সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ভারতীয় বাংলাভাষার লেখক
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ – ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষার জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাংলা ভাষায় এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পঙ্ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "নীললোহিত", "সনাতন পাঠক", "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
উক্তি
সম্পাদনা- বাঙালিরা ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করে, ধর্মসংস্কারের ব্যাপারে কেউ কিছু বললেই গেল গেল রব তোলে, কিন্তু এই বাঙ্গালিরাই ব্যক্তি জীবনে ধর্মের প্রায় কোন নির্দেশই মানে না। সততা, পবিত্রতা, সেবা এই সব ব্যাপারে তারা প্রায় অধার্মিক। বাঙালিরা খুব পরের সমালোচনা করে, পরনিন্দা করে কিন্তু আত্মসমালোচনা করে না। বাইরে খুব উদার মত প্রচার করে, নিজের পরিবারের মধ্যে অতি রক্ষনশীল। খবরের কাগজে তর্জন গর্জন দেখলে মনে হবে খুব সাহসী, আসলে অত্যন্ত ভীরু।
- "প্রথম আলো"- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, দ্বিতীয় পর্ব, প্রকাশক- আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- , পৃষ্ঠা ৪১৮
- আমি মনে প্রাণে কোনও ধর্মেই বিশ্বাসী নই, তবু সমাজ আমাকে হিন্দু বলে চিহ্নিত করবে।
- "আমি কি বাঙালি?" - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। পত্র ভারতী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৬৬
- মানুষই মানুষকে বাঁচায়, মানুষই মানুষকে মারে। মানুষই হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, আবার মানুষই এই বিভেদের রেখা মুছে ফেলতেও পারে।
- প্রথম আলো- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, দ্বিতীয় পর্ব, প্রকাশক- আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- , পৃষ্ঠা ৪০১
- যারা প্রথম কোনও সংস্কার ভাঙে, তাদের অনেক নিন্দাও সহ্য করতে হয়। যারা নতুন কোনও পথ দেখায়, তাদের তৈরি থাকতে হয় পথের অনেক বাধার জন্য। যারা মুক্তি অভিলাষী, তাদের খুলতে হয় অনেক বন্ধ দ্বার। আবার এ কথাও ঠিক, যারা পথিকৃৎ, তারা অত্যুৎসাহে কিছুটা বাড়াবাড়িও করে ফেলে, অনেক সময় তাদের স্বাধীন চেতনা ঔদ্ধত্যের মতন মনে হয়, প্রকট নতুনত্ব মনে হয় দৃষ্টিকটু।
- প্রথম আলো ১ উপন্যাস থেকে। [১]
- দেশপ্রেম হলো দেশের উন্নতি এবং মানবিক প্রগতির প্রতি অবিচল আদর্শ।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় [২] [উৎস প্রয়োজন]
- আত্মগোপন করতে গিয়ে কিছুদিন পর অনেকে আত্মপরিচয়টাই ভুলে যায়।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। পূর্ব-পশ্চিম। [উৎস প্রয়োজন]
- পিতৃশ্রাদ্ধ করতে প্রতাপ শেষবার গিয়েছিলেন মালখানগরে। প্রতাপ শক্ত চরিত্রের মানুষ, সবাই তাকে তেজস্বী পুরুষ হিসেবে মানে, কিন্তু সেবার তিনি খুব কান্নাকাটি করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেল, মাটি থেকে উপড়ে তোলা হলো এক বর্ধিষ্ণু বৃক্ষের শিকড়। পূর্ববাংলার এই নদীময় প্রান্তর, এই মিষ্টি বাতাস, খেজুর রসের স্বাদের মতন ভোর, ঠাকুমার গল্পের আমেজমাখা সন্ধ্যা, এসব আর দেখা হবে না। এরপর থেকে কলকাতায় ভাড়াটে বাড়ির অন্ধকার ঘুপচি ঘরে চির নির্বাসন।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। "পূর্ব-পশ্চিম (অখন্ড)", প্রকাশক- আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, পৃষ্ঠা- ১১ [৩]
- বাল্যকালে একটা ছিল বিষম সুখ
তখন কোনো বাল্যকালের স্মৃতি ছিল না।- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কবিতাসমগ্র ২, "স্মৃতি"-কবিতার অংশ [৪]
- কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতন মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে দুটো চারটে নিয়ম কানুন ভেঙে ফেলি পায়ের তলায় আছড়ে ফেলি মাথার মুকুট যাদের পায়ের তলায় আছি, তাদের মাথায় চড়ে বসি কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতই ইচ্ছে করে অবহেলায় ধর্মতলায় দিন দুপুরে পথের মধ্যে হিসি করি।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। "ইচ্ছে" কবিতার অংশ[৫]
- কৃতজ্ঞতা একটা বিষম বোঝা। অনেকেই সারাজীবন এ বোঝা বহনে অক্ষম। তাই এই বোঝা ঝেড়ে ফেলে উপকারী ব্যক্তির শত্রুতা করে তারা স্বস্তি বোধ করে।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। "সেই সময়" [৬]
- সাহিত্য একটা তীব্র নেশা, রক্তের সঙ্গে মিশে যায়, যাকে একবার এই নেশা ধরে, তার আর অন্য কোনো গতি থাকে না। আবার এ কথাও হয়তো ঠিক, অনেক লেখুই এক এক সময় এই নেশা থেকে মুক্তি পেতে চায়! সাহিত্য সৃষ্টিতে খ্যাতি-কীর্তি-অর্থের সম্ভাবনা আছে বটে, কিন্তু তার জন্য লেখককে ভেতরে ভেতরে কত কষ্ট যে সহ্য করতে হয়! এক একসময় রক্ত ক্ষরণের মধ্যে মিশে যায় শব্দের বিষ, তা অন্যদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। "পায়ের তলায় সর্ষে-২য় খণ্ড"[৭]
- কারোর আসার কথা ছিল না কেউ আসেনি তবু কেন মন খারাপ হয়?
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কবিতাসমগ্র ৩, "স্বপ্নের অন্তর্গত" কবিতার অংশ [৮]
- আমি এমনভাবে পা ফেলি যেন মাটির বুকেও আঘাত না লাগে, আমার তো কারুকে দুঃখ দেবার কথা নয়।
- ঘটনার চেয়ে রটনার রূপ অনেক বেশী বিচিত্র এবং গতিবেগও প্রচন্ড।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। "সেই সময়" উপন্যাস থেকে [১১][উৎস প্রয়োজন]
- অন্ধকার শ্মশানে ভীরু ভয় পায় সাধক সেখানে সিদ্ধি লাভ করে।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কবিতাসমগ্র ১, "সেই সব স্বপ্ন" কবিতার অংশ। [১২]
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।