গরুর গাড়ি
ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী যানবাহন
গরুর গাড়ি হলো গরু বা বলদে টানা দুই চাকাবিশিষ্ট একপ্রকার যান। এই যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুড়ে এই গাড়ি টানা হয়। তবে চার চাকাবিশিষ্ট গরুর গাড়িও দেখা যায়। সাধারণত গাড়ির সামনের দিকে চালক বসেন। তার পিছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির ব্যবহার যথেষ্টই ব্যাপক। বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এই যানটি ব্যবহার করে আসছে।
উক্তি
সম্পাদনা- কুমোর-পাড়ার গোরুর গাড়ি—
বোঝাই করা কলসি হাঁড়ি।
গাড়ি চালায় বংশীবদন,
সঙ্গে যে যায় ভাগ্নে মদন।- হাট- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চিত্রবিচিত্র, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশসাল ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৮ বঙ্গাব্দ), কলকাতা, পৃষ্ঠা ২৮
- ঐ চলেছে গরুর গাড়ি মাঠের পাশে,
কাঠের চাকায় ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর শব্দ আসে।
গাড়োয়ানটা পাগড়ি মাথায় পড়ছে ঢুলে,
আপন মনে চলছে গরু ল্যাজুড় তুলে।- গরুর গাড়ির গান- সুনির্মল বসু, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪
- কাদায় সমস্ত রাস্তা পরিপূর্ণ। গরুর গাড়ি হটর হটর করিয়া চলিল। কোথাও নামিয়া চাকা ঠেলিতে হইল, কোথাও গরু দুটোকে নির্দয়রূপে প্রহার করিতে হইল—যেমন করিয়াই হোক, এ ষোল ক্রোশ পথ অতিক্রম করিতেই হইবে। হুহু করিয়া ঠাণ্ডা বাতাস বহিতেছিল। আজও তাহার সন্ধ্যার পর প্রবল জ্বর দেখা দিল। সে সভয়ে প্রশ্ন করিল, গাড়োয়ান, আর কত পথ? গাড়োয়ান জবাব দিল, এখনো আট-দশ কোশ আছে বাবু।
- দেবদাস- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- প্রদীপকুমার সরকার, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৫
- যদি আমার অবস্থা মন্দ হয়, অথবা পল্লীগ্রামের কাঁচা অসম পথে যাইতে হয়, অথবা যদি অন্য গাড়ি না জোটে, তবে আমাকে গরুর গাড়িই চড়িতে হইবে। আমি জানি, গোযান অপেক্ষা মোটরযান বহু বিষয়ে উন্নত এবং মোটরে যতপ্রকার বৈজ্ঞানিক ব্যাপার আছে গোযানে তাহার শতাংশের একাংশও নাই। তথাপি আমি গরুর গাড়ি নির্বাচন করিয়া বিজ্ঞানকে অস্বীকার করি নাই। মোটরে যে অসংখ্য জটিল বৈজ্ঞানিক কৌশলের সমবায় আছে তাহা আমার অবস্থার অনুকূল নয়, অথচ যে সামান্য বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপর গরুর গাড়ি নির্মিত তাহাতে আমার কার্যোদ্ধার হয়। কিন্তু যদি গরুর গাড়ির মাঝে চাকা না বসাইয়া শেষ প্রান্তে বসাই অথবা ছোট বড় চাকা লাগাই তবে অবৈজ্ঞানিক কার্য হইবে। অথবা যদি আমাকে অন্ধকারে দুর্গম পথে যাইতে হয়, এবং কেহ গাড়ির সম্মুখে লণ্ঠন বাঁধিবার যুক্তি দিলে বলি—গরুর গাড়ির সামনে কস্মিন্ কালে কেহ লণ্ঠন বাঁধে নাই, অতএব আমি এই অনাচার দ্বারা সনাতন গোযানের জাতিনাশ করিতে পারি না—তবে আমার মূর্খতাই প্রমাণিত হইবে।
- রাজশেখর বসু, লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- রঞ্জন পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০-২১
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় গরুর গাড়ি সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে গরুর গাড়ি সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।