শাহরিয়ার কবির

বাংলাদেশী সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মানবাধিকার কর্মী

শাহরিয়ার কবির (জন্ম: ২০ নভেম্বর ১৯৫০) একজন বাংলাদেশী লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি মানবাধিকার, সাম্যবাদ, মৌলবাদ, ইতিহাস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ৭০টিরও বেশি বই লিখেছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

শাহরিয়ার কবির
  • নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রকাশিত সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ে ‘শরিফার গল্প’ নামে একটি রচনা রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা দেওয়ার জন্য। পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ এবং তথ্যগত ত্রুটি সম্পর্কে বিভিন্ন দৈনিকের কিছু প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে, যা নতুন কোনও বিষয় নয়। এ ধরনের ত্রুটি ধরা পড়লে তা সংশোধন করা যায় এবং করা উচিতও। পাঠ্যপুস্তকে এ ধরনের ত্রুটি কখনও কাম্য নয়। কিন্তু গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক সেমিনারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব আলোচনার এক পর্যায়ে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের উপরোক্ত রচনাটি ছিঁড়ে ফেলে গণমাধ্যমের সামনে যে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, এটাকে হালকাভাবে দেখার কোনও কারণ নেই। তার এই কর্মকাণ্ডের পর ঝিম মেরে বসে থাকা হেফাজতিরা এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সংগঠন মাঠে নেমে পড়েছে।
  • বিএনপির আমলে সংখ্যালঘুরা নির্মম হামলার শিকার হয়। আওয়ামী লীগ পাঠ্যপুস্তকে অসাম্প্রদায়িক লেখকদের লেখা বাদ দিয়েছে। আওয়ামী লীগের বিকল্প কেউ নেই। আওয়ামী লীগ মন্দের ভালো। এবারের নির্বাচনের প্রশাসন সতর্ক ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের নিবার্চন ছিল। তারপরও এবার সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা হয়েছে।
  • দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে এবং ভারতের কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে বলে যুক্তি দেয় বিএনপি-জামায়াত। যদি তা-ই হয়, তবে তো একই যুক্তিতে চীনের পণ্যও বর্জনের দাবি তোলা দরকার। কারণ, চীনও তো নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে।চীনের রাষ্ট্রদূত বারবার বিবৃতি দিয়েছেন নির্বাচনে আমেরিকার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। রাশিয়াও তো নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। তাহলে তো রাশিয়ার পণ্যও বর্জন করা দরকার।
  • সংবিধানের ৭ এর ক ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে- রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে না। আপনি যদি ৫৬০টা মডেল মসজিদ বানান, কেন আপনি ৫৬টা মন্দির প্যাগোডা গির্জা বানাবেন না। আর তাই যদি করতে হয় তাহলে সমস্ত অর্থ সেখানে আপনি ব্যয় করুন।
  • দুর্নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগকে তুলোধুনো করতে পারেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এর চেয়ে বড় বিপদ আমাদের সামনে আছে। দুর্নীতির বাইরে এই উপমহাদেশে একটা দেশের নাম বলুন, যেখানে দুর্নীতি নেই। ভারত পাকিস্তান কি দুর্নীতির বাইরে?
  • আপনারা আবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কী জবাব দেবেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে? আপনাদের বলতে হবে, যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম রক্ষা করিনি। ৬২টি নির্বাচনী এলাকা (সংসদীয় আসন) আছে, যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সিদ্ধান্ত নেয় যে আওয়ামী লীগকে ভোট দেব না—এসব নির্বাচনী এলাকা থেকে আপনারা নির্বাচিত হতে পারবেন না। আপনাদের স্বার্থে, আওয়ামী লীগের স্বার্থে বলছি, সংখ্যালঘু স্বার্থকে আলাদা করে দেখবেন না।
    • দ্বাদশ নির্বাচন আওয়ামী লিগের উদ্দেশেপ্রথম আলো
  • পাকিস্তানি ধর্মীয় আদর্শের কবরে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল, কিন্তু ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর পাকিস্তানপন্থীরা ক্ষমতা দখল করে এবং বাংলাদেশের মূল সংবিধানে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে বৈষম্যমূলক ধারা (যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি) সন্নিবেশিত করে। ... বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দুই সামরিক শাসক। জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এইচ এম এরশাদ দেশের অসাম্প্রদায়িক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক আদর্শের শেকড় উপড়ে ফেলেন। তারা সংবিধান পরিবর্তন করে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের সেবা করে হিন্দু, মারমা, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মগ, হাজং প্রভৃতি আদিবাসী নৃগোষ্ঠীর সমান অধিকারের ধারাটি বিলুপ্ত করে। ১৯৭২ সালে রচিত মূল সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১২ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রনীতির মূলনীতি নামক অনুচ্ছেদে 'ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা' সন্নিবেশিত করা হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার সংবিধানের এই অংশটি সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলে এবং এভাবেই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়।
    • ওয়াই রোজারের 'ইন্ডোক্ট্রিনেটিং মাইন্ডস: পলিটিক্স অব এডুকেশন ইন বাংলাদেশ' গ্রন্থে শাহরিয়ার কবিরের উদ্ধৃতি। ২০০৪ পৃষ্ঠা ৬৯ এফ এফ কবির, শাহরিয়ার। "বাংলাদেশে মানবাধিকার: সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা", কানাডার মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ আগস্ট ২০০২ তারিখে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে মানবাধিকার সম্মেলন
  • ২০০১ সালের অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনের পরপরই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে প্রচণ্ড নিপীড়ন শুরু হয়েছিল তা এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ অভিমত ব্যক্ত করেছে যে নির্বাচনটি তাদের কাছে 'অগ্রহণযোগ্য' ছিল কারণ বিরোধী সমর্থক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভয় দেখানোসহ ভোট নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।.... বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের বিষয়টি অনেক মাত্রায় রয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক নৃশংসতার ঘটনাগুলো যদি আমরা গ্রহণ করি এবং এগুলোকে শুধু নির্বাচন বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করি তাহলে তা সুষ্ঠু ও সঠিক হবে না। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সমস্যার ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো আমাদের জানতে হবে।
    • ওয়াই রোজারের 'ইন্ডোক্ট্রিনেটিং মাইন্ডস: পলিটিক্স অব এডুকেশন ইন বাংলাদেশ' গ্রন্থে শাহরিয়ার কবিরের উদ্ধৃতি। ২০০৪ পৃষ্ঠা ১২২

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা