কাহ্নপা
কাহ্নপাদ (আনু. ১০ম শতক) বা কাহ্ন পা বা কনহপা বা কাহ্নিল পা বা কৃষ্ণপাদ বা কৃষ্ণাচার্য্য চুরাশিজন বৌদ্ধ মহাসিদ্ধদের মধ্যে একজন ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের আদি নির্দশন চর্যাপদের কবিগোষ্ঠীর মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক ১৩টি পদের রচয়িতা।

উক্তি
সম্পাদনা- চর্যা:৭
আলিএ কালিএ বাট রুন্ধেলা ।
অন্তর্নিহিত ভাব:-
আলি-কালি অর্থ' যথাক্রমে লোকজ্ঞান ও লোকভাস। রজ্জুতে সর্পভ্রমের ন্যায় এই জগৎ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে লোকভাস। লোকজ্ঞানকে এখানে লোক বাসের সঙ্গে অভিন্নরূপে গ্রহন করা হয়েছে; ভ্রান্তিবশতঃ এই লোকজ্ঞান ও লোকভাসকেই প্রকৃতরূপে গ্রহন করাতে নির্বাণলাভের পথ অবরুদ্ধ হয়।
- চর্যাগীতিকা। মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পাদিত)। স্টুডেন্ট ওয়েজ, অষ্টম সংস্করণ। পৃষ্ঠা ৭৭।
- চর্যা:৭
জো মণ গোঅর সো উআস ॥ ধ্রু ॥
নিহিতার্থ:-
যে এই জগতের মায়াকে চেনে তাকে জানে সে(জাগতিক মোহ সম্বন্ধে) উদাস।
- চর্যাগীতিকা। মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পাদিত)। স্টুডেন্ট ওয়েজ, অষ্টম সংস্করণ। পৃষ্ঠা ৭৭।
- চর্যা:৭
জে জে আইলা তে তে গেলা ।
অবণাগবণে কাহ্ন নিঅড়ি বিমণা ভইলা' ॥ ধ্রু ॥
নিহিতার্থ:-
জগতে যা কিছু উৎপন্ন হয়, তা বিনাশ লাভ করে_এ দেখে কাহ্নপা দুঃখিত হয়ে মুক্তির পথ সন্ধান করছেন।
- চর্যাগীতিকা। মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পাদিত)। স্টুডেন্ট ওয়েজ, অষ্টম সংস্করণ। পৃষ্ঠা ৭৭।
- চর্যা:৯
জিন জিম করিআ করিণিরে রিসই ।
তিম তিম তথতা মঅগল বরিসই ॥ ধ্রু ॥
অন্তর্নিহিত ভাব:-
হস্তী যেমন হস্তিনীর প্রতি আসক্ত হয়, তেমনি খাদে পতিত হস্তী অর্থাৎ সংসারের মায়ায় আবদ্ধ মানব জগতের প্রতি তাঁর আকর্ষণরূপ মদ্য বর্ষণ করে।
- চর্যাগীতিকা। মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পাদিত)। স্টুডেন্ট ওয়েজ, অষ্টম সংস্করণ। পৃষ্ঠা ৮২।
- চর্যা:৯
ছড়গই সঅল সহাবে সূধ ।
ভাবাভাব বলাগ ন ছুধ ॥ ধ্রু ॥
নিহিতার্থ:-
জীব সকল স্বভাবতই শুদ্ধ, সকলেই ধর্মকায় হতে উদ্ভূত। কেবল অবিদ্যা-জনিত প্রবৃত্তি থেকেই মানুষ বস্তুস্বরূপ বিস্মৃত হয়।
- চর্যাগীতিকা। মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পাদিত)। স্টুডেন্ট ওয়েজ, অষ্টম সংস্করণ। পৃষ্ঠা ৮২।
- চর্যা:১১
রাগ দেশ মোহ লইআ ছার ।
পরম মোখ লভই মুত্তিহার ॥ ধ্রু ॥
নিহিতার্থ:-
রাগ-দ্বেষ-মোহকে ভস্মীভূত করলেই লাভ হয় পরমমোক্ষের মুক্তাহার।
- চর্যাগীতিকা। মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পাদিত)। স্টুডেন্ট ওয়েজ, অষ্টম সংস্করণ। পৃষ্ঠা ৮৯।
কাহ্নপা সম্পর্কে উক্তি
সম্পাদনা- চর্যাপদের কবিগণের মধ্যে সর্বাধিক পদ রচনার গৌরব অর্জন করেছেন চর্যাকার কাহ্ন পা। তার তেরটি পদ চর্যাপদে ঠাঁই পেয়েছে। এই সংখ্যাধিক্যের দরুন তাকে ‘শ্রেষ্ঠ চর্যাকার’ বলে অভিহিত করা হয়।
- সংগৃহীত: রোর মিডিয়া।