মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন সময় হচ্ছে যৌবন। যৌবন এক কথায় একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে সুখময়, আনন্দময়, স্বপ্নময়, গভীর অর্থপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ সময়। যৌবনকালই একজন মানুষের জীবনের অর্থ-অনর্থের মূল, যৌবনই জীবনের উত্থান-পতনের কারণ। মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনটাও নির্ভর করে যৌবনের কর্ম, চেষ্টা, সময়ের সদ্ব্যবহার, উপলব্ধি ইত্যাদির উপর। যৌবনের ছোঁয়াতেই মানবজীবনে পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়, আবার যৌবনের উত্তাপেই জীবন পরিণত হয় নরকে। মানব জীবনের যে আনন্দ-বেদনা, আশা-নৈরাশ্য, পাওয়ার সুখ, না পাওয়ার বেদনা তা নির্ভর করে যৌবনে করা কর্ম-অকর্ম ও বোধশক্তির ওপর। যৌবন জীবনের দর্পণস্বরূপ। একজন মানুষের যৌবনে করা কাজের প্রতিফলনই তার ভবিষ্যৎ জীবনে ফুটে ওঠে। কোনো ব্যক্তি যদি তার জীবনটা মসৃণভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় তবে তাকে যৌবন থেকেই হতে হবে যত্নবান ও তৎপর। অন্যথায় তার জীবনে দেখা দেবে নানা সমস্যা। আর সে সকল সমস্যা মোকাবিলা করতে হলে একজন মানুষকে হতে হবে প্রবল আত্মবিশ্বাসী। নতুবা সে সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সামর্থ্য তার থাকবে না। যে সব মহান ব্যক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এ বিশ্বসংসারকে, তাঁরা তাঁদের যৌবনের মূল ভিতটা গড়ে তুলেছিলেন মজবুত করে। যৌবনের অজেয় শক্তিকে হেয় না করে, সে শক্তিকে তাঁরা সৃষ্টিশীল কর্মে রূপান্তরিত করেছিলেন। এক কথায় যৌবনের সব শক্তিকে সৃজনশীলতার অম্লান শক্তিতে পরিণত করেই তাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন।

  • আঠারো বছর বয়সের নেই ভয় পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা, এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়- আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।
    • আঠারো বছর বয়স, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্তসমগ্র, চারুলিপি, পৃষ্ঠা ৬২।
  • এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে, প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।
    • আঠারো বছর বয়স, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্তসমগ্র, চারুলিপি, পৃষ্ঠা ৬২।
  • আঠরো বছর বয়স ভয়ঙ্কর তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা, এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।
    • আঠারো বছর বয়স, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্তসমগ্র, চারুলিপি, পৃষ্ঠা ৬২।
  • আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান, দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।
    • আঠারো বছর বয়স, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্তসমগ্র, চারুলিপি, পৃষ্ঠা ৬২।
  • এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।
    • আঠারো বছর বয়স, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্তসমগ্র, চারুলিপি, পৃষ্ঠা ৬২।
  • তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি, এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে, বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।
    • আঠারো বছর বয়স, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্তসমগ্র, চারুলিপি, পৃষ্ঠা ৬২।
  • এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয় পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে, এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়- এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।
    • আঠারো বছর বয়স, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকান্তসমগ্র, চারুলিপি, পৃষ্ঠা ৬২।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

সুকান্ত ভট্টাচার্য

কাজী নজরুল ইসলাম

লিও তলস্তয়

উইলিয়াম ব্লেইক

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা