শিবনাথ শাস্ত্রী

শিক্ষাবীদ, সমাজসংস্কারক, দার্শনিক, লেখক, অনুবাদক, ঐতিহাসিক, ব্রাহ্মসমাজ

শিবনাথ শাস্ত্রী (৩১ জানুয়ারি ১৮৪৭ – ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯১৯) ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক, দার্শনিক, লেখক, অনুবাদক, ঐতিহাসিক ও ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি কেশবচন্দ্র সেনের ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন। নারী শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে তিনি মেয়েদের নীতিবিদ্যালয় স্থাপন করেন। ব্রাহ্ম সমাজের পক্ষে ভারতের প্রথম কিশোর মাসিক পত্রিকা সখা তার উদ্যোগেই প্রকাশিত হয়। তিনি কাব্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি ধারায় অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ এবং আত্মচরিত তার গবেষণামূলক আকরগ্রন্থ। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনা হলো: নির্বাসিতের বিলাপ, পুষ্পমালা , মেজ বৌ, হিমাদ্রি-কুসুম, পুষ্পাঞ্জলি, যুগান্তর, রামমোহন রায়, ধর্মজীবন, বিধবার ছেলে প্রভৃতি।

মানব যে আপনার দুষ্কৃতির জন্য অনুতাপ করিতে পারে ইহাই মানবের বিশেষত্ব ও মহত্ত্ব; এ যাতনা অন্য জীবের নাই।।
—শিবনাথ শাস্ত্রী
  • মানব-হৃদয়ের স্বাভাবিক গতি এই যে, অনুরাগ পাইলেই অনুরাগ দিয়া থাকে; ভৃত্যকে সাধুতা দ্বারা পরাজিত করিয়া স্নেহসূত্র দ্বারা বদ্ধ করিতে পারা প্রভুর প্রকৃত গৌরব।
    • প্রভৃ-ভৃত্যের সম্বন্ধ, গৃহ-ধর্ম্ম - শিবনাথ শাস্ত্রী, যষ্ঠ সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৮
  • পাপিগণে আজ কাঁদিছে চরণে, এসো এসো দয়াল,
    হও হে উদয়, জাগায়ে হৃদয়, কাটিয়ে মোহজাল।
    তোমার প্রকাশে, পাপ-তাপ নাশে, ঘুচায় যাতনা;
    মরণ-মাঝারে জীবন সঞ্চারে, আনে হে চেতনা।
    • ব্রহ্মসঙ্গীত, ত্রয়োদশ সংস্করণ, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ, গান সংখ্যা ৭১৩, পৃষ্ঠা ৩৪৪
  • প্রকৃত পক্ষে রাজা রামমোহন রায় এ দেশীয় দ্বারা লিখিত বাঙ্গালা সংবাদপত্রের পথ প্রদর্শক। তিনিই ১৮২১ সালে “সংবাদ কৌমুদী” নামে সাপ্তাহিক পত্র প্রকাশ করেন। ঐ “কৌমুদীতে জ্ঞাতব্য বিষয় অনেক থাকিত। ইহা লোকশিক্ষার একটী প্রধান উপায় স্বরূপ ছিল।
    • রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ- শিবনাথ শাস্ত্রী, দশম পরিচ্ছেদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫২-২৫৩
  • নীল জলে পড়ি আভা ইন্দ্ৰধনু-প্রায়;
    বিচিত্র বাখানে কেবা! শাখীর শাখায়
    মৃদু মৃদু কাঁপাইয়৷ বহে সমীরণ;
    প্রণমিছে রবিপদে যেন তরুগণ।
    • নির্বাসিতের বিলাপ, প্রথম কাণ্ড, নির্বাসিতের বিলাপ - শিবনাথ শাস্ত্রী, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫
  • ভালবাসা যেমন নারীর স্বভাব, বিশ্বাস করাও তেমনি তাঁহার প্রকৃতি।
    • বিবাহ, গৃহ-ধর্ম্ম - শিবনাথ শাস্ত্রী, যষ্ঠ সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯
  • আনন্দে উড়ায়ে চল প্রেমময়ের নিশান রে;
    পরান খুলিয়া গাও প্রেমময়ের নাম রে।
    স্বর্গ হতে এল ধরায় মধুর আহ্বান রে,
    আয় পাপী, আয় পাপী, পাবি পরিত্রাণ রে।
    • ব্রহ্মসঙ্গীত, ত্রয়োদশ সংস্করণ, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ, গান সংখ্যা ৭১৩, পৃষ্ঠা ৫৬৬
  • ১৮৪৪ সালে দুইটী ঘটনা ঘটে। প্রথম, বর্ত্তমান মেটকাফ হলের নির্ম্মাণকার্য্য শেষ হইলে পাবলিক লাইব্রেরী সেই ভবনে উঠিয়া আসে। নব্যবঙ্গের অন্যতম নেতা প্যারীচাঁদ মিত্র মহাশয় উহার লাইব্রেরীয়ান নিযুক্ত হওয়াতে লাইব্রেরিটী রামগোপাল ঘোষ, তারাচাঁদ চক্রবর্ত্তী, রামতনু লাহিড়ী প্রভৃতি যুবকদলের একটা সম্মিলন ও জ্ঞানালোচনার ক্ষেত্র হইয়া উঠে।
    • রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ- শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭১
  • দক্ষিণ করেতে কেতু ধরিয়া উজ্জ্বল,
    পূর্ণ শশধর-করে করে ঝল মল;
    বাম কক্ষে সুশাণিত দোলে তরবার;
    চন্দ্রের আলোকে শোভা অপূর্ব্ব তাহার।
    • নির্বাসিতের বিলাপ, চতুৰ্থ কাণ্ড, নির্বাসিতের বিলাপ - শিবনাথ শাস্ত্রী, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৯
  • প্রভু, মঙ্গল-শান্তি সুধাময় হে, ভব-সেতু মহা-মহিমালয় হে।
    জয় বিঘ্নবিনাশন পাবন হে, জয় পূর্ণ পবিত্র কৃপাঘন হে।
    জয় পুণ্য-নিধে গুণসাগর হে, আজি এ দুজনে করুণা কর হে॥
    • ব্রহ্মসঙ্গীত, ত্রয়োদশ সংস্করণ, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ, গান সংখ্যা ৯০৭, পৃষ্ঠা ৪৫১
  • মানব যে আপনার দুষ্কৃতির জন্য অনুতাপ করিতে পারে ইহাই মানবের বিশেষত্ব ও মহত্ত্ব; এ যাতনা অন্য জীবের নাই।
    • অভয়-ধাম, ধর্ম্মজীবন - শিবনাথ শাস্ত্রী, প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫০

শিবনাথ শাস্ত্রীকে নিয়ে উক্তি

সম্পাদনা
  • কেবল বাহিরের পথ বাঁধায় নহে, সেই অন্তরের উদ্বোধনে যাঁহারা ব্রাহ্মসমাজকে সাহায্য করিয়াছেন শিবনাথ তাঁহাদের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি।
  • তাঁর ধর্ম্ম কেবল ভক্তির ধর্ম্ম ছিল না, ভক্তির সহিত বিশুদ্ধ জীবন এবং সেবাই তাঁহার ধর্ম্ম ছিল।—তিনি সেই ধর্ম্ম বাক্যে ও জীবনে প্রচার করিতেন।
    • কামিনী রায়, পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর জীবন-চরিত- হেমলতা দেবী, প্রথম সংস্করণ, চতুৰ্বিংশ অধ্যায়, প্রকাশসাল- ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৩৪
  • শিবনাথের প্রকৃতির একটি লক্ষণ বিশেষ করিয়া চোখে পড়ে; সেটি তাঁহার প্রবল মানব বৎসলতা।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা