মায়া থাকলেই মহামায়ার কাজ ভালাে করে করা যায়।...কারাের অসুখে....তার আরােগ্যের খুব চেষ্টা করলে, কিন্তু সে যদি তাতে না বাঁচে, মরে যায়, তখন অভিভূত না হলেই তাহলেই মায়াকে জয় করা হলাে। তা না হলে একজন কষ্ট পাচ্ছে, তুমি দেখেও যদি মায়াত্যাগ করে চলে যাও, তাহলে তুমি কি মানুষ! আগে তুমি তাকে ভালাে করবার চেষ্টা করবে তারপর যা হওয়ার হবে।...সে কাজ তাে মায়েরই কাজ।
•* (বিদ্যায় উপাধিধারীর) যদি সব সময় (আমি) এটা পাশ (ওটা) পাশই মনে হতে লাগলাে, তাহলে আমি ভগবানের দাস”—এটা মনে হবে কেমন করে? এই পাশ করা, দাস করাটায় বাধা দেয় বলেই তাে বন্ধন।...ওতে কী আছে শুধু অহংকার।...যার মনে তা নয়, তার হলাে; ভালােই হয়।
•* জন্মের হেতু প্রবৃত্তি। প্রবৃত্তির নিবৃত্তিই জন্ম নাশের হেতু। কেন না জীব প্রবৃত্তির বশে কর্ম করে। তার ফলেই তাকে জন্মাতে হয়। কিন্তু প্রবৃত্তির হেতু কী ?..আসক্তি বিদ্বেষ কিংবা প্রমাদ দোষ ছাড়া কোনাে বিষয়ে জীবের প্রবৃত্তি হয় না। এই সব মােহকর বিষয়ও আবার মিথ্যা জ্ঞান থেকে উদ্ভূত। অতএব এই মিথ্যা জ্ঞানের উচ্ছেদ সাধন করতে না পারলে দুঃখের হাত হতে নিস্তার পাওয়ার অন্য উপায় নেই। তত্ত্বজ্ঞানের দ্বারা মিথ্যাজ্ঞানের নাশ হয়। এই তত্ত্বজ্ঞান ভক্তি বিশ্বাসে পাওয়া যায়।
•* কুণ্ডলিনী জাগার সঙ্গে সঙ্গে এমনই একটা শক্তি পাওয়া যায় যে, সব থেকে নিজের উদ্দেশ্যটা ঠিক আলাদা করে নেওয়া যায়, তাতেই মঙ্গল হয়।
•* জপ করলে শীঘ্র সিদ্ধিলাভ করা যায়, বেশি বিদ্যাবুদ্ধি দরকার করে না।...কেবল শুনলে কী হবে? করে দেখ না। তাহলেই জানতে পারবে।
•* “গুরুলাভ” হলেই শক্তি জাগে। সেরকম গুরু হলে শিষ্যের শক্তি তিনিই জাগিয়ে দেবেন।..(আবার) যদি কঠিন বিপদ আপদ আসে, কি কঠিন রােগ হয়, সে অবস্থায় ও কুণ্ডলিনী জেগে ওঠে। কোনাে কোনাে সময় কারাে জীবনে হয়তাে এমন কিছু ঘটে যাতে তার সুখের সীমা থাকে না, এমন সুখ যাতে সংসারের আর কোনাে সুখকে সুখ বলে মনে হয় না। তখনাে ওই শক্তি জেগে ওঠে।...সুখ হােক বা দুঃখ হােক মানুষের জীবনে বা প্রাণে যাতে জোরে ঘা লাগে তাতেই কুণ্ডলিনী জেগে ওঠে। ওই শক্তিটাই সব শক্তির মূল। সেই জন্যই ওকে মূলাধার (স্থিত) শক্তি বলে।
•* সাধনক্ষেত্রে একপ্রকার অবস্থা আছে তা ‘অবধূতের অবস্থা, ব্রহ্মজ্ঞানের সাধনার চরমাবস্থা—সাধারণের চোখে মৃতের অবস্থা। তখন সাধকের আর কিছুই বিচার থাকে না, তখন আর সে নিজেতে থাকে না। তখন সে “তাতে মিলিত হয়ে এক হয়ে গেছে।...“অঘােরীরা, ....আশ্রমে প্রবেশ করেন না, লােকালয়েও আসেন না।....তখন আর তাদের “আমিত্ব থাকে না, তত্ত্বমসি' (ব্রহ্মত্মবােধ) হয়ে গেছে, সে অবস্থার লােককে সহজে চেনা যায় না, তখন তাদের আর বাহ্যিক কোনাে বিষয়ে জ্ঞান থাকে না। তারা তখন দেহ থেকে পৃথক (বােধের) হয়ে গেছেন, দেহের সঙ্গে আর তাদের আত্মবােধক সম্বন্ধ নেই, সুতরাং জগতের সঙ্গেও ও আর তাদের সম্বন্ধ কী? তারা মায়ের সঙ্গে একমাত্র সম্বন্ধ রেখে অন্য সব সম্পর্ক ত্যাগ করেছেন, সে অবস্থা কি সহজে হয়।
•* মা তারা ব্রহ্মও বটে আবার দয়াময়ী ‘মা’ও বটে দুইই। জ্ঞানীর কাছে যিনি নিরাকার, ভক্তের কাছে তিনি সাকার।..তিনি সগুণও বটে, নিগুণও বটে।...এক চৈতন্যে জগৎ চেতন। জড় পদার্থ যিনি, উদ্ভিদেও তিনি, মনুষ্যেও তিনি। সমস্ত সত্য। তবে সেই চৈতন্যকে জানার ইতিবিশেষে-সৃষ্টির ক্রমবিকাশ। মানুষই তাকে ভালােরূপে জানতে পারে।...তারা মা ব্রহ্মের ইচ্ছাশক্তি, আত্মশক্তি অর্থাৎ স্বয়ং ব্রহ্ম ; তারই ইচ্ছাক্রমে এই চরাচর জগতে ত্রিমূর্তিতে সৃষ্টি, পালন ও হরণ হচ্ছে। মহাপ্রলয়ের মহাকাল গর্ভে সকলেই লয়প্রাপ্ত হয়, আবার মহাকাল আমার মায়েতেই লয় হয় বলে আমার মায়ের নাম কালী সকলের আদি বলে তাকে ‘আত্মকালী’ বলে। এ জগৎ মায়ের মূর্তি।
•* সত্যের বলে বলীয়ান হলে তােমাকে কেউ হটাতে পারবে না। সত্যের চেয়ে আর ধর্ম নেই। সত্য রক্ষার জন্য মন তৎপর হলে, সহজে মনের ময়লা দূর হয়ে যায়। মনের পবিত্রতা সাধন হলেই মায়ের (কৃপা) দয়া তার ওপর পড়ে।
•* নিবৃত্তমার্গের মানুষকে মা ঠিক বুঝিয়ে দেন। ওই ভাবের বুদ্ধি থেকেই সংযমের শক্তি আসে। এই সার কথা।
•* সৃষ্টির আদি কারণ পুরুষ-প্রকৃতি। এই পুরুষ, প্রকৃতি আবার সর্বশক্তি স্বরূপিনী মহাবীজ হতে সমুদ্ভুতা ..সেই বীজই হলেন ব্রহ্মা এবং তার শক্তিই হলেন মা আদ্যাকালী, তার ক্ষয় নেই। যার উৎপত্তি আছে। তারই ক্ষয় আছে। তার উৎপত্তি নেই, সীমা নেই, ধ্বংস নেই। তিনি সদাসর্বদা পূর্ণ। তিনিই ভগবান, সর্বকারণের কারণস্বরূপ। এখন সেখানে স্ত্রীত্বও আরােপ করতে পারাে, পুংত্বও আরােপ করতে পারাে। এই জন্য সাধন ক্ষেত্রে কেউ তাকে মা বলে ডাকে। কেউ বা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব বলে ডাকে, আমার বিশ্বাস ‘মা’ বললে সাধনায় যত জোর হয়, এতাে আর কিছুতেই হয় না।
•* ভক্তি বড় দুর্লভ। সংসারের কামনা হৃদয়ে জাগরুক থাকলে তা আসে । তােমার প্রাণ সতত যে ভাবে ভােগ চায়, শরীরের সুস্থতা চায়...ভক্তি কি সে ভাবে চায় ?...(আগে) বেশ করে ঝেড়ে দম মেরে যৌবনটা ভােগ করে এলে ভালাে।...জীবনের রসটা ভালাে করে এলে যােগটা হয়। গুরু না হলে তাে ‘কুণ্ডলিনী’ জাগবে না। সব কিছু সাধনের গােড়ার কথাই হলাে ওই কুণ্ডলিনী ওটি না জাগলে কিছুই হবে না।...কুণ্ডলিনী সবারই আছে। সবারই জাগবে, তবে সাধন করলে, আর সময় হলে। সাধন সময় হলে, সাধন করলে সে জাগবে, না করলে ঘুমবে।
•* কুণ্ডলিনী শক্তি চৈতন্যশক্তিই। সাধারণতঃ একে সুপ্ত চৈতন্যের জাগরণ বলে।....জেগে উঠে তার গতি হয় বিকাশের পথে, অর্থাৎ প্রাণকেন্দ্রের দিকে। সেই কেন্দ্র হলাে প্রজ্ঞাচক্র, সেটা প্রাণ, মন, বুদ্ধি আত্মা সবেরই কেন্দ্র, কি-না অধিষ্ঠান স্থান। মানুষের সব কিছু ধারণার স্থান হলাে ওইখানে।
•* ‘ক’, খ না শিখে কি একেবারে বই পড়তে পারা যায় ? মন্ত্র গ্রহণ করা দরকার। মন-তাের মন্ত্র। তাে মন নানাদিকে ঘুরে-বেড়িয়ে বারফাটকা হয়ে পড়ে সে আর তাের নেই। তাকে তাের নিজের করবার জন্যে, কেবল রাখবার জন্যে ‘মন্ত্র’ নেওয়া দরকার। গুরু-মন্ত্র জপ করতে করতে তাের মন যেমন পর হয়ে গিয়েছিল, সে আবার তাের হয়ে যাবে, মন তোের না হলে কিছু কাজ হবে না।
•* কে কোন্ পথ ধরে যে মাকে পায়, তা বলবার যাে নেই। সে দয়াময়ীর দয়া। তিনি পাষণ্ডকেও উদ্ধার করতে পারেন, আবার ভালােলােককেও পারেন। তবে তন্ত্রের সাধনা কী রকম জানাে? যােগ—ভােগ এক সঙ্গে। কুলাচারে প্রবৃত্ত হলে তাই হয়। (সাধনা) বাহ্যিক করতে করতে আন্তরিক আপনিই হয়।
* == উৎস ==
* সকল উক্তির উৎস "''সাধক বামাক্ষ্যাপার চিরন্তন বাণী''"।
== ব
{{উইকিপিডিয়া}}
|