সৈয়দ মুজতবা আলী
বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা
সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪ - ১৯৭৪) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, রম্যরচয়িতা ও অনুবাদক। পড়াশোনা ও চাকরিসূত্রে তিনি দীর্ঘকাল বাংলাদেশ, ভারত, জার্মানি, আফগানিস্তান ও মিসরে বসবাস করেন। তার লিখিত ভ্রমণকাহিনীমূলক রচনা তাকে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান দিয়েছে। এছাড়াও তিনি একজন শিক্ষক, বহুভাষী পণ্ডিত ও সংগঠক ছিলেন। তার রচনাবলীর মধ্যে ভ্রমণকাহিনী দেশে বিদেশে, উপন্যাস শবনম, গল্প/স্মৃতিকথা চাচা কাহিনী, প্রবন্ধগ্রন্থ ময়ূরকণ্ঠী, পঞ্চতন্ত্র উল্লেখযোগ্য।
উক্তি
সম্পাদনাএই ভুক্তি বা অনুচ্ছেদটি পরিবর্ধন বা বড় কোনো পুনর্গঠনের মধ্যে রয়েছে। এটির উন্নয়নের জন্য আপনার যে কোনো প্রকার সহায়তাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। যদি এই ভুক্তি বা অনুচ্ছেদটি কয়েকদিনের জন্য সম্পাদনা করা না হয়, তাহলে অনুগ্রহপূর্বক এই টেমপ্লেটটি সরিয়ে ফেলুন। ১৮ দিন আগে আফতাব বট (আলাপ | অবদান) এই নিবন্ধটি সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন। (হালনাগাদ) |
- হাঁড়িতে ভাত থাকলে সাঁওতাল কাজে যায় না। আর আমার ড্রয়ারে টাকা থাকলে আমি লিখি না!
- নিজের সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে [১]
- বাংলায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হবে চরম বোকামি।
- ৩০ নভেম্বর, ১৯৪৭, সিলেটে রাষ্ট্রভাষা বিষয়ে আলোচনা সভায় [২]
- বেশি বয়সে যে পতিরা বিয়ে করে তারা ভীষণ বউপ্রেমী হয়। আমার অবস্থা হয়েছে তেমনই।
- বেশি বয়সে বিয়ে সম্পর্কে [৩]
- মাছি-মারা-কেরানি নিয়ে যত ঠাট্টা-রসিকতাই করি না কেন, মাছি ধরা যে কত শক্ত সে কথা পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন। মাছিকে যে-দিক দিয়েই ধরতে যান না কেন, সে ঠিক সময়ে উড়ে যাবেই।
- বই কেনা, সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ,কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ- ১৩৫৬, পৃষ্ঠা ৩
- রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত- যৌবনা- যদি তেমন বই হয়। তাই বোধ করি খৈয়াম তাঁর বেহেশতের সরঞ্জামের ফিরিস্তি বানাতে গিয়ে কেতাবের কথা ভোলেন নি।
- বই কেনা, সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ,কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ- ১৩৫৬, পৃষ্ঠা ৪
- বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয় নি।
- বই কেনা, সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ,কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ- ১৩৫৬, পৃষ্ঠা ৫
- বাঙালীর বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে মনে হয়, সে যেন গল্পটা জানে, আর মরার ভয়ে বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।
- বই কেনা, সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ,কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ- ১৩৫৬, পৃষ্ঠা ৭
- চোখ বাড়াবার পন্থাটা কী? প্রথমতঃ—বই পড়া এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।
- বই কেনা, সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ,কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ- ১৩৫৬, পৃষ্ঠা ৩
- কে বলে আমি টাকার মর্ম বুঝি না? ফুরিয়ে গেলেই টের পাই।
- পৃথিবীর আর সব সভ্য জাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য-উপন্যাসের এক-চোখা দৈত্যের মতো ঘোঁৎ ঘোঁৎ করি আর চোখ বাড়াবার কথা তুললেই চোখ রাঙাই।
- এমন সময় সেই পায়ের মৃদু চাপ। সব সংশয়ের অবসান, সব দুঃখ অন্তর্ধান।
- রসের গোলক, এত রস তুমি কেন ধরেছিলে হায়! ইতালির দেশ ধর্ম ভুলিয়া লুটাইল তব পায়!!
- সমুখে রয়েছে সুধা পারাবার নাগাল না পায় তবু আঁখি তার কেমনে সরাব কুহেলিকার এই বাধা রে।
- নীরবতা’ যে শুধুমাত্র ‘হিরণ্ময়’ তাই নয়, সরব প্রশ্নকে নিধন করার মরণাস্ত্রও বটে।
- বিদেশ-বিভূঁইয়ে দেশের লোক গেলে সে পকেটমার না শঙ্করাচার্য, সেকথা কেউ শুধায় না।
- কিসের সন্ধানে (পঞ্চতন্ত্র), সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ,কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ- ১৩৫৬, পৃষ্ঠা ৪৩
দেশে বিদেশে (১৯৪৮)
সম্পাদনা- বাঙালী আর কিছু পারুক না পারুক, বাজে তর্কে খুব মজবুত।
- অধ্যায় এগার, পৃ. ৪৯, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- বসকে খুশী করবার জন্য যার ঘটে ফন্দি-ফিকিরের অভাব, তার পক্ষে কোম্পানির কাগজ হচ্ছে তর্ক না করা।
- অধ্যায় পনেরো, পৃ. ৬৭, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- ভারতবর্ষের সধবারা তাজা মাছ না খেয়ে শুঁটকি মাছের কাঁটা দাঁতে লাগিয়ে একাদশীর দিনে সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় রাখেন।
- অধ্যায় সতেরো, পৃ. ৭৫, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- পৃথিবীর সব জাত বিশ্বাস করে যে, তার মত ভুবনবরেণ্য জাত আর দুটো নেই। গরীব জাতের তার উপর আরেকটা বিশ্বাস যে, তার দেশের মাটি খুঁড়লে সোনা রুপো তেল বেরবে তার জোরে সে বাকী দুনিয়া, ইস্তেক চন্দ্রসূর্য কিনে ফেলতে পারবে।
- অধ্যায় একুশ, পৃ. ৯৪, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটবুক কি-বলে না-বলে সেটা অবান্তর, জীবনে কাজে লাগে বাজারের গাইড-বুক।
- অধ্যায় তেইশ, পৃ. ৯৯, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- ডিমোক্রেসি বড় ঠুনকো জিনিস; কখন যে কার অভিসম্পাতে ফেটে চৌচির হয়ে যায়, কেউ বলতে পারে না। তারপর আর কিছুতেই জোড়া লাগে না।
- অধ্যায় ছাব্বিশ, পৃ ১১০, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- বিদেশে সম্মান-প্রাপ্ত নৃপতির সম্মান স্বদেশে লাঘব হয়। [আফগান মীর আসলমের বয়ানে]
- অধ্যায় ত্রিশ, পৃ. ১২০, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- ছয় ঋতুতে ছয় রকম করে প্রিয়ার বিরহযন্ত্রণা ভোগ না করা পর্যন্ত মানুষ নাকি পরিপূর্ণ বিচ্ছেদবেদনার স্বরূপ চিনতে পারে না…।
- অধ্যায় একত্রিশ, পৃ ১২৪, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- কনফুৎসিয়াস বলেছেন, ‘বাঘ হতে ভয়ঙ্কর কু-রাজার দেশ’, আমি মনে মনে বললুম, ‘তারও বাড়া যবে ডাকু পরে রাজবেশ।’
- অধ্যায় ছত্রিশ, পৃ. ১৪৫, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- সরু চালের ভাত আর ইলিশ মাছ ভাজার চেয়ে উপাদেয় খাদ্য আর কিছুই হতে পারে না। মূর্খ বলে কিনা বিরয়ানি-কুর্মা তার চেয়ে অনেক ভালো। … যে নরাধম ইলিশ মাছের অপমান করে তার মুখদর্শন করা মহাপাপ…।
- অধ্যায় চল্লিশ, পৃ. ১৬৪, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- ভাবপ্রবণ বাঙালী একবার অনুভূতিগত বিষয়বস্তুর সন্ধান পেলে মূল বক্তব্য বেবাক ভুলে যায়।
- অধ্যায় একচল্লিশ, পৃ. ১৬৯, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- চাকরীতে উন্নতি করে মানুষ হয় বুদ্ধির জোরে নয় ভগবানের কৃপায়। বুদ্ধিমানকে ভগবানও যদি সাহায্য করেন তবে বোকাদের আর পৃথিবীতে বাঁচতে হত না।
- অধ্যায় বিয়াল্লিশ, পৃ. ১৮৬, ৫ম মুদ্রণ (১৯৯৭), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
চাচা কাহিনী (১৯৫২)
সম্পাদনা- ইয়োরোপে cold-blooded খুন হয়, ভারতবর্ষে কোল্ড-ব্লাডেড বিয়ে হয়। এবং দুটোই ভেবে চিন্তে, প্ল্যানমাফিক, প্রিমেডিটেটেড।
- [চক্রবর্তী চাচার জবানীতে], কাহিনী: স্বয়ংবরা
- ঘড়েল মাস্টারগুলো জানে যে ছাত্র যখন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না, তখন তাকে ভালো করে নির্যাতন করার উপায় হচ্ছে চুপ করে উত্তরের প্রতীক্ষা করা।
- কাহিনী: স্বয়ংবরা
- আইন মানুষকে এক পাপের জন্য সাজা দেয় একবার, সমাজ কতবার, কত বৎসর ধরে দেয় তার সন্ধান কোনো কেতাবে লেখা নেই, কোনো বৃহস্পতিও জানেন না।
- কাহিনী: মা-জননী
- মদ খেলে কেউ হয়ে যায় ঝগড়াটে, কেউ বা আরম্ভ করে বদ রসিকতা, কেউ করে খিস্তি, কেউ হয়ে যায় যীশুখ্রীষ্ট-দুনিয়ার তাবৎ দুঃখকষ্ট সে তখন আপন স্কন্ধে তুলে নিতে চায়, আর সবাইকে গায়ে পড়ে টাকা ধার দেয়। পরের দিন অবশ্য চাকরের উপর চালায় চোট-পাট, ভাবে … ঐ শালাই মোকা পেয়ে টাকাটা লোপাট মেরেছে।
- কাহিনী: রাক্ষসী
- পণ্ডিতমশাই বললেন, 'বেশ বেশ। তবে শোন। মিম্বর উল্লার শালা বলল, লাট-সায়েবের কুত্তাটার পিছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচা হয়। … বলতো দেখি, যদি একটা কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের তিনটে ঠ্যাং হয়, তবে ফি ঠ্যাঙের জন্য কত খরচ হয়?' … তাড়াতাড়ি বললুম, 'আজ্ঞে, পঁচিশ টাকা।' পণ্ডিতমশাই বললেন, 'সাধু, সাধু।' তারপর বললেন, 'উত্তম প্রস্তাব। অপিচ আমি, ব্রাহ্মণী, বৃদ্ধা মাতা, তিন কন্যা, বিধবা পিসি, দাসী একুনে আটজন, আমাদের সকলের জীবনধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। এখন বল তো দেখি, তবে বুঝি তোর পেটে কত বিদ্যে, এই ব্রাহ্মণ পরিবার লাটসায়েবের কুকুরের কটা ঠ্যাঙের সমান?’ আমি হতবাক। 'বল না।' আমি মাথা নীচু করে বসে রইলুম। শুধু আমি না, সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিতমশাই হুঙ্কার দিয়ে বললেন, 'উত্তর দে!' মূর্খের মতো একবার পণ্ডিতমশায়ের মুখের দিকে মিটমিটিয়ে তাকিয়েছিলুম। দেখি, সে মুখ লজ্জা, তিক্ততা, ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছেলে বুঝতে পেরেছে – কেউ বাদ যায়নি – পণ্ডিতমশাই আত্ম-অবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে মাখছেন, আমাদের সাক্ষী রেখে।
- কাহিনী: পাদটীকা
- জর্মন ভাষাতেই প্রবাদ আছে, 'ওষুধ খেলে সর্দি সারে সাত দিনে, না খেলে এক সপ্তায়।'
- কাহিনী: বেঁচে থাকো সর্দি-কাশি
- যে ব্যামোর দেখবেন সাতান্ন রকমের ওষুধ, বুঝে নেবেন, সে ব্যামো ওষুধে সারে না।
- [জার্মান ডাক্তারের জবানীতে] কাহিনী: বেঁচে থাকো সর্দি-কাশি
- প্রবাদ আছে, প্রেমে পড়লে বোকা নাকি বুদ্ধিমান হয়ে যায়-প্রিয়াকে পাওয়ার জন্য তখন তার ফন্দি-ফিকিব আর আবিষ্কার কৌশল দেখে পাঁচজনের তাক লেগে যায়, আর বুদ্ধিমান নাকি প্রেমে পড়লে হয়ে যায় একদম গবেট-এমন সব কাণ্ড তখন করে বসে যে দশজন তাজ্জব না মেনে যায় না, এ লোকটা এসব পাগলামি করছে কী করে।
- কাহিনী: বেঁচে থাকো সর্দি-কাশি
- যে বিধাতা প্রতিটি ক্ষুদ্র কীটেরও আহার জুগিয়ে দেন, তিনিই তো তৃষিত হিয়ার অপ্রত্যাশিত মরূদ্যান রচে দেন। কিন্তু তার কাছে তখন সেটা অলৌকিক। কুবেরের লক্ষ মুদ্রা লাভ অলৌকিক নয়, কিন্তু নিরন্নের অপ্রত্যাশিত মুষ্টি-ভিক্ষা অলৌকিক। কিংবা বলব, সরলা গোপিনীদের কৃষ্ণলাভ অলৌকিক-ইন্দ্রসভায় কৃষ্ণের প্রবেশ দৈনিন্দন ঘটনা।
- প্রথম খণ্ড, অধ্যায় দুই, পৃ. ২২, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- আকাশের জল আর চোখের জল তো একই যুক্তি-কারণে ঝরে না।
- প্রথম খণ্ড, অধ্যায় দুই, পৃ. ২৩, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- পাগলামির প্রথম চিহ্ন, পাগল একই কথা বার বার বলে, একই গ্রাস বার বার চিবিয়ে চলে, গিলতে পারে না।
- প্রথম খণ্ড, অধ্যায় দুই, পৃ. ২৪, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- এক দোর বন্ধ হলে দশ দোর খুলে যায়; বোবার এক মুখ বন্ধ হলে দশ আঙুল তার ভাষা তর্জমা করে দেয়।
- প্রথম খণ্ড, অধ্যায় চার, পৃ. ২৮, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- একটি কথা, দুটি চাউনি, তাতেই দেহের ক্ষুধা, হৃদয়ের তৃষ্ণা, মনের আকাঙ্ক্ষা সব ঘুচে যায়, সব পরিপূর্ণ হয়ে যায়!
- প্রথম খণ্ড, অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৩৩, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- শোন দিল-ই-মন, (আমার দিল) – মুর্খই হও আর সোক্রাৎই (সক্রাটিস) হও, প্রেম কেউ লুকিয়ে রাখতে পারে না। শোন,… “সরল হৃদয় মনে করে প্রেম লুকায়ে রাখিতে পারে,
কাঁচের ফানুস মনে মনে ভাবে লুকায়েছে শিখাটারে।”- [শবনমের উদ্ধৃতিতে] প্রথম খণ্ড, অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৩৭, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- সুস্থ বর স্বাভাবিক অবস্থায়ও পরের দিন ঠিক ঠিক বলতে পারে না [বিয়ের দিন] কি কি হয়েছিল, কোনটার পর কি ঘটেছিল।
- দ্বিতীয় খণ্ড, অধ্যায় সাত, পৃ. ৯১, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- নববধূকে জবরজঙ্গ করে সাজানোতে একটা গভীর তত্ত্ব রয়েছে। রূপহীনার দৈন্য তখন এমনই চাপা পড়ে যায় যে, সহৃদয় লোক ভাবে, ‘আহা, একে যদি সরল সহজ ভাবে সাজানো হত তবে মিষ্টি দেখাতো’; আর সুরূপার বেলাও ভাবে ওই একই কথা – ‘না সাজালে তাকে আরও অনেক বেশী সুন্দর দেখাতো।’
- দ্বিতীয় খণ্ড, অধ্যায় সাত, পৃ. ৯৭, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- প্রত্যেক মানুষই জুপিটার। তার দেবরূপ উন্মোচন করা বিপজ্জনক।
- [শবনমের উদ্ধৃতিতে] দ্বিতীয় খণ্ড, অধ্যায় সাত, পৃ. ১০০, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- কাব্যলোকে বাস না করলে বাস কি করব ইতিহাসলোকে, না দর্শনলোক, না ডাক্তারদের ছেঁড়া-খোঁড়ার শবলোকে? আর এ সব কোনও লোকেই যদি বাস না করি তবে তো নেমে আসবও সেই লোকে – গাধা গরু যেখানে ঘাস চিবোয় আর জাবর কাটে।
- [শবনমের উদ্ধৃতিতে], দ্বিতীয় খণ্ড, অধ্যায় সাত, পৃ. ১০৮, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- জীবনই অভিজ্ঞতা, আর অভিজ্ঞতাই জীবন। অভিজ্ঞতাসমষ্টির নাম জীবন আর জীবনকে খণ্ড খণ্ড করে দেখলে এক-একটি অভিজ্ঞতা। এক-একটি অভিজ্ঞতা যেন এক এক ফোঁটা চোখের জলের রুদ্রাক্ষ। সব কটা গঁথা হয়ে যে তসবী-মালা হয় তারই নাম জীবন।
- তৃতীয় খণ্ড, অধ্যায় তিন, পৃ. ১৩৪, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- শক্তকে ভাঙ্গা যায়, নরমকে ভাঙ্গা শক্ত।
- তৃতীয় খণ্ড, অধ্যায় চার, পৃ. ১৪৪, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- শত্রু বেদনা দেয় মিলনে, মিত্র দেয় বিরহে।
- তৃতীয় খণ্ড, অধ্যায় ছয়, পৃ. ১৪৯, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- পরীর প্রেমে মানুষ পাগল হয়। পরী মানে কল্পনার জিনিস। কিংবা বলব, প্রত্যেক রমণীর ভিতরই কিছুটা পরী লুকিয়ে থাকে। সেটাকে ভালবাসলেই সর্বনাশ।
- তৃতীয় খণ্ড, অধ্যায় ছয়, পৃ. ১৫০, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
ময়ূরকণ্ঠী (১৯৫৭)
সম্পাদনা- সবদিকে যাঁর দৃষ্টি তিনিই তো প্রকৃত গুরু এবং তা-ও মৃত্যুর বহু পূর্বে।
- প্রবন্ধ: গুরুদেব
- ... যে ভালোবেসেছে সমস্ত সত্তা সর্বৈব অস্তিত্ব দিয়ে তার হৃদয় তো তখন ভবিষ্যৎ দেখতে পায়– বিধাতাপুরুষেরই মতো।
- প্রবন্ধ: 'নেভা'র রাধা
- আশাটুকুরও সঞ্চার যদি কর্তারা না করতে পারেন, তবে তারা আসন ত্যাগ করে সরে পড়েন না কেন? হায়, অরক্ষণীয়ার অভিসম্পাতকেও এঁরা আর ভয় করেন না!!
- প্রবন্ধ: কালো মেয়ে
- নিপীড়িত হলেই সে ব্যক্তি মহাজন, একথা বলা চলে না, কিন্তু মহাজনমাত্রই নিপীড়িত হন, সে বিষয়ে আমার মনে সন্দেহ নেই।
- প্রবন্ধ: রামমোহন রায়
- রাজনৈতিক কিংবা ব্যবসায়ী হতে হলে গণ্ডারের চামড়ার প্রয়োজন– গণ্ডারের চামড়া নিয়ে কোনও কবি আজ পর্যন্ত সার্থক সৃষ্টি করে যেতে পারেননি।
- প্রবন্ধ: বিশ্বভারতী
- স্বাধীনতার ঘোড়া চড়ি আর নাই চড়ি সেটাকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার জন্য দানাপানির খরচা হবেই হবে।
- প্রবন্ধ: জয়হে ভারতভাগ্যবিধাতা
- প্রভু যিশু জন্ম নিলেন খড়বিচুলির মাঝখানে– আর তার পরব হল শ্যাম্পেনে টার্কিতে!!
- প্রবন্ধ: বড় দিন
- পণ্ডিতেরা একত্র হইয়া এই বিষয়ে (শিক্ষাপদ্ধতি সংস্কার) নানা তর্ক নানা আলোচনা করিবেন; সেইসব পণ্ডিতের নামাবলিতে দেশবিদেশের নানা ডিগ্রি নানা উপাধির লাঞ্ছন অঙ্কিত থাকিবে; নানা ভাষায় নানা কণ্ঠে তাহারা জ্ঞানগর্ভ মতামত প্রকাশ করিবেন। সেখানে আমাদের ক্ষীণ নেটিভ কণ্ঠ পৌঁছিবে এমন দুরাশা আমরা করি না।
- প্রবন্ধ: শিক্ষা-সংস্কার
- আমরা সকলেই পরমানন্দে অন্ধের হস্তীদর্শন করছি কিন্তু আমাদের চরম সান্ত্বনা, এ সংসারের অধিকাংশ অন্ধ আপন আপন যষ্টি ত্যাগ করে বৃহত্তর লোকের ক্ষীণতম আভাস পাওয়ার জন্য অঙ্গুষ্ঠপরিমাণ উদগ্রীব নয়।
- প্রবন্ধ: রবীন্দ্র সঙ্গীয় ও ইয়োরোপীয় সুরধারা
পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২)
সম্পাদনা- বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয় নি। বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিনগুণও বাড়িয়ে দেন, তবু তো আপনার দেউলে হবার সম্ভাবনা নেই। মাঝখান থেকে আপনি ফ্রাঁসের মাছির মত অনেকগুলি চোখ পেয়ে যাবেন, রাসেলের মত এক গাদা নূতন ভুবন সৃষ্টি করে ফেলবেন।
- প্রবন্ধ: বই পড়া
- নূতন শহরের সব কিছুই গোড়ার দিকে সুর-রিয়ালিস্টিক ছবির মতো এলোপাতাড়ি ধরনের মনে হয়? অর্থ খাড়া হতে হতে কয়েকদিন কেটে যায়।
- প্রবন্ধ: কাইরো
- বৃহত্তর আদর্শের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ ক্ষুদ্র স্বাৰ্থ ত্যাগ করেছে—তা সে ব্যক্তিগত স্বাের্থই হোক আর সাম্প্রদায়িক স্বার্থই হোক-এ তো কিছু অভূতপূর্ব জিনিস নয়। স্বীকার করি এ জিনিস বিরল।
- প্রবন্ধ: নেতাজি
- বাঙলা সাহিত্যের মত অদ্ভুত এবং বেতালা সাহিত্য পৃথিবীতে কমই আছে।
- প্রবন্ধ: অনুবাদ সাহিত্য
সৈয়দ মুজতবা আলী সম্পর্কে উক্তি
সম্পাদনা- তার সাহিত্যে বিন্দুমাত্র ধর্মীয় সংকীর্ণতা ছিল না। কিন্তু তার এই উদারতার জন্য গোঁড়া স্বধর্মীরা তাকে কোনোদিন ক্ষমা করেননি।
- মুজতবা আলীর অগ্রজ সৈয়দ মুর্তজা আলী (২০১৭), মুজতবা কথা, উৎস প্রকাশন, ঢাকা
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় সৈয়দ মুজতবা আলী সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে সৈয়দ মুজতবা আলী সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।