শেখ ওয়াজেদ আলি (৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯০ - ১০ জুন ১৯৫১) ছিলেন একজন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক। তিনি সমকালীন মুসলমান সাহিত্যিকদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত একজন লেখক হিসাবে প্রতিপত্তি লাভ করেন। ১৮৯০ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাশ করেন এবং ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করে প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এস. ওয়াজেদ আলির প্রথম প্রবন্ধ ‘অতীতের বোঝা’। তিনি ছিলেন একজন উদার ও প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব। মননশীল চেতনা, ইতিহাস ও নীতিজ্ঞান এবং সত্য ও সুন্দরের মহিমায় তাঁর সাহিত্যকর্ম সমৃদ্ধ। তাঁর স্বপ্ন ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। লেখক হিসেবে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা ও ভ্রমণকাহিনী রচনায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে: প্রবন্ধ জীবনের শিল্প (১৯৪১), প্রাচ্য ও প্রতীচ্য (১৯৪৩), ভবিষ্যতের বাঙালী (১৯৪৩), প্রভৃতি। ১৯৫১ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

উক্তি সম্পাদনা

  • মানুষ অন্ধকার থেকে আলোয় আসবার চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু এখনও সে অন্ধকারেই আছে! সঙ্কীর্ণতার বাঁধ অতিক্রম করবার চেষ্টা সে করছে বটে, কিন্তু এখনও সঙ্কীর্ণতা তার অন্তরকে দৃঢ়ভাবে ঘিরে আছে! পরের ছেলেকে সে ভালবাসার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু নিজের ছেলেকেই সে বেশী ভালবাসে; বিদেশীর সঙ্গে, বিজাতীয়ের সঙ্গে সে সহানুভূতি দেখায় বটে, কিন্তু স্বদেশীদের প্রতি এবং স্বজাতীয়দের প্রতিই তার অন্তরের টান বেশী; সর্ব্বধর্ম্মের এবং সর্পক্রষ্টির প্রতি সে উদারতা দেখাবার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু নিজের কৃষ্টি এবং ধৰ্ম্মকেই সে 'অন্তরের সঙ্গে ভালবাসে। মানুষের মনের এই স্বাভাবিক সঙ্কীর্ণতা থেকেই বিভিন্ন দলের, সম্প্রদায়ের এবং গণ্ডীর সৃষ্টি হয়। আর তাই থেকে আসে যত দ্বন্দ্ব আর কলহ, যুদ্ধ আর বিগ্রহ, বিরোধ আর অশান্তি!
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ৮
  • রাষ্ট্রের ভিত্তি হচ্ছে জাতীয়তা।
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ৮
  • মূঢ়তা ঘুচাতে না পারলে মানুষের গোঁড়ামি ঘুচবে না, এবং গোঁড়ামি না ঘুচালে মানুষের মন দ্বেষ-হিংসার কণ্টকে পরিপূর্ণ থাকবেই
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ২০
  • স্বার্থপরতা আর পরার্থপরতা-এ দু'টিই মানুষের প্রকৃতিগত। আর একে ভিত্তি ক'রেই তার সমাজজীবন গঠিত হয়েছে, তার নীতিবাদ রচিত হয়েছে।
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ২১
  • মানুষ শিল্পের জন্য নয়, শিল্প হচ্ছে মানুষের জন্য। মানুষ সাহিত্যের জন্য নয়, সাহিত্য হচ্ছে মানুষের জন্য।
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, জীবনের শিল্প
  • যাঁরা প্রকৃত ধাম্মিক, তাঁরা ধর্ম্মের শাশ্বত অংশের উপরেই ধর্মসাধনার ভিত্তি স্থাপন করেন; আর ধর্ম্মের আপেক্ষিক অংশগুলিকে যুগ এবং স্থানোপযোগী ক'রে নেবার চেষ্টা করেন। পক্ষান্তরে, যাঁরা ধর্ম্মের প্রকৃত আদর্শের সঙ্গে সংস্রব রাখেন না, অথচ ধৰ্ম্মকে উপলক্ষ করে ধর্ম্মেতর আদর্শের অনুসরণ করতে চান, তাঁরা ধর্ম্মের শাশ্বত এবং চিরন্তন আদর্শগুলিকে বর্জন করেন, এবং তার আপেক্ষিক অংশগুলিকে অবলম্বন করে প্রকৃত ধাম্মিক এবং সত্যসাধকদের বিরুদ্ধে তুমুল সংগ্রাম উপস্থিত করেন।
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ৩০
  • ব্যক্তির চরিত্র উন্নত না হলে, সমষ্টির কখনও মঙ্গল হতে পারে না। জনসাধারণের মনে এবং জীবনে উচ্চ আদর্শ সুপ্রতিষ্ঠিত না হলে, সমষ্টির জীবনে কখনও সুখ, শান্তি এবং সুশৃঙ্খলা আসতে পারে না -রাষ্ট্রের বাইরের আকার যাই হোক না কেন।
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ৩১
  • রাষ্ট্রের মঙ্গলামঙ্গল যতটা শাসনপ্রণালীর উপর নির্ভর করে, তার চেয়ে অনেক বেশী নির্ভর করে রাষ্ট্রনায়কদের এবং নাগরিকদের চরিত্রের এবং দায়িত্বজ্ঞানের উপর।
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ৩৪
  • সাহিত্যের কাজ হচ্ছে - উদার সার্বজনীন মনোভাবের সৃষ্টি করা।
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ৫৫
  • একমাত্র ভবিষ্যতমুখী জাতিই প্রাণচঞ্চল হয়।
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ৮৫
  • আমাদের দেশে যে এ আদর্শ এখন পর্য্যন্ত মিলনের এবং আত্মীয়তার গ্রন্থিকে যথেষ্টরূপে মজবুত ক'রে বাঁধতে পারেনি, তার কারণ আদর্শের দুর্ব্বলতা নয়, তার কারণ হ'চ্ছে আমাদের ঐকান্তিকতার অভাব। ব্যক্তিগত, বংশগত এবং সম্প্রদায়গত স্বার্থ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের বিপথে নিয়ে যায়, আর তার ফলে যুগাদর্শের আহ্বান ব্যর্থ হয়।
    • শেখ ওয়াজেদ আলী, ভবিষ্যতের বাঙালী, পৃষ্ঠা ১০৬

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা