বিসর্জন (নাটক)
বিসর্জন হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যনাট্য। নাটকটি শুধু জীবপ্রেম ও মানবপ্রেমের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনই নয় বরং ধর্মীয় কুসংস্কার ও গোঁড়ামির ফলে মানবপ্রেমের যে সংকটময় মুহূর্ত রবীন্দ্রনাথ সেটি এখানে কুযুক্তির সঙ্গে যুক্তিবাদিতার চিরন্তন দ্বন্দ্বের মাধ্যমে রূপায়িত করেছেন।
কাহিনী-সংক্ষেপ
সম্পাদনাবিসর্জন নাটকের আখ্যান ত্রিপুরার রাজ পরিবারকে কেন্দ্র করে। সন্তানহীন রাজমহিষীর সন্তান আকাঙ্খা, দেবীর নিকট সন্তান প্রার্থনা এবং পুরোহিত রঘুপতির ষড়যন্ত্র উদ্ভাবন এবং তাতে রাজার কনিষ্ঠ ভ্রাতার যোগদান এসবই কাহিনীর দৃশ্যপট। শেষে অন্ধ ধর্মবিশ্বাস ও কুসংস্কারের রক্তপিপাসার প্রতি জয়সিংহের আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে নাটকের সমাপ্তি।
নাটকটির কাহিনীর উপাদান রাজর্ষি উপন্যাসেরই। ভিখারিণী অপর্ণা নাটকের নতুন আবিষ্কার।
উক্তি
সম্পাদনা- “জয়সিংহ। সৃজনের আগে দেবতা যেমন একা! তাই বটে!
তাই বটে! মনে হয় এ জীবন বড়ো বেশি আছে--যত বড়ো তত শূন্য, তত আবশ্যকহীন।
অপর্ণা। জয়সিংহ, তুমি বুঝি একা! তাই দেখিয়াছি, কাঙাল যে জন তাহারো কাঙাল তুমি। যে তোমার সব নিতে পারে, তারে তুমি খুঁজিতেছ যেন। ভ্রমিতেছ দীনদুঃখী সকলের দ্বারে। এতদিন ভিক্ষা মেগে ফিরিতেছি--কত লোক দেখি, কত মুখপানে চাই, লোকে ভাবে শুধু বুঝি ভিক্ষাতরে--দূর হতে দেয় তাই মুষ্টিভিক্ষা ক্ষুদ্র দয়াভরে। এত দয়া পাই নে কোথাও--যাহা পেয়ে আপনার দৈন্য আর মনে নাহি পড়ে।
জয়সিংহ। যথার্থ যে দাতা, আপনি নামিয়া আসে দানরূপে দরিদ্রের পানে, ভূমিতলে। যেমন আকাশ হতে বৃষ্টিরূপে মেঘ নেমে আসে মরুভূমে--দেবী নেমে আসে মানবী হইয়া, যারে ভালোবাসি তার মুখে। দরিদ্র ও দাতা, দেবতা মানব সমান হইয়া যায়।--ওই আসিছেন মোর গুরুদেব।
অপর্ণা। আমি তবে সরে যাই অন্তরালে। ব্রাহ্মণেরে বড়ো ভয় করি। কী কঠিন তীব্র দৃষ্টি! কঠিন ললাট পাষাণসোপান যেন দেবীমন্দিরের।
জয়সিংহ। কঠিন? কঠিন বটে। বিধাতার মতো। কঠিনতা নিখিলের অটল নির্ভর।” — বিসর্জন, প্রথম অঙ্ক।