মোহিতলাল মজুমদার
বাঙালি কবি, সাহিত্য সমালোচক, প্রবন্ধকার
মোহিতলাল মজুমদার (২৬ অক্টোবর ১৮৮৮ – ২৬ জুলাই ১৯৫২) বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সাহিত্য সমালোচক। প্রথম জীবনে কবিতা লিখলেও পরবর্তী জীবনে সাহিত্যসমালোচক হিসেবেই তিনি খ্যাতি লাভ করেন। মোহিতলালের সাহিত্যচর্চার শুরু মানসী পত্রিকার মাধ্যমে। পরে ভারতী ও শনিবারের চিঠিসহ অন্যান্য পত্র-পত্রিকায়ও তিনি নিয়মিত লিখতেন। বাংলা ছন্দ ও অলঙ্কার বিষয়ে তাঁর বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হলো দেবেন্দ্র-মঙ্গল, স্বপন-পসারী, বিস্মরণী, স্মরগরল, হেমন্ত-গোধূলি, ছন্দ চতুর্দশী, কাব্য মঞ্জুষা প্রভৃতি। তিনি অনেকগুলি প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেছেন।
উক্তি
সম্পাদনা- নব বর্ষের পুণ্য-বাসরে কাল-বৈশাখী আসে,
হোক্ সে ভীষণ, ভয় ভূলে যাই অদ্ভুত উল্লাসে।
ঝড় বিদ্যুৎ বজ্রের ধ্বনি—
দুয়ার-জানালা উঠে ঝন্ঝনি’,
আকাশ ভাঙিয়া পড়ে বুঝি, তবু প্রাণ ভরে আশ্বাসে।- কাল-বৈশাখী, মোহিতলাল-কাব্যসম্ভার -মোহিতলাল মজুমদার, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- আষাঢ় ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ৩৪৪
- বাঙালীর ছন্দবোধ জন্মিয়াছে রবীন্দ্র-যুগে; তাহার কারণ, তিনিই সর্ব্বপ্রথম বাংলা ভাষার সর্ব্ববিধ ধ্বনিকে অফুরন্ত ছন্দ-লীলায় লীলায়িত করিয়া বাঙালীর কানে ছন্দ-রস ও মনে ছন্দ-জিজ্ঞাসার উদ্রেক করিয়াছেন।
- বাংলা ছন্দের সাধারণ পরিচয়, বাংলা কবিতার ছন্দ- মোহিতলাল মজুমদার, দ্বিতীয় সংস্করণ ,প্রকাশসাল- আশ্বিন ১৩৫৫ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ৫
- অসির ফলকে অশনি ঝলকে—গলে’ যায় যত ত্রিশুল-চুড়া!
ভৈরব রবে মুর্চ্ছিত ধরা, আকাশের ছাদ হয় বা গুঁড়া!
পূজারী অথির, দেবতা বধির—ঘণ্টার রোলে জাগে না আর!
অরাতির দাপে আরতি ফুরায়—নাম শুনে হয় বুক অসাড়!
—কালাপাহাড়!- কালাপাহাড়, মোহিতলাল-কাব্যসম্ভার -মোহিতলাল মজুমদার, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- আষাঢ় ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১৩৬
- আমার মনের গহন বনে
পা’ টিপে বেড়ায় কোন্ উদাসিনী
নারী-অপ্সরী সঙ্গোপনে!
ফুলেরি ছায়ায় বসে তার দুই চরণ মেলি’,
বিজন-নিভৃতে মাথা হ’তে দেয় ঘোম্টা ফেলি’,- মানস-লক্ষ্মী, মোহিতলাল-কাব্যসম্ভার -মোহিতলাল মজুমদার, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- আষাঢ় ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১২০
- বাংলা অমিত্রাক্ষরের ভিত্তি যেমন পয়ার, তেমনই মিল্টনের ছন্দের ভিত্তিও—ইংরেজী পয়ার—
- বাংলা পয়ার ও মধুস্দনের অমিত্রাক্ষর, বাংলা কবিতার ছন্দ- মোহিতলাল মজুমদার, দ্বিতীয় সংস্করণ ,প্রকাশসাল- আশ্বিন ১৩৫৫ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১০৯
- মনে হ’ল, আজ জীবনের যত নিরাশার পরাভব—
রঙীন এ রাতি—বাসনার বাতি যত আছে জ্বালো সব!
তৃণভূমি ’পরে বসিয়া ক্ষণেক হেরিলাম নিশানাথে,
বুঝিনু আবার বসন্ত এল পঞ্চমী-চাঁদ সাথে।- বসন্ত-আগমনী, মোহিতলাল-কাব্যসম্ভার -মোহিতলাল মজুমদার, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- আষাঢ় ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ২৪
- বিয়ের ফুলটি ফোটার আগেই ‘গায়ে হলুদ’ যার,
সবাই তারে ফেলবে চিনে’—শিউলি যে নাম তার।
ডাল্টি কিছু উঁচুই বটে, কুলীন বাপের মেয়ে,—
স্বভাবটি তাঁর রুক্ষ যেমন, গরিব সবার চেয়ে।- শিউলির বিয়ে, কাব্য-মঞ্জুষা- মোহিতলাল মজুমদার, পঞ্চম সংস্করণ, প্রকাশসাল- বৈশাখ ১৩৬৫ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১৩৭
- দানবের দল হাসে খল খল, হেরি’ তার পরাজয়—
যে-প্রেম তাহারা ভুঞ্জিতে নারে, তারে তারা পাপ কয়
যে-মরণ তারা মরিতে জানে না, তাহারে গরল বলে!
জানে না, গরল নীল হ’য়ে আছে মৃত্যুজিতের গলে!- পাপ, মোহিতলাল-কাব্যসম্ভার -মোহিতলাল মজুমদার, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- আষাঢ় ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ৪৬
মোহিতলাল মজুমদার সম্পর্কে উক্তি
সম্পাদনা- মোহিতলাল মজুমদারের কবিতায় অনেক বিচিত্র ধরণের নারীচিত্র দেখা যায়। তাঁহার “উর্ব্বশী পুরূরবা” এবং “নুরজাহান” উল্লেখযোগ্য।
- অনুরূপা দেবী, সাহিত্যে নারী চরিত্র, সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৮৭
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় মোহিতলাল মজুমদার সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।