শরীর
শরীর বলতে জীবিত প্রাণীকূল বিশেষত কোন ব্যক্তির শারীরিক কাঠামোকে বোঝায়। প্রায়শঃই এটি সক্ষমতা, বাহ্যিক আত্মপ্রকাশ, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এবং মৃত্যুর সাথে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। শরীর নিয়ে গবেষণাকর্ম শারীরবিদ্যা বা শারীরবৃত্ত নামে পরিচিত। প্রাণীদেহের একাংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশকেই শরীর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এমন অনেক প্রাণী রয়েছে যেগুলো এককোষী থেকেই সম্পূর্ণ প্রাণীদেহের মর্যাদা উপভোগ করে। স্লাইম মোল্ড তেমনিই একটি এককোষী প্রাণী যা বৃষ্টিস্নাত বনাঞ্চলের স্যাঁতস্যাতে মেঝেতে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় বাস করে। সে দৃষ্টিকোণে শরীর বলতে বহুকোষবিশিষ্ট প্রাণীর দেহকে বুঝায়। মৃত ব্যক্তির শরীরকে শবদেহ বা ক্যাড্যাভার বলে। মেরুদণ্ডবিশিষ্ট প্রাণী এবং পোকামাকড়ের মৃতদেহকে কখনো কখনো গলিত পচামাংসবিশিষ্ট শরীর বা কারকেসেস নামে অভিহিত করা হয়। কর্তন বা জবাইকৃত প্রাণীর মৃত শরীরের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে যা ব্যবহার করা হয় তা মাংস নামে পরিচিত।
উক্তি
সম্পাদনা- পরিশ্রম না করিলে স্বাস্থ্যরক্ষা ও সুখলাভ হয় না; কিন্তু সাতিশয় পরিশ্রম করাও অবিধেয়; যেহেতু তদ্দ্বারা শরীর অত্যন্ত দুর্ব্বল হইয়া যায় ও রোগ জন্মে। প্রতিদিন দশ ঘণ্টা পরিশ্রম করিলে স্বাস্থ্য ভঙ্গের সম্ভাবনা নাই!
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ)- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সম্পাদনা- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সজনীকান্ত দাস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৮৮
- শিশুকে মা যে বেষ্টন করে থাকেন সে কেবল তাঁর বাহু দিয়ে তাঁর শরীর দিয়ে নয়, তাঁর অনুভূতি দিয়ে। সেইটিই হচ্ছে মাতার ভাব, সেই তাঁর মাতৃত্ব।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৯
- শরীর এত বিশ্রী রকমের ভালো ছিল যে, ইস্কুল পালাবার ঝোঁক যখন হয়রান করে দিত তখনো শরীরে কোনোরকম জুলুমের জোরেও ব্যামো ঘটাতে পারতুম না। জুতো জলে ভিজিয়ে বেড়ালুম সারাদিন, সর্দি হল না। কার্তিক মাসে খোলা ছাদে শুয়েছি— চুল জামা গেছে ভিজে— গলার মধ্যে একটু খুস্-খুসুনি কাশিরও সাড়া পাওয়া যায় নি।
- এক গর্দ্দভ, সিংহের চর্ম্মে সর্ব্ব শরীর আবৃত করিয়া, মনে ভাবিল, অতঃপর আমায় সকলেই সিংহ মনে করিবেক, কেহই গর্দ্দভ বলিয়া বুঝিতে পারিবেক না; অতএব, আজ অবধি, আমি এই বনের সিংহের ন্যায়, আধিপত্য করিব। এই স্থির করিয়া, কোনও জন্তুকে সম্মুখে দেখিলেই, সে চীৎকার ও লম্ফ ঝম্প করিরা ভয় দেখায়। নির্বোধ জন্তুরা, তাহাকে সিংহ মনে করিয়া, ভয়ে পলায়ন করে। এক দিবস, এক শৃগালকে ঐ রূপে ভয় দেখাইবাতে, সে কহিল, অরে গর্দ্দভ! আমার কাছে তোর ধূর্ত্ততা খাটিবেক না। আমি যদি তোর স্বর না চিনিতাম, তাহা হইলে, সিংহ ভাবিয়া ভয় পাইতাম।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কথামালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রকাশক- সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটরি, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৮৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৯-৭০
- আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে;
মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন,
′মানুষ′ হইতে হবে —এই তার পণ,
বিপদ আসিলে কাছে, হও আগুয়ান,
নাই কি শরীরে তবে রক্ত মাংস প্রাণ?
হাত পা সবারি আছে, মিছে কেন ভয়,
চেতনা রয়েছে যায়, সে কি পড়ে রয়?- কুসুমকুমারী দাশ, কুসুমকুমারী দাসের কবিতা - সুমিতা চক্রবর্তী সম্পাদিত, প্রকাশক- ভারবি, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ : আশ্বিন ১৪০৮, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা ৩৩
- বাড়ির শরীরে ক্ষয় ধরলে পেঁচা আসে। ইমারতের দেহে বটবৃক্ষ জাগলে পেঁচা সেখানে বাসস্থান খোঁজে। লালবাড়ির গায়ে শ্যাওলার সবুজ স্তর জমলে পেঁচা উঁকি দেয় চিলেকোঠায়। আঁধার রাতে অশরীরী আত্মার পিছু নেয় পেঁচা, সহাবস্থানের ইচ্ছেয়। পার্ক স্ট্রীটের কত ফিরিঙ্গি বাড়িতেই ঘর বেঁধেছিল রাতের এই কারিগর।
- রামকুমার মুখোপাধ্যায়, পেঁচা গল্প, গল্পসমগ্র, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, ২০১৩ খৃস্টাব্দ, পৃষ্ঠা ৩৯২