মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী

বাঙালি লেখক

মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী (১৮৯৬ বাংলা বছর :"২৮ শে ভাদ্র ১৩০৩ "-নভেম্বর ৮, ১৯৫৪) সাতক্ষীরা জেলার বাঁশদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজে বি.এস. ক্লাসের শিক্ষার্থী থাকাকালীন তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন এবং এখানেই লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটান। এরপর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি ‘মাসিক মোহাম্মদী’, ‘দৈনিক মোহাম্মদী’, ‘দৈনিক সেবক’, ‘সাপ্তাহিক সওগাত’, ‘সাপ্তাহিক খাদেম’, ইংরেজী ‘দি মুসলমান’ ইত্যাদি পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : মহামানুষ মুহসীন, মরুভাস্কর, সৈয়দ আহমদ, স্মার্ণানন্দিনী, ছোটদের হযরত মুহম্মদ ইত্যাদি। তিনি খুব পরিচ্ছন্ন চিন্তা ও যুক্তিবাদী মন নিয়ে সবকিছুর বিচার করতেন। সহজ সরল প্রকাশভঙ্গি তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর গদ্যশৈলী ঋজু, রচনা সাবলীল। স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি ১৯৩৫ সালে কলকাতা ছেড়ে বাঁশদহে ফিরে আসেন এবং সেখানেই নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

  • যে দুঃখের মধ্য দিয়া শ্রেষ্ঠ সাহিত্য উৎপন্ন হইয়াছে, সে দুঃখ এবং আমাদের দৈন্যে একটু প্রভেদ আছে বলিয়া মনে হয়। জীবনসংগ্রামের দুঃখদৈন্য এবং অন্ধত্বের বা অন্য-কোনো-অঙ্গহীনতার দুঃখকে একাসনে বসাইতে পারা যায় না। শেষোক্ত দুঃখ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে আনন্দের দুর্বোধ্য নামান্তর। আর প্রথমোক্ত দুঃখের সহিত সংগ্রাম করিয়া যে সকল মনীষী বিশ্বসাহিত্যকে শ্রেষ্ঠ সম্পদে ভূষিত করিয়াছেন, তাঁহাদিগকে যে নিরবচ্ছিন্ন দৈন্যের সহিত যুদ্ধ করিতে হইয়াছে তাহাও ত' ঠিক বলা যায় না।
    • মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, পৃষ্ঠা ২৬
  • ইতিহাসচর্চ্চা করিয়া জাতির গৌরবোজ্জ্বল অতীত, নয়ন সমক্ষে ফুটাইয়া তুলিয়া আমাদের মধ্যে আত্মসম্মানজ্ঞান সৃষ্টি করা মোসলমান সাহিত্যিকের সর্ব্বপ্রধান এবং সর্ব্বপ্রথম কর্তব্য।
    • মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, পৃষ্ঠা ২৬
  • মানুষ স্বভাবতই পাপপ্রবণ; পাপের মোহন মায়া তাহাকে অতি সহজেই আকর্ষণ করে। যখন আদিম মানুষ সকল ব্যথাবেদনার উর্দ্ধে, সমস্ত দুঃখ-ক্লেশের অতীতে আল্লার অনন্ত করুণার সৃষ্টি-নিঃসীম শান্তির নিলয় স্বর্গরাজ্যে বিচরণ করিত, তখনও পাপের আহবান তাহার কাছে আসিয়াছিল। সেদিন সে এক অনাস্বাদিত সুখের প্রলোভনে মজিয়া আপনাকে কালিমালিপ্ত করিয়াছিল।
    • মরুভাস্কর হযরত মোহাম্মদ (সঃ), পাপের রাজ্য, পৃষ্ঠা ৯
  • নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে যে, ইংরেজী শিক্ষিতদের জাতীয়তার হিসাবে যতটা আত্মসম্মানজ্ঞান আছে, মৌলবী সাহেবদের তদপেক্ষা ঢের বেশী আছে।
    • মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, পৃষ্ঠা ৩০
  • মানুষের যিনি স্রষ্টা, সৃষ্টির মহান্ উদ্দেশ্যকে তিনি ব্যর্থ হইতে দেন নাই। জগতে যখনই নীতি ও ধর্ম্মের গ্লানি ঘটিয়াছে, দুর্নীতি ও অধর্ম্ম মানুষের পাপ- প্রবৃত্তির আশ্রয়ে লালিত ও পুষ্ট হইয়া তাহাকে গ্রাস করিতে চাহিয়াছে, তখনই আল্লার অন্তহীন প্রেম-করুণার মূর্তিমান প্রতীকরূপে আলোকের প্রদীপ হাতে লইয়া মহা মানুষেরা আত্মপ্রকাশ করিয়াছেন। শত দুঃখ-লাঞ্ছনা সহিয়া-লৌহের মতো কঠিন, পাহাড়ের মতো দুর্লঙ্ঘ বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করিয়া তাঁহারা দৃষ্টিহারা মানুষের জন্য পথ কাটিয়া চলিয়াছেন। কণ্টকের ঘায়ে চরণ তাঁহাদের ক্ষতবিক্ষত হইয়াছে, অস্ত্রের আঘাতে দেহ তাঁহাদের জর্জরিত হইয়াছে, ঝঞ্চার দাপটে অঙ্গের বসন তাঁহাদের ছিন্নভিন্ন হইয়াছে, কিন্তু হাতের বাতি তাঁহাদের নিবিয়া যায় নাই, উর্দ্ধদেশ হইতে যে আলোক-ধারা নামিয়া আসিয়া তাঁহাদের অন্তরগুলিকে চির-উজ্জ্বল করিয়া রাখিয়াছে, এক মহর্তের জন্যও তাহা পরিমান হয় নাই।
    • ছোটদের হজরত মোহাম্মদ (সঃ), পাপের রাজ্য, পৃষ্ঠা ৯

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা