স্বামী বিবেকানন্দ

ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ

স্বামী বিবেকানন্দ (ইংরেজি Swami Vivekananda; জানুয়ারি ১২, ১৮৬৩ - জুলাই ৪, ১৯০২) তিনি ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। ভারতবর্ষের নবজাগরণের প্রতিটি ক্ষেত্রকে তিনি এমনভাবে প্রভাবিত করেছিলেন যে তাকে আধুনিক ভারতবর্ষের স্রষ্টা আখ্যা দেওয়া যায়। বস্তুত, ভারতের জাতীয়তার প্রধান উন্মেষক তিনি ছিলেন একজন মানববন্ধু। তার কথা, তার বাণী — সাহসের বাণী, বীর্যবত্তার বাণী, সবই ইতি বাচক, শাশ্বত বাণী — চিরকাল মানুষকে উদ্দীপিত করবে আর এই বাণীর মধ্যে তিনি চিরকাল বিদ্যমান থাকবেন।

স্বামী বিবেকানন্দ
  • যাতে চরিত্র তৈরী হয়, মনের শক্তি বাড়ে, বুদ্ধির বিকাশ হয়, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে, এই রকম শিক্ষা চাই।
  • মানুষের মধ্যে যে দেবত্ব প্রথম থেকেই আছে, তার বিকাশই ধর্ম
  • হে বীর, সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল-আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই, বল, মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই; তুমিও কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত হইয়া, সদর্পে ডাকিয়া বল—ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বাৰ্দ্ধক্যের বারাণসী; বল ভাই, ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বৰ্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ, আর বল দিন রাত, "হে গৌরীনাথ, হে জগদম্বে, আমায় মনুষ্যত্ব দাও, মা, আমার দুৰ্বলতা কাপুরুষতা দূর কর।”
    • বর্ত্তমান ভারত- স্বামী বিবেকানন্দ, প্রকাশক- উদ্বোধন কার্য্যালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩১২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৫-৬৬
  • টাকায় কিছু হয় না, নামেও না, যশেও না, বিদ্যায়ও হয় না, ভালবাসায় সব হয়—চরিত্রই বাধাবিঘ্নরূপ বজ্রদৃঢ় প্রাচীরের মধ্য দিয়া পথ করিয়া লইতে পারে।
  • যারা অপরের নিঃশ্বাসে অপবিত্র হয়ে যায়, তারা আবার অপরকে কি পবিত্র করবে? ছুৎমার্গ এক প্রকার মানসিক ব্যাধি, সাবধান! সব প্রকার বিস্তারই জীবন, সব প্রকার সঙ্কীর্ণতাই মৃত্যু।
  • আমি নানা দেশ ভ্রমন করেছি কিন্তু কখনো নিজের জন্মভুমি বাংলাদেশ বিশেষভাবে দেখা হয়নি । জানতাম না এ দেশের জলস্থলে সর্বত্র সৌন্দর্য, কিন্তু নানা দেশ ভ্রমন করে এই লাভ হয়েছে যে, আমি বাংলার সৌন্দর্য বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে পারছি।
    • ১৯০১ সালের ৩০শে মার্চ ঢাকার জগন্নাথ কলেজে স্বামী বিবেকান্দ এটি বলেছিলেন।[১]
  • কখনও বড় পরিকল্পনার হিসাব করবেন না, ধীরে ধীরে আগে শুরু করুন, আপনার ভূমি নির্মাণ করুন তারপর ধীরে ধীরে এটিকে  প্রসার করুন।
  • যখন আপনি ব্যস্ত থাকেন তখন সব কিছুই সহজ বলে মনে হয় কিন্তু অলস হলে কোনো কিছুই সহজ বলে মনে হয়না।
  • নিজের প্রতি সত্‍ থাকা, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাই সবচেয়ে মহান ধর্ম।
  • অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করো না, তুমি যা করতে পারো সেটা করো কিন্তু অন্যের উপর আশা করো না।
  • দুনিয়া আপনার সম্বন্ধে কি ভাবছে সেটা তাদের ভাবতে দিন| আপনি আপনার লক্ষ্যগুলিতে দৃঢ় থাকুন, দুনিয়া আপনার একদিন পায়ের সম্মুখে হবে।
  • মানুষের জন্ম প্রকৃতি কে জয় করিবার জন্যই, তাহাতে অনুসরণ করার জন্য নয়।
  • তুমি যখন নিজের দেহ মাত্র বলিয়া ভাবো, তখন তুমি বিশ্বজগৎ হইতে বিচ্ছিন্ন; নিজেকে যখন জীব বলিয়া ভাবো, তখন তুমি সেই শাশ্বত মহান্ জাতির একটি কণিকামাত্র; আর যখন নিজের আত্মা বলিয়া ভাবো, তখন তুমিই সব কিছু।
  • ইচ্ছাশক্তি স্বাধীন নয়—ইহা কার্যকারণের গণ্ডিরই মধ্যস্থ ব্যাপার-বিশেষ; কিন্তু এই ইচ্ছাশক্তির পিছনে এমন কিছু আছে যাহা স্বাধীন।
  • সততা এবং পবিত্রতাই শক্তির আকর।
  • বিশ্বজগৎ ঈশ্বরেরই বহিঃপ্রকাশ।
  • নিজের উপর বিশ্বাস না আসিলে ঈশ্বরে বিশ্বাস আসে না।
  • ‘আমরা দেহ’—এই ভ্রমই সকল অমঙ্গলের মূল। আদি পাপ বলিয়া যদি কিছু খাকে, ইহাই সেই পাপ।
  • একদল বলেন, চিন্তা—জড় হইতে উৎপন্ন; আবার অপর দলের মতে চিন্তা হইতে জড়-জগতের উৎপত্তি। এই দুইটি মতবাদই ভুল। জড়বস্তু এবং চিন্তা পরস্পর-সহগামী। তৃতীয় এমন একটি বস্তু আছে, যাহা হইতে জড় এবং চিন্তা দুই-ই উদ্ভূত।
  • আকাশের ভিত্তিতে যেমন সমস্ত জড়কণা একত্র হয়, তেমনি কালের ভিত্তিতে সমস্ত চিন্তাতরঙ্গ মিলিত হয়। সকল জড় পদার্থ যেমন আকাশে (দেশে ) সীমাবদ্ধ, সকল চিন্তাও তেমনি কালে সীমাবদ্ধ।
  • ঈশ্বরের সংজ্ঞা নির্ণয় করিতে যাওয়া মানে পিষ্টপেষণ করা, কারণ তিনিই একমাত্র সত্তা—যাহাকে আমরা জানি।
  • ওঠো, জাগো এবং নিজের লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।
  • চালাকির দ্বারা কোনো মহৎ কার্য সাধিত হয় না।
  • জগতে যদি কিছু পাপ থাকে, তবে দুর্বলতায় সেই পাপ। সকল প্রকার দুর্বলতা ত্যাগ করো – দুর্বলতাই মৃত্যু, দুর্বলতাই পাপ।
  • প্রেমই জীবন, ঘৃণাই মৃত্যু।
  • শিক্ষা হচ্ছে ইতিমধ্যে মানুষের মধ্যে থাকা উৎকর্ষের প্রকাশ।
  • যারা তোমায় সাহায্য করেছে, তাঁদের কখনও ভুলে যেও না
    যারা তোমাকে ভালোবাসে, তাদের কোনওদিন ঘৃণা করো না
    আর যারা তোমাকে বিশ্বাস করে, তাদের কখনও ঠকিয়ো না।
  • যত উচ্চ তোমার হৃদয়, তত দুঃখ জানিহ নিশ্চয়।
    হৃদিবান নিঃস্বার্থ প্রেমিক! এ জগতে নাহি তব স্থান;
    • ‘সখার প্রতি’ কবিতা, বীরবাণী - স্বামী বিবেকানন্দ, প্রকাশক- কলিকাতা বিবেকানন্দ সোসাইটী, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩১২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯
    • জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর
    • দিনে অন্তত একবার নিজের সাথে কথা বলো, নইলে তুমি একজন অসাধারণ মানুষের সাথে সাক্ষাত মিস করে যাবে।
    • ভারতে আমরা দরিদ্র নিচু জাতিদের কি ভেবে থাকি? তাদের কোনো সুযোগ নেই, নিস্তার নেই কোনো পথ নেই ওপরে ওঠার ... প্রতিদিন তারা আরো নিচুতে নেমে যাচ্ছে। '

স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে উক্তি

সম্পাদনা
  • তিনি ভারতের ঋষি হউন, বা প্রতীচ্যের মনীষী হউন — তাহাকে লইয়া আমরা মানবমাত্রেই ধন্য।

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  • যদি আপনি ভারতকে জানতে চান, বিবেকানন্দকে অধ্যয়ন করুন। তাঁর মধ্যে সবকিছু ইতিবাচক এবং নেতিবাচক কিছুই নেই।

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  • আমাদের আধুলিক ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে যে-কেউ স্পষ্ট দেখতে পাবে স্বামী বিবেকানন্দের কাছে আমরা কত ঋণী! ভারতের আত্মমহিমার দিকে ভারতের নয়ন তিনি উন্মীলিত করে দিয়েছিলেন। তিনি রাজনীতির আধ্যাত্মিক ভিত্তি নির্মাণ করেছিলেন। আমরা অন্ধ ছিলাম, তিনি আমাদের দৃষ্টি দিয়েছেন। তিনিই ভারতীয় স্বাধীনতার জনক, — আমাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার তিনি পিতা। স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দুধর্ম এবং ভারতবর্ষকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি না থাকলে আমরা আমাদের ধর্ম হারালাম এবং স্বাধীনতার লাভ করতে পারতাম না। আমাদের সবকিছুর জন্য তাই আমরা বিবেকানন্দের কাছে ঋণী।

- চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী

    • শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের নিকট আমি যে কত ঋণী তাহা ভাষায় কি করিয়া প্রকাশ করিব? তাঁহাদের পুণ্য প্রভাবে আমার জীবনের প্রথম উন্মেষ।
   চরিত্র গঠনের জন্য "রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সাহিত্য" অপেক্ষা উত্কৃষ্ট সাহিত্য আমি কল্পনা করতে পারি না । -নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা