রফিক আজাদ (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ - ১২ মার্চ ২০১৬) ছিলেন বাংলাদেশী আধুনিক কবি। সাহিত্যিক জীবনে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কবির স্মৃতি (লেখক শিবির) পুরস্কার (১৯৭৭), আলাওল পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদকসহ (২০১৩) বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
চুনিয়া নৈরাশ্যবাদী নয়, চুনিয়া তো মনে প্রাণে
নিশিদিন আশার পিদিম জ্বেলে রাখে।
চুনিয়া বিশ্বাস করে :
শেষাবধি মানুষেরা হিংসা-দ্বেষ ভুলে
পরস্পর সৎ প্রতিবেশী হবে।
"চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া", চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া (১৯৭৭)
•
বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই,
পড়েনি ব্যাকরণ, পড়েনি মূল বই!
বালক জানে না তো সময় প্রতিকূল,
সাঁতার না শিখে সে সাগরে ঝাঁপ দেয়,
জলের চোরাস্রোত গোপনে বয়ে যায়,
বালক ভুল করে নেমেছে ভুল জলে!
•
...নদীকে তোমরা জানো ভাঙচুরের সম্রাট!
দু’কূল-ছাপানো তার আবেগে উদ্বেল
পলি তোমাদের জীবনে কি এনে দ্যায়নি কখনো
শস্যের সম্ভার?’
"জীবন একটি নদীর নাম"
•
মূলতোমার কথা ভেবে রক্তে ঢেউ ওঠে-
তোমাকে সর্বদা ভাবতে ভালো লাগে,
আমার পথজুড়ে তোমারই আনাগোনা
তোমাকে মনে এলে রক্তে আজও ওঠে...।
"তোমার কথা ভেবে"
•
...সারাটা দুনিয়া জুড়ে
মানুষের এত দুঃখ-এর থেকে পরিত্রাণ নেই?
বৃষ্টির প্রপাত শুনে, গাছের সবুজে চোখ রেখে
শিশুদের গালে চুমো খেয়ে আমরা পারি না ফের
এই দুঃখী গ্রহটির অন্তর্গত অসুখ সারাতে?
আজ রাতে সে তার চুলের গুচ্ছ
ছড়িয়েছে ঐ লোকটার/ বিছানো বালিশে;
ব্যাটাচ্ছেলে ওকে কালো-টাকায় কিনেছে!
একদিন ঐ মালাকে আমি দেখে নেব। ঐ শুয়োরের বাচ্চাকে আমি ঠিক দেখে নেব।/আজ থেকে মালপানি জিন্দাবাদ,
আজ থেকে আর ভালোমানুষ থাকব না;
আমি শালা সব কাজ ছেড়েছুড়ে টাকাই কামাবো,
দিলটা পাথর করে দিনরাত শুধু মালপানিই কামাবো,
ঐ শুয়োরের বাচ্চাকে একদিন/ দেখে নেব, ঠিক দেখে নেব।
"মালপানি জিন্দাবাদ", সশস্ত্র সুন্দর, ১৯৮২।
•
প্রকৃতি বিভক্ত হন তিন সত্তায়ঃ
উত্তাপে, গোলাপে আর নারীর সৌরভে।।
"সীমাবদ্ধ জলে, সীমিত সবুজে" ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
ঈশ্বর হলেন অগ্নি, যিনি এ হৃদয়ে থাকেন।
"ঈশ্বর"
•
এটম বোমার থেকে দু’বছর বড় এই— আমি
ধ্বংস ও শান্তির মধ্যে মেরু-দূর প্রভেদ মানি না।
ক্ষীয়মাণ মূল্যবোধ, সভ্যতার সমূহ সংকটে/ আমি কি উদ্বিগ্ন খুব?-উদ্বিগ্নতা আমাকে সাজে কি?
রাষ্ট্র, রাষ্ট্রনীতি, নেতা, নানাবিধ আইনকানুন
নিয়ন্ত্রিত করে যাচ্ছে যথারীতি প্রকাশ্য জীবন
ভিতর-মহল জেঁকে বসে আছে লাল বর্ণমালা।