শহীদ কাদরী

একুশে পদক প্রাপ্ত কবি

শহীদ কাদরী (১৪ আগস্ট ১৯৪২ - ২৮ আগস্ট ২০১৬) ছিলেন বাংলাদেশী কবি ও লেখক। বাংলা কবিতায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১১ সালে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন।

উত্তরাধিকার (১৯৬৭)

সম্পাদনা
   

লোকগুলো বদলে যায়, বদলে যায়, বদলে যায়
রাত্রে চাঁদ এলে ।।

"ইন্দ্রজাল"
   

বিকলাঙ্গ, পঙ্গু যারা, নষ্টভাগ্য পিতৃমাতৃহীন,-
কাদায়, জলে, ঝরে নড়ে কেবল একসার অসুস্থ স্পন্দন
তাদের শুশ্রূষা তোমরা, তোমাদের মুমূর্ষু স্তন!

"আলোকিত গণিকাবৃন্দ"

তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা (১৯৭৪)

সম্পাদনা
   

আমি এমন ব্যবস্থা করবো
নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী
কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে
নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।

"তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা"। তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা। ১৯৭৪। 
   

ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে
শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন
আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে
গণচুম্বনের ভয়ে
হন্তারকের হাত থেকে পড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা।

"তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা"

কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮)

সম্পাদনা
   

“পাথর তোমার ভেতরেও উদ্বৃত্ত
রয়েছে আর এক নৃত্য”

"কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই", কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮)
   

এসো, আমরা দু'জন একসঙ্গে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি
কোনো এক গ্রীষ্মের জোনাক-জ্বলা রাত্রে, চমৎকার হাওয়ায়!
কিন্তু তার আগে এই সভ্যতার সকল ধীমান প্রতিনিধিবৃন্দ যদি
হঠাৎ বাষ্পের মতো উবে যান তবেই গোলাপ, টিয়ে
এবং তাদের আত্মীয়স্বজন ঢের বেশি উপকার পাবে!

কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮)
   

যুদ্ধ তো বারবার কবিতার পালাবদল ঘটায়—বাস্তব বিপজ্জনক
হ'লে পরাবাস্তবের উৎসবও শুরু হ'য়ে যেতে পারে,
সহজেই এরকম হয়, হ'য়ে থাকে

অন্যান্য

সম্পাদনা
   

হে নবীনা,
আমার তামাটে তিক্ত ওষ্ঠের ও অবয়বের জন্যে
যেসব চুম্বন জমে উঠবে সংগোপনে,
তাদের ওপর থেকে আমার স্বত্বাধিকার আমি ফিরিয়ে নিলাম
আমাকে শীতের হাওয়ার হাতে ছেড়ে দাও,
স্বনির্বাচিত এই নির্বাসনে
নেকড়ের দঙ্গলের মতো আমাকে ছিঁড়ে খাক বরফে জ্বলতে থাকা ঋতু
শুধু তুমি,
আমার সংরক্ট চুম্বনের অন্তর্লীন আগুনগুলোকে
পৌঁছে দাও শ্রাবণে আষাঢ়ে রোরুদ্যমান
বিব্রত বাংলায়,
বজ্রে, বজ্রে, বেজে উঠুক নতজানু স্বদেশ আমার।

"আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও", আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও (২০০৯)
   

অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো
দেখতে, এবং ওরা মানুষই
ওরা বাংলা মানুষ
এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো কথা আমি আর শুনবো না কোনোদিন।

"হন্তারকদের প্রতি"
   

বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা
মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,
কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা
ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...

"সঙ্গতি"
   

রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো?
পররাষ্ট্রনীতির বদলে প্রেম, মন্ত্রীর বদলে কবি
মাইক্রোফোনের বদলে বিহ্বল বকুলের ঘ্রাণ?

"রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন"
   

এবং আরো একজনের চোখে দেখি
লক্ষ সূর্যের আসা-যাওয়া এবং সেও একা
আমারই আত্মার মত
প্রাঙ্গণের তরুণ কুকুর!

"এই শীতে"
   

রাষ্ট্র বললেই মনে পড়ে স্বাধীনতা দিবসের
সাঁজোয়া বাহিনী,
রাষ্ট্র বললেই মনে পড়ে রেসকোর্সের কাঁটাতার,
কারফিউ, ১৪৪-ধারা,

"রাষ্ট্র মানেই লেফ্ট্ রাইট লেফ্ট্"
   

স্বাধীনতার সৈনিক যেমন ঊরুতে স্টেনগান বেঁধে নেয়,
কিম্বা সমত্মর্পণে গ্রেনেড নিয়ে হাঁটে,
তেমনি আমিও
গুপ্তচর দৃষ্টির আড়ালে অতি যত্নে লুকিয়ে রেখেছি
যেন তুমি নিদারুণ বিস্ফোরণের প্রতিশ্রম্নতিতে
খুব বিপজ্জনক হ’য়ে আছো।

"কবিতা, অক্ষম অস্ত্র আমার"
   

চায়ের ধূসর কাপের মতো রেসেত্মারাঁয়-রেসেত্মারাঁয়
অনেক ঘুরলাম।
এই লোহা, তামা, পিতল ও পাথরের মধ্যে
আর কতদিন?

"এবার আমি"
   

একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে,
রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎসণার মতো
হেলায়-ফেলায় পড়ে থাকে
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না….

"কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না"
   

ব্ল্যাক আউট অমান্য করে তুমি দিগমেত্ম জ্বেলে দিলে
বিদ্রোহী পূর্ণিমা।…..

"ব্ল্যাক আউটের পূর্ণিমায়"
   

পৃথিবীকে মায়াবী নদীর তীরে এক দেশ বলে
আমারও হয়েছে মনে’
কিন্তু আমি
সেখানে আমার গাঁ কিংবা শহর
কিংবা বাড়ি কিছুই এখনো খুঁজে পেলাম না।

"নিরুদ্দেশ যাত্রা"
  • কবিতাই আরাধ্য আমার, মানি; এবং বিব্রত তার জন্য কম কিছু নই।
  • অসংখ্য লেখা আমার মাথায় এসেছে কিন্তু আমি লিখিনি এই ভেবে যে এরা আউটস্ট্যান্ডিং কিছু না, এগুলো লিখে কিছু হবে না।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা