মেরি কার্পেন্টার

ব্রিটিশ ভারতপ্রেমীক শিক্ষাব্রতী ও সমাজসংস্কারক

মেরি কার্পেন্টার (৩ এপ্রিল ১৮০৭ - ১৪ জুন ১৮৭৭) একজন ভারতপ্রেমিক মহিলা শিক্ষাব্রতী ও সমাজসংস্কারক। স্ত্রী শিক্ষার উন্নতিকল্পে ও কারাসংস্কার আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ছিলেন। পিতার কাছে মেরি মানবসেবার আদর্শে দীক্ষা নেন। ইংল্যান্ডে নিরাশ্রয় শিশু ও অপরাধপ্রবণ শিশুদের সংশোধনের উদ্দেশ্যে একাধিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ২০ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি ছিলেন ব্রিস্টল ওয়ার্কিং এন্ড ভিজিটিং সোসাইটি'র সম্পাদক। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে পিতৃবন্ধু রামমোহন রায়ের সাথে পরিচয় হলে স্ব-ইচ্ছায় তিনি ভারতে আসেন। ভারতে স্ত্রী শিক্ষার উন্নতিতে তিনি অবদান রেখেছেন। ব্রাহ্মসমাজের নেতা কেশবচন্দ্র সেনের সাথে তার যোগাযোগ হয়। মহিলা বিদ্যালয়, অপরাধপ্রবণতা সংশোধনের বিদ্যালয় ইত্যাদি স্থাপনা, কারাগার পরিদর্শনমূলক কাজে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন। বিদ্যালয় নির্মাণ ও কারাসংস্কারের সাথে যুক্ত হয়ে তিনি সারা ভারত পরিদর্শন করেন। মেরি কার্পেন্টারের উল্লেখযোগ্য ইংরাজি গ্রন্থগুলি হলো: লাস্ট ডেইজ ইংল্যান্ড অফ দি রাজা রামমোহন রায়, সিক্স মান্থস ইন ইন্ডিয়া, আওয়ার কনভিক্টস, মেমোয়ার অফ জোসেফ টুকারম্যান, মর্নিং এন্ড ইভনিং মেডিটেশনস প্রভৃতি।

যে সকল বিষয়ে আমার আত্মা পরিতৃপ্ত হয়, আমি সেই সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করিয়া স্থায়ী ভাবে এ পৃথিবীতে রাখিয়া যাইতে চাই।
―মেরি কার্পেন্টার
  • যে সকল বিষয়ে আমার আত্মা পরিতৃপ্ত হয়, আমি সেই সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করিয়া স্থায়ী ভাবে এ পৃথিবীতে রাখিয়া যাইতে চাই। কখন কখন আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি যেন এমন কিছু রাখিয়া যাইতে পারি, যাহা আমার মৃত্যুর পর চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবে। এবং ভবিষ্যদ্বংশীয়গণ তাহা স্মরণ করিবে। কিন্তু, আমার এই শেষ ইচ্ছা, আমার শক্তির অতীত বলিয়া মনে হয়।
    • মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩
  • এ পৃথিবীতে যাঁহাকে আমরা সর্ব্বাপেক্ষা ভালবাসিতাম, তাঁহাকে হারাইয়া যদিও বাহিরে শােক প্রকাশ করিতেছি; কিন্তু ভিতরে শান্তি বিরাজমান। তাঁহাকে এ পৃথিবীতে আর পাইব না সত্য; কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, তাঁহাকে আমরা পবিত্র স্মৃতি এবং স্বর্গীয় প্রেমে পাইয়াছি। প্রভু আমাদিগকে অত্যন্ত আঘাত দিয়াছেন, কিন্তু এই আঘাতের মধ্যে তাঁহার পিতৃহস্ত নিকটতর বােধ হইতেছে। তিনি আঘাত দিয়া আবার পূর্ণ শান্তিও দিয়াছেন। এই বৎসর আমাদের নিকট অতি প্রিয় এবং পবিত্র হউক; কেন না এই বৎসরে আমার প্রিয়তম পিতা পার্থিব দুঃখ, শােক এবং ক্লান্তির হস্ত এড়াইয়া অমর লোকের চিরশান্তি-আশ্রমে গমন করিয়াছেন।
    • মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫-১৬
  • মহৎ কার্য্য সম্পাদন করিবার পথে বহু বাধা, বিঘ্ন বর্তমান আছে সত্য, কিন্তু আমার নিজের অভিজ্ঞতা হইতে বলিতেছি যে, দৃঢ় বিশ্বাস, অক্লান্ত অধ্যবসায় এবং অদম্য উৎসাহ থাকিলে সকল বাধা বিঘ্ন দূরে পলায়ন করিবে, এই কার্য্যে সিদ্ধিলাভ করা যাইবে।
    • মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৮
  • পূর্ব্ব সপ্তাহে আমি ছাত্রদিগকে কয়েকটি ফার্ণ দেখাইয়াছিলাম। তাহারা ইহার সৌন্দর্য্য বুঝিতে পারিয়াছিল; কিন্তু ইহা যে, কি জিনিষ তাহা কেহই বলিতে পারিল না। কেহ বলিল, ইহা তাল গাছ। আমি ফার্ণ সম্বন্ধে তাহাদিগকে যাহা বলিলাম, তাহা তাহারা অতি আগ্রহের সহিত শ্রবণ করিল।
    • মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০
  • আমি প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, এখন হইতে ভারতের স্ত্রীজাতির কল্যাণসাধন করিতে সমগ্র মনঃপ্রাণ নিয়ােগ করিব। ঈশ্বর বল দিন, যেন এই প্রতিজ্ঞা পালন করিতে সমর্থ হই।
    • ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দে ১২ই জানুয়ারী মেরী কার্পেন্টার তাঁর দৈনন্দিন লিপিতে লেখেন, মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৫

মেরি কার্পেন্টারকে নিয়ে উক্তি

সম্পাদনা
  • মেরী কার্পেণ্টার বীরাঙ্গনা। ইহাঁরা কোন বিশেষ দেশের নহেন——ইহাঁরা বিশ্বের অধিবাসিনী;——এই জন্য ইহাঁরা সকল দেশের স্ত্রীলােকেরই পূজনীয়া এবং পুরুষেরও ভক্তির পাত্রী। তথাপি ইহাঁদের কর্ম্মক্ষেত্র অনেকটা পরিমাণে আমাদের অপরিচিত হওয়াতে দেশের সাধারণ রমণীদের নিকট ইহাঁদের দৃষ্টান্ত হৃদয়ঙ্গম হয় না। শিক্ষিতা যাঁহারা আছেন, তাঁহারা এই গ্রন্থের শিক্ষা যদি যথার্থ হৃদয়ে গ্রহণ করেন, তবে উপকার পাইবেন। ইতি ১১ই আষাঢ়, ১৩১৩।শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মেরী কার্পেন্টার বইয়ের বিজ্ঞাপনে মেরী কার্পেণ্টার সম্বন্ধে মন্তব্য, মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা i-ii
  • যিনি দীর্ঘকালব্যাপী অজ্ঞান-তিমিরাচ্ছন্না চিরাবরুদ্ধা ভারত ললনাদিগের দুঃখ-দুর্দ্দশার কাহিনী-শ্রবণে দরবিগলিতাশ্রু হইয়া ভারতে আগমনপূর্ব্বক স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রভুত ক্লেশ স্বীকার করিয়াছিলেন—সেই প্রাতঃস্মরণীয়া পুণ্যশ্লোকা বরণীয়া রমণীর চরিতালােচনা পরম শিক্ষারস্থল। সেই স্বার্থত্যাগিনী পুণ্যবতী মহিলার কর্ম্মময় জীবনের ঘটনাবলী অধ্যয়ন করিতে করিতে শরীর রােমাঞ্চিত হইয়া উঠে। তাঁহার সঙ্কল্পিত ব্রত উদ্যাপন করিতে যে, কি কঠোর পরিশ্রম, অনন্যসাধারণ ত্যাগ-স্বীকার এবং অলোকসামান্য সহিষ্ণুতা অবলম্বন করিতে হইয়াছিল, তাহা বর্ণনাতীত। সেই পূতচরিত্রা, সংসার-সন্ন্যাসিনী, মহীয়সী মহিলার নাম “মেরী কার্পেণ্টার।”
    • মেরি কার্পেন্টার সম্পর্কে কুমুদিনী মিত্র, মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১-২
  • মেরী কার্পেণ্টারের চরিত্রে এই একটি প্রধান গুণ ছিল যে, যাহা একবার মহৎ বলিয়া, সত্য বলিয়া ধরিতেন, শত বাধা, বিপত্তি তাহা হইতে তাঁহাকে বিচলিত করিতে পারিত না। আত্মােৎসর্গের এই ভাবকে সবল করিবার জন্য তিনি এই সময়ে মহৎ জীবনাবলী অধ্যয়ন করেন। ঈশ্বর তাঁহার প্রার্থনা আশ্চর্য্যরূপে পূর্ণ করিলেন এবং জীবনের কার্য্য দেখাইয়া দিলেন।
    • মেরি কার্পেন্টার সম্পর্কে কুমুদিনী বসু, মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা