"আই হ্যাভ এ ড্রিম" একটি বিখ্যাত বক্তৃতা যা আমেরিকান নাগরিক অধিকার কর্মী ও ব্যাপটিস্ট মন্ত্রী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র দ্বারা ২৮ আগস্ট, ১৯৬৩ ওয়াশিংটনে নিগ্রোদের চাকরি ও স্বাধীনতার জন্য বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে দেওয়া হয়েছিল। বক্তৃতায় কিং নিগ্রোদের নাগরিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের দাবি জানান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের অবসানের আহ্বান জানান। ওয়াশিংটন ডি.সি. -র লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ২৫০,০০০ এরও বেশি নাগরিক অধিকার সমর্থকদের সম্মুখে দেওয়া বক্তৃতাটি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম বিখ্যাত মুহূর্ত এবং আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে আইকনিক বক্তৃতাগুলির মধ্যে একটি। বক্তৃতার শুরুতে কিং বলেছিলেন, "একশো বছর পরেও, নিগ্রো এখনও মুক্ত নয়"। এবং বক্তৃতার শেষের দিকে, মাহালিয়া জ্যাকসনের চিৎকারের( "ওদের স্বপ্ন সম্পর্কে বলো, মার্টিন!" ) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিং তার প্রস্তুতকৃত পাঠ্য থেকে আংশিক বিচ্যুত হয়ে পড়েন। বক্তৃতার এ অংশ, যা শ্রোতাদের সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত করেছিল এবং এখন যা সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে, কিং দাসত্ব ও ঘৃণার দেশ থেকে উদ্ভূত স্বাধীনতা ও সাম্যের স্বপ্নের কথা বলেছেন। জন মেচাম লিখেছেন যে, "একটি বাক্যাংশ দিয়ে কিং জেফারসন এবং লিঙ্কনের সাথে আধুনিক আমেরিকাকে রূপদানকারী পুরুষদের শ্রেণিতে যোগ দিয়েছিলেন।" ১৯৯৯ সালে পাবলিক অ্যাড্রেসের পণ্ডিতদের জরিপে ভাষণটি ২০ শতকের শীর্ষ আমেরিকান বক্তৃতার স্থান পেয়েছিল। ভাষণটিকে " ইংরেজি ভাষায় হওয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দৃঢ় দাবি" হিসাবেও বর্ণনা করা হয়েছে।

উক্তি সম্পাদনা

  • বন্ধুরা, আজ আমি তোমাদের বলছি, তোমরা হতাশার উপত্যকায় অধঃপতিত হবে না। যদিও আমরা আজকের এবং কালকের বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছি, তা-ও আমার একটি স্বপ্ন আছে।
  • কিন্তু এর একশ বছর পরেও নিগ্রোরা স্বাধীন নয়। একশ বছর পরেও নিগ্রোরা পৃথকীকরণ এবং বৈষম্যের বেড়াজালে বন্দী হয়ে আছে। একশ বছর পরেও নিগ্রোরা আজ জাগতিক ধন-সম্পদের সাগরে দারিদ্র্যের এক দ্বীপে বাস করে। একশ বছর পরেও নিগ্রোদের আমেরিকান সমাজের এক কোনায় দুর্বল করে ফেলে রাখা হয়েছে, যেন নিজেদের দেশে নিজেরাই নির্বাসিত।
  • এটা একটা অঙ্গীকার ছিল যে, সব মানুষ সাদা-কালো নির্বিশেষে ‘জীবন, স্বাধীনতা এবং সুখের’ জন্য একই অধিকার পাবে। বর্ণভেদে আমেরিকা এই অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আমেরিকা নিগ্রোদের একটি খারাপ চেক দিয়েছে, যে চেকে লেখা আছে পর্যাপ্ত ব্যাল্যান্স নেই।
  • কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি না বিচারের ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা বিশ্বাস করি না এই দেশের বিশাল ভল্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ নেই। আর তাই আমারা এই চেক ভাঙাতে এসেছি, যে চেক আমাদের স্বাধীনতা এবং সুবিচার দেবে।
  • অবস্থা শান্ত হওয়ার জন্য সময় দেয়ার কিংবা ক্রমানুসারে পরিবর্তনের ঘুমের ওষুধ খাওয়ার বিলাসিতা করার সময় নেই।
  • ১৯৬৩ শেষ নয়, বরং শুরু
  • নিগ্রোদের নাগরিক অধিকার দেয়ার আগপর্যন্ত আমেরিকাতে কোনো বিশ্রাম থাকবে না।
  • যারা ন্যায়বিচারের প্রাসাদের পথে দাঁড়িয়ে আছে, আমি আমার সেই মানুষদের বলতে চাই। আমাদের বৈধ দাবি আদায়ের জন্য কোনো ভুল কাজ করব না। আমরা আমাদের স্বাধীনতার তৃষ্ণাকে তিক্ততা এবং ঘৃণার পেয়ালা থেকে নিবারণ করবো না। আমাদের সৃজনশীল প্রতিবাদকে শারীরিক আক্রমণে পরিণত করবো না। আমরা বারংবার শারীরিক শক্তির সাথে আত্মিক শক্তির মিলন ঘটাবো।
  • আমরা একা চলতে পারবো না। এবং যখন আমরা হাঁটবো আমাদের এই পণ করা উচিত, আমরা সবসময় সামনের দিকে এগোবো। আমাদের পেছনে ফেরা যাবে না।
  • না, না, আমরা সন্তুষ্ট না এবং সন্তুষ্ট হব না যতদিন ন্যায়বিচার পানির মতো বইবে না, ন্যায়পরায়ণতা বিশাল স্রোতের মতো বইবে না।
  • আমি স্বপ্ন দেখি একদিন জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে, আগের দাসদের সন্তানরা এবং আগের দাস মালিকদের সন্তানরা ভ্রাতৃত্বের টেবিলে একসাথে বসতে পারবে। আমি স্বপ্ন দেখি, এমনকি মিসিসিপি প্রদেশ যেটা অবিচার এবং নিপীড়নের তীব্র তাপে জর্জরিত, তা-ও একদিন স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের আশ্রয়স্থলে পরিণত হবে। আমি স্বপ্ন দেখি আমার ছোট ছোট চার সন্তান এমন একটি দেশে বাস করবে যেখানে তাদেরকে তাদের গায়ের রং দিয়ে বিচার করা হবে না, বরং তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে বিচার করা হবে।
  • আমরা যখন স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজতে দেবো, প্রতিটা গ্রাম প্রতিটা পল্লী প্রতিটা প্রদেশ প্রতিটা শহর থেকে যখন আমরা স্বাধীনতার ঘণ্টাকে বাজতে দেবো তখন আমরা ঐ দিনটাকে ত্বরান্বিত করব যেদিন ঈশ্বরের সন্তানেরা, কালো এবং সাদা, ইহুদী এবং অইহুদী, প্রটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথোলিক, সবাই মিলে হাত ধরে নিগ্রোদের পুরনো আধ্যাত্মিক গানটা গাইতে পারবে-
অবশেষে মুক্তি পেলাম, অবশেষে মুক্তি পেলাম,
মহাশক্তিশালী ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা অবশেষে মুক্তি পেলাম।

আই হ্যাভ এ ড্রিম সম্পর্কে উক্তি সম্পাদনা

  • তাঁর লেখা এবং বক্তৃতা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে কিং জানতেন, ঐক্য, পুনর্মিলন এবং মানবতাবাদের উদ্ভব ঘটবে মামলা-মোকদ্দমা, আইন প্রণয়ন, নেতৃত্বের মধ্য দিয়েই আর দরকার হবে প্রেমের। এই কাঠামোগুলির বেশিরভাগই প্রাচীন, ধীর গতিসম্পন্ন, সীমাবদ্ধ বা পক্ষপাতদুষ্ট তবে প্রেম অফুরন্ত এবং সকলের কাছে উপলব্ধ। আমি বিশ্বাস করি, যখন তিনি তাঁর বিরোধীদের কাছ থেকে তীব্র প্রতিরোধ এবং তাঁর পাদরি সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন প্রেমই রাজার সাহসকে উজ্জীবিত করেছিল। আমি বিশ্বাস করি মানবতার প্রতি ভালবাসা এবং আমাদের দেশের প্রতি ভালবাসা প্রতিটি লড়াইয়ের জন্য তাঁর বিশ্বাসকে উজ্জীবিত করেছিল। পরিশেষে, আমি বিশ্বাস করি, যেমন কিং নিজে স্বীকার করেছেন যে, তিনি যিশু খ্রিস্টকে ভালবাসতেন এবং খ্রিস্টের প্রতি এই ভালবাসা তাঁকে তাঁর কালজয়ী "অন ডে" বক্তৃতার দ্বারা একটি স্বপ্নের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে বাধ্য করেছিল।
    • উক্তিকারি:তেরেসা এ. ডিয়ার এনএএসিপি-র জাতীয় বোর্ডের সদস্য, সংগৃহীত:Deseret News
  • মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের উক্তি মানেই অসাধারণ শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস।
  • আজ থেকে ৫৭ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং এক অসামান্য ভাষণ দিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনে লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আড়াই লাখ মার্কিনের এক সমাবেশে ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ (আমার একটি স্বপ্ন আছে) শীর্ষক সেই বিখ্যাত ভাষণ বিশ্বের সর্বকালের সেরা বাগ্মিতার দৃষ্টান্তগুলোর অন্যতম হয়ে আছে। তাঁর সেই ভাষণ ছিল এমন কিছু, যা সব মার্কিনই নিজের করে নিয়েছে। এটা এতটাই যে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আপনি দেখবেন, তরুণেরা বা ছোট শিশুরাও বলছে, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

ডেভিড হারবার্ট লরেন্স

ল্যাংস্টন হিউজ

উইলিয়াম ব্লেইক

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা