শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

ভারতীয় বাঙালি লেখক, কথাসাহিত্যিক এবং ঔপন্যাসিক

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ - ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮) একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। তিনি বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  • সত্যের স্থান বুকের মধ্যে, মুখের মধ্যে নয়। কেবল মুখ দিয়ে বার হয়েছে বলেই কোন জিনিস কখনো সত্য হয়ে উঠে না। তবুও তাকেই যারা সকলের অগ্রে, সকলের ঊর্ধ্বে স্থাপন করতে চায়, তারা সত্যকে ভালবাসে বলেই করে না, তারা সত্যভাষণের দম্ভকেই ভালবাসে বলে করে।
  • যাহাকে ভালবাসি, সে যদি ভালো না বাসে, এমনকি ঘৃণা ও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়, কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছি, সেইখানে ভুল ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন। পূর্বের টা ব্যাথাই দেয়, কিন্তু শেষের টা ব্যাথাও দেয়, অপমানও করে। আবার এ ব্যাথার প্রতিকার নাই, এ অপমানের নালিশ নাই। যাহার ভালবাসিবার কথা নহে, সে ভালবাসে না — ইহাতে কাহার ও কি বলিবার থাকে! তাই, এই না থাকাতে লাঞ্ছনা এত বেশী বাজে— বেদনার হেতু খুঁজিয়া মিলে না বলিয়াই ব্যাখ্যা এমন অসহ্য হইয়া পড়ে।
  • যাকে তাকে গছিয়ে দেওয়ার নামই বিবাহ নয়! মনের মিল না হলে বিবাহ করাই ভুল।
  • আজকের দিনে আমার সবচেয়ে মনে পড়ে এর কতটুকুতে আমার আপন দাবি, আর কত বড় এর ঋণ। ঋণ কি শুধু পূর্ববর্তী পূজনীয় সাহিত্যচার্য্যগণনের কাছেই? সংসারে যারা শুধু দিলে, পেলে না কিছুই, যারা বঞ্চিত, যারা দুর্বল, উৎপীড়িত, মানুষ হয়েও মানুষের চোখের জলের কখনো হিসেব নিলে না, নিরুপায় দুঃখময় জীবনে যারা কোনওদিন ভেবেই পেলে না, সমস্ত থেকেও কেন তাদের কিছুতেই অধিকার নেই, তাদের কাছেও কি ঋণ আমার কম? তাদের বেদনাই দিলে আমার মুখ খুলে, এরাই পাঠালে আমাকে মানুষের কাছে মানুষের নালিশ জানাতে। —৫৭তম জন্মদিনে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষণ
  • যে কাল আজও আসেনি, সেই অনাগত ভবিষ্যতে আমার লেখার মূল্য থাকবে, কি থাকবে না, সে আমার চিন্তার অতীত। আমার বর্তমানের সত্য উপলব্ধি যদি ভবিষ্যতের সত্য উপলব্ধির সঙ্গে এক হয়ে মিলতে না পারে, পথ তাকে তো ছাড়তেই হবে। তার আয়ুষ্কাল যদি শেষ হয়ে যায়, সে শুধু এর জন্যই যাবে যে, আরো বৃহৎ, আরো সুন্দর আরো পরিপূর্ণ সাহিত্যের সৃষ্টিকার্যে তার কঙ্কালের প্রয়োজন হয়েছে। ক্ষোভ না করে বরঞ্চ এই প্রার্থনাই জানাবো যে, আমাদের দেশে আমার ভাষায় এত বড় সাহিত্যই জন্ম লাভ করুক যার তুলনায় আমার লেখা যেন একদিন অকিঞ্চিৎকর হয়ে যেতে পারে।
  • সাহিত্যের নানা কাজের মধ্যে একটা কাজ হইতেছে জাতিকে গঠন করা, সকল দিক দিয়া তাহাকে উন্নত করা। Idea পশ্চিমবঙ্গের কি উত্তরের, ইহা বড় কথা নয়, স্বদেশের কি বিদেশের তাহাও বড় কথা নয়, বড় কথা ইহা ভাষার ও জাতির কল্যাণ কর কিনা।
  • সত্য আর সাহিত্য আলাদা। সত্য সাহিত্যের বনেদ, কিন্তু সেইটাই সব নয়। সাহিত্যে একটা শিল্প- যেমন করলে সাজালে মানুষের মনে সেটা একটা দাগ ফেলতে পারে, যা অনেকদিন আকে। — লাহোরের ভাষণ
  • মানুষ যখন সাহিত্যরচনায় নিবিষ্টচিত্ত সে ঠিক হিন্দুও নয়, মুসলমানও নয়, তখন সে তার সর্ব্বজন পরিচিত, ‘আমি’-টাকে বহু দূরে অতিক্রম করে যায়, নইলে তার সাহিত্য সাধনা ব্যর্থ হয়।
  • সহজ বুদ্ধিই দুনিয়ায় সবচেয়ে অসহজ।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা