সেলিনা হোসেন

বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক

সেলিনা হোসেন (জন্ম ১৪ জুন ১৯৪৭) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক। তাঁর উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংকটের সামগ্রিকতা। বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তাঁর লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার গল্প উপন্যাস ইংরেজি, রুশ, মেলে এবং কানাড়ি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন সেলিনা হোসেন। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তাঁকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়

  • আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার দিকটি ভালো লাগে। যখন বাঙালি সংস্কৃতিকে সবাই বড় করে তোলে তখন গর্ববোধ করি। আর খারাপ লাগে গণমানুষের প্রতি অবহেলা।
  • প্রেম একবার নয়, দু'বার এসেছে জীবনে।
  • আসলে এ সময়টাকে আমি গৃহবন্দি বলব না, বলব সুস্থ থাকার একটা প্রক্রিয়া।
    • করোনা অতিমারীর বিষয়ে; ২৯ মে ২০২০-এ প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: দৈনিক যুগান্তর
  • বাংলা একাডেমিতে প্রায় ৪০ বছর চাকরি করলাম। অনেককে বলেছি, আমাদের সাহিত্যের অনুবাদের ব্যবস্থা করুন। সাতচল্লিশ–পরবর্তী সময়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদদের সাহিত্য অনুবাদ করতে পারলে তা হতো বড় এক অর্জন। আমরা সেই জায়গা ধারণ করিনি।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতা নিজে ইংরেজিতে অনুবাদ করে “গীতাঞ্জলি” বই বের করেছিলেন। বইটি জমা দিয়ে তিনি ১৯১৩ সালে পান নোবেল পুরস্কার। তাঁর পরে বাংলা সাহিত্যের আর কেউ এ ধরনের বড় কাজ করতে পারেননি।
  • এখনও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। এখনও দুর্নীতির ঘেরাটোপে জর্জরিত আমরা। তবে অর্থনৈতিকভাবে এখন দরিদ্র মানুষের থালায় ভাত আছে, এটা একটা স্বপ্নের জায়গা। আমার মনে হয়, সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি দিয়ে দেশ শাসন হলে মানুষের সব মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। আমাদের সরকারপ্রধান চেষ্টা করছেন, মেয়েদের শিক্ষিত করতে, বাল্যবিয়ে রোধ করতে, এসব দিক খুবই ইতিবাচক। আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রা আনছে, এগুলো বিশাল এক উন্নতির দিক। শুধু সরকারের পদক্ষেপে হবে না, প্রত্যেককে নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। করোনার সময় এত বাল্যবিয়ে হলো, আমাদের মেয়েরা কেন প্রতিবাদ করল না, কেন এগিয়ে এসে বাবা-মাকে বলল না, ‘এখনই আমাকে বিয়ে দিও না, আমার পড়ালেখা করতে হবে।’
    • ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: সময়ের আলো
  • নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, মানুষের সঙ্গে মিশে, ঘুরে বেরিয়ে এবং বই পড়ে অভিজ্ঞতার সঞ্চয় করে লিখতে হবে।
    • ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: সময়ের আলো
  • এতো বড় দায়িত্ব পেয়ে আমি চিন্তাগ্রস্ত। একই সঙ্গে কাজ নিয়েও ভাবছি। কীভাবে সুন্দর করে গুরুদায়িত্ব পালন করা যায়। সবমিলিয়ে আমি আনন্দিত।
    • ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ বাংলা একাডেমির সভাপতি পদে দায়িত্ব পেয়ে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: দ্য ডেইলি স্টার,
  • লেখক তার সাহিত্যে রাষ্ট্র, সমাজ, মানুষ এবং দেশজ প্রকৃতির মধ্যে চাপিয়ে দিয়ে থাকেন, সে শেকড় যায় গভীর থেকে গভীরে। কথাসাহিত্যে সেই শেকড় প্রোথিত করা সহজ। ছড়ানো ছিটানো বর্ণনা, অসংখ্য চরিত্র মিলে এই ক্যানভাস হয়ে ওঠে অনেক বড়। যা কবিতায় সহজ নয়।
  • মানব-মানবীর সম্পর্ক, নারী-পুরুষ তথা মা-মেয়ে, মা-বাবা, বাবা-ছেলে প্রভৃতি সম্পর্কের বিশ্লেষণ এবং অভিজ্ঞতা বিচিত্র প্রভাব রেখেছে আমার লেখাজোকায়, আর এসব সম্পর্ক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নতুন নতুন গল্প লিখেছি আমি।
    • সেলিনা হোসেন: জীবনজয়ী কথাশিল্পী, জাগোনিউজ২৪
  • তখন সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম। ভেবেছিলাম এই রাজনীতি মানুষকে ভাত, আশ্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের সুব্যবস্থা দেবে। মানুষের জীবন হবে স্বস্তি ও শান্তির। কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষে রাজনীতির পাঠ শেষ করে দিই, শুধু লেখালেখির জগৎ ধরে রাখব বলে। রাজনীতির যে আদর্শগত দিক শিক্ষাজীবনে গ্রহণ করেছিলাম তার প্রয়োগ ঘটিয়েছি লেখায়। তবে সরাসরি নয়। সৃষ্টি কাহিনি, চরিত্র, ঘটনা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে। মানবিক মূল্যবোধের জায়গা সমুন্নত রেখে। বেঁচে থাকার মাত্রার সমতার বিন্যাস ঘটিয়ে। মানুষের ভালোমন্দের বোধকে রাষ্ট্র সম্পর্কের জায়গায় রেখে আমি রাজনীতির নানা দিকের প্রতিফলন ঘটাতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা জনসাধারণের জীবন রাজনীতি বিচ্ছিন্ন নয়। রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করে মানুষ এটাই আমার গভীর বিশ্বাস।
  • আমি পরিবার ও সমাজের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি। কারণ, লেখার জগৎ নিয়ে আমার আচরণে কোনো বাড়াবাড়ি ছিল না। রাজশাহী থেকে ঢাকার বিভিন্ন কাগজে লেখা ডাকে পাঠাতাম। ছাপা না হলে মনে করতাম, আমার লেখাটি ভালো হয়নি, সে জন্য ছাপেনি। আবার আর একটি পাঠাতাম। তখন হয়তো দেখতাম যে ছাপা হয়েছে। এভাবে আমি নিজেকে তৈরি করেছি। চেষ্টা করছি অনবরত। বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতায় বাধাগ্রস্ত আমি হইনি। আমি খুব সৌভাগ্যবান এ কারণে যে লেখালেখির ক্ষেত্রে পরিবারকে আমি শুধু পাশেই পাইনি, আমার লড়াইয়েও পরিবারের মানুষজন আমাকে সঙ্গ দিয়েছেন।
    • ১০ জুন ২০২২-এ প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
  • এখনো জোৎস্নায় ভরে থাকে প্রান্তর, কেয়াফুলের গন্ধ মিশে থাকে বাতাসে, নোনা পানির ঢেউ এসে গড়িয়ে পড়ে পায়ে। মানুষ এসব আপন করে নিতে পারে না, ক্ষুদ্র গন্ডিতে আটকে থেকে খুন করে, নিজের উদর ভরে। এই গন্ডিটা ভেঙে ফেলতে হবে। মানুষকে জোৎস্নার কাছাকাছি, ফুলের সুবাসের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। মানুষকে হৃদয়টাকে দিগন্তের মত বিস্তৃত করে দিতে হবে।

তাঁর সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • সেলিনা আপার সঙ্গে কবে প্রথম পরিচয় হলো, তা মনে নেই। তবে তাঁকে মনে হয় আমার বড় বোন। চিরদিনই তিনি আমার আপা ছিলেন, আছেনও। সেলিনা আপা একনিষ্ঠ লেখক। সিরিয়াস। বাংলাদেশ, ভারত, সার্কে যত ধরনের সাহিত্য পুরস্কার আছে, তার সবই তিনি পেয়েছেন। ফিলিপস পুরস্কার, সার্ক পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার—তাঁর অর্জিত পুরস্কারের তালিকা করতে গেলে এই লেখার পরিসরে আঁটবে না। কলকাতা থেকে পেয়েছিলেন একটা বিশেষ পুরস্কার, যার অর্থমূল্য ছিল ১৫ বা ২০ লাখ টাকা। এই টাকা তিনি মানুষের কল্যাণে দান করেছেন, তাঁর অকালপ্রয়াত মেয়ে ফারিয়া লারার নামে ফাউন্ডেশন করে গ্রামের মেয়েদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মেয়েদের হোস্টেল, এ-জাতীয় কর্মসূচির জন্য।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা