ময়ুখ চৌধুরী (আনোয়ারুল আজিম, জন্ম: ২২ অক্টোবর ১৯৫০) একজন বাংলাদেশী কবি, সমালোচক, প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক। তাকে বাংলা কবিতার তিরিশ দশকের ব্যক্তিবাদী ধারার উত্তরাধিকারী মনে করা হয়। তার কাব্যচর্চায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ও সময়কালের অভিছাপ রয়েছে।

১৯৯১ সালে ময়ুখ

উক্তি সম্পাদনা

   

ফুঁ দিয়ে নেভাতে চাও? নেভাও।
ওটা কিন্তু আমিই জ্বালিয়েছি।
একবার ওইদিকে, আরেকবার ওদিকে তাকিয়ে
হঠাৎ হঠাৎ করে ফুঁ দিচ্ছ, দাও।
ধরো, কেউ দেখে ফেললো
এবং জিজ্ঞাসা করলো- কী হয়েছে?
তুমি বলতেও চাইবে, আবার বলতেও পারবে না;
নেভাতেও চাইবে, কিন্তু ফুঁ দেবে খুব আস্তে করে।
- কেন?

"অন্য রকম আগুন"
   

কাচের টুকরো ভেবে বড় বেশি অবজ্ঞা করেছ,
ভুলে গেছ- তাকে কাটতে গেলে
হীরা লাগে।

"বিস্মরণ"
   

মাছেরা ঘুমিয়ে গেলে তাদের দু'চক্ষু জেগে থাকে,
এই দৃশ্য দেখে তুমি অন্ধ পাপ রচনা করেছ।
একবারও তাকালে না তুমি—
অজস্র পাতার চক্ষু নিয়ে
বৃক্ষগুলো চেয়ে থাকে জানালার পর্দাখোলা চোখে।

"হোমারের চোখ" (১৩.১০.২০১১)
   

আদিতমা বলো আর প্রাকৃতিক বলো
মানুষ সাঁতার কাটে শরীরের লবণাক্ত জলে,
পর্বত আরোহী হয় মাংসের স্তবকে।
ঢেউয়ের ওপরে ঢেউ উঠে আসে বিপরীতক্রমে
এখনও মানুষ ঘামে প্রেমে আর শ্রমে,
তারপর ক্লান্তি নামে, শস্যের বিরহী কারুকাজে।

"আদিতমা" (২৩.০২.২০১২)
   

পরীক্ষায় 'ধরা' দিয়ে পাঁচটি বাক্য ঠিকই পারতাম।
তবু, বইমেলা ধরতে শিখিনি।
লেখক হওয়ার স্বপ্ন হয়তো-বা থেকে যাবে মলাটবিহীন।
নাদানের মতো তবু লিখে যাচ্ছি ছাইপাঁশ সব।

"অক্ষমতা" (০৯.০২.২০১৩)
   

সবে মাত্র বয়ঃসন্ধি হলো
এখনও তো পাণ্ডুলিপি তুমি,
যথাযথ প্রকাশিত হওনি এখনো।

"কুদৃষ্টি" (১১.০২.২০১৩)
   

লোহার বাসরঘরে ঢুকেছে মনসা বৃটেনের,
এবার নীলের চাষ, বাজে গান শুধু মরণের।

"স্মৃতি ও স্বপ্নের বাংলাদেশ"
   

প্রহরী টহল দেয়—তিনজন একই মহল্লায়,
তাদের জানার কথা নয়—
কখন আকাশ থেকে খসে গেছে উল্কার হৃদয় ।

"পেণ্ডুলাম"
   

ডান দিকে নয়, ডান দিকে নয়, বাম দিকেতে যাও;
বাম দিকে যাও কাস্তে কোদাল লােহিত পালের নাও।
ডান দিকে সব রক্তচোষা বাদুড় ঝুলে আছে,
বাম দিকে ঐ মুক্তি নাচে শিমুলপলাশ গাছে।

"মিছিল, তুমি বাম দিকে যাও"
   

পিরামিড আয়ােজন গলে যেতে দেরি নেই বেশি-
কল্লোলিত স্বপ্ন দেখে কাঁদে
কালাে বরফের প্রতিবেশী।

"কালো বরফের প্রতিবেশী", পৃ ৬৮, কালো বরফের প্রতিবেশী, ১৯৮৯, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন।
   

তুমি আমার ঊনিশ শতক
তুমি আমার কাব্য
চিন্তা থেকে ছুটি পেলে
তোমায় নিয়ে ভাববো

উৎসর্গপত্রের লেখা; "উনিশ শতকের নবচেতনা ও বাংলা কাব্যের গতিপ্রকৃতি" (১৯৯৬)
   

চন্দ্রমল্লিকার বাড়ি বুকের ভেতরে নিয়ে
পাল্টে দিই সড়কের নাম;
এইভাবে পথে পথে প্রতিটি গলির মােড়ে
অন্য নামে খোঁজ করি ক্রিসেনথিমাম।

"চন্দ্রমল্লিকার বাড়ি", তোমার জানলায় আমি জেগে আছি চন্দ্রমল্লিকা (২০০০), অ্যাডর্ন পাবলিকেশন
   

ঐ রাক্ষসটা গতকাল দুপুরে একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছে।
দুই আর তিন মিলিয়ে মোটে পাঁচ পেগ।
তারপর শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট যাবতীয় সজ্জিত আহার
এমনকি জিন্স প্যান্ট, বেল্টের কঠিন ইস্পাত, ঘোড়ার নিশ্বাস।

"বলছিলাম আয়নাটার কথা", ক্যাঙ্গারুর বুকপকেটে (২০১৬, দিব্য প্রকাশ)
  • আমি সবচেয়ে বেশি লিখে কম ছাপাই। আমার ১২টা বই। তার মধ্যে ১১টা কবিতার, একটা গদ্যের। এখানে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ- সেটা জানি না। সবগুলোই তো ছেলের মতো। কোন ছেলেকে ভালো আর কোনটাকে খারাপ বলবো? আমার বইয়ের মধ্যে তিন থেকে চারটা থাকে সমাজবাদী কবিতা। একটা লেখা আছে এখনও প্রকাশ করিনি। সেটা আজ থেকে ৪০ বছর আগে লিখেছি। আমাদের সমাজে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা নেই। সেটা ৪০ বছর আগে থেকে নেই। আমরা অনেক কথা চাইলেও বলতে পারি না। যেটা বিদেশে বলা যায়।


অর্ধেক রয়েছি জলে, অর্ধেক জালে (১৯৯৯) সম্পাদনা

   

দুধকলাতে পুষেছিলাম মা মনসার বিষ,
ও দেবী তোর সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব অহর্নিশ।

"ঈশ্বরী পাটনীর বংশধর", পৃ ১৭
   

বুকের জমিন বিষ হয়েছে শব্দপোকার বিষে
অতীতপাখি ধান খেয়েছে খাজনা দেবো কিসে!

"শব্দের রানি এবং প্রজা", পৃ ১৮
   

চোখের আড়ালে ছিলো ব্যথাহীন বিরহের চর,
রুমাল খুলতে খুলতে লেগে গেলো তেরোটি বছর।

অর্ধেক রয়েছি জলে, অর্ধেক জালে (১৯৯৯)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা