সেলিম আল দীন
বাংলাদেশী নাট্যকার ও থিয়েটার শিল্পী
সেলিম আল দীন (১৮ আগস্ট, ১৯৪৯ - ১৪ জানুয়ারি, ২০০৮) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী নাট্যকার ও গবেষক। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার উপর গবেষণা করেছেন। বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানী এ নাট্যকার ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের বিষয় ও আঙ্গিক নিজ নাট্যে প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলা নাটকের আপন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০২৩ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
উক্তি
সম্পাদনা- তরুণরা ইদানীং প্রভাবিত হতে পছন্দ করে। আমরা যেখানে ঔপনিবেশিক শিল্পধারার প্রভাব মুক্ত হবার জন্য লড়াই করছি- কী স্বাধীনতা যুদ্ধে, কী লেখার মধ্য দিয়ে। সেখানে দেখা যায় তরুণ লেখকদের একটা বিশাল অংশ আমাদের হাজার বছরের সাহিত্যের সাথে নিবিড়ভাবে পরিচিত নন এবং পাশ্চাত্য ধাঁচটাই অনুসরণ পছন্দ করছে। তারা এটা নিয়ে চিন্তিতও নয়। ফরাসি দেশে কী হলো, সিন নদীতে কত কিউসেক পানি গড়িয়ে পড়লো- সেটা নিয়েই তাদের যত মাতামাতি। আর পপুলার বিষয়ের দিকেই যেন তাদের মনোযোগ। নাটক, কবিতা এবং উপন্যাসে একটা নতুন চিন্তা ও আঙ্গিকের ভূমি আবিষ্কার করাটা খুব জরুরি। আমাদের সাহিত্য আমরা বলি আধুনিক অথচ উপকূলীয় অঞ্চল নিয়ে কোনো নাটক বাংলা সাহিত্যে নাই। আমার কাছে মনে হলো, বাংলা সাহিত্য এত বড় এত বিশাল অথচ এ সাহিত্যে সত্যিকার অর্থে একটা মাছ শিকারের গল্প নেই। অথচ মাছে-ভাতে বাঙালি বলছি। এই যে প্রতারণা, এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, আমি দাঁড়ানোর কিছুটা চেষ্টা করেছি, অন্যদেরও দাঁড়াতে হবে। রবীন্দ্রনাথই প্রথম ধান নিয়ে এলেন। ধান তো কৃষকের ব্যাপার ছিলো। এখনকার তরুণ লেখকরা বিশটি ধানের নাম জানে না। শিকড় থেকে বিচ্যুত হওয়াতেই আত্মপ্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না তারা। এটা আমার অভিযোগ নয়; দাবি যে, তারা এমন কিছু লিখবে যা আমাদের জাতিসত্তাকে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে। আমাদের নাগরিক জীবনের অনুষঙ্গ তো পাশ্চাত্যের অপঘাতের আলো। এটাকে অবলম্বন করে যদি শিল্পচর্চা করি তাহলে সেটা নিশ্চিতভাবেই ভুল দিকে ধাবিত হবে। কারণ, ইউরোপে রিয়েলিজম-কিউবিজম ছাড়া আর কোনো আন্দোলন পজিটিভ কিছুর জন্ম দেয় নি। এক্সপ্রেশানিজম, ইম্প্রেশানিজম, দাদাইজম- ক্ষয়িষ্ণু সমাজ থেকে উঠে আসা এইসব শিল্পতত্ত্ব আমাদেরকে যেন গ্রাস না করে। ক্ষয়রোগীর কাশি-তো আর গান হয় না। ওদের গলিত সমাজ থেকে যে তত্ত্বটা উঠে এসেছে, আমরা সেটাতে বেড়াল-নখে আঁচড় দিচ্ছি- সম্ভবত নিমজ্জন-এ এরকম একটি কথা আছে। তার মানে আমি বলছি না যে, ওয়েস্টকে বন্ধ করে দাও। ডোন্ট শাট দা ওয়েস্ট। আমি বলছি, ওয়েস্টের যে জায়গায় মানব-মহিমার সমুজ্জ্বল দিকগুলো, শিল্প-কৌশলের অভিনব দিকগুলো আছে- সেগুলো গ্রহণ করে তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া।
- শেকড়চ্যুত তারুণ্য ও পশ্চিমের অভিঘাত:
- টিভিতে কেন যে এত সরকারি নিয়ন্ত্রণ তা বুঝি না, লেখকদের সত্য কথা বলতে দিলে জনগণের ক্ষোভ দূর হয়ে যায়। ফলে, সরকার ও জনগণের দূরত্ব কমে আসে, সরকারের প্রতি বিশ্বাস গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে অবশ্য সরকারি নিয়ন্ত্রণের চেয়েও মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল দর্শকদের রুচি আমাকে বেশি পীড়িত করে। সমাজের সঠিক চিত্র দেখলে অনেকেই ‘এ মা! ছি!’- ভাব করে।
- সাপ্তাহিক সন্ধানী পত্রিকা, ৬ষ্ঠ বর্ষ ১০ম সংখ্যা, ১৯ জুন ১৯৮৩। কট্টর সেন্সরশিপ সম্পর্কে সেলিম আল দীন। সেলিম আল দীনের অগ্রন্থিত সাক্ষাৎকার।
- আমরা নাট্য শ্রমিক,নাটক আমাদের শ্রম ও ঘামের ফসল।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় সেলিম আল দীন সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।