গুরুচাঁদ ঠাকুর

হিন্দুধর্মীয় সাধক

গুরুচাঁদ ঠাকুর (১৩ মার্চ ১৮৪৬ - ১৯৩৭) একজন বাঙালি সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাব্রতী। তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, দলিত হিন্দুদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের পথিকৃৎ। মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হরিচাঁদ ঠাকুর তার পিতা। তৎকালীন ব্রাহ্মণ কর্তৃক চন্ডাল তথা নিচু জাতের প্রতি নিপীড়ন ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সহ সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে "নমশূদ্র" নামকরন করেন

   

“ব্রাহ্মণ রচিত যত অভিনব গ্রন্থ।
‘ব্রাহ্মণ প্রধান’ মার্কা বিজ্ঞাপন যন্ত্র॥”

গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ২৩
   

“বিশ্ব ভরে এই নীতি দেখি পরস্পর।
যে যাহারে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর॥”

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ৫৭২
   

"আজি যারা তপসিলী জাতি সাজিয়েছে।
শিক্ষা ছাড়া উন্নতি কি সম্ভব হয়েছে॥"

গুরুচাঁদ চরিত
   

"জাতির উন্নতি লাগি, হও সবে স্বার্থত্যাগী
দিবারাত্র চিন্তা কর তাই
জাতি ধর্ম, জাতিমান, জাতি মোর ভগবান
জাতি ছাড়া অন্য চিন্তা নাই॥"

গুরুচাঁদ চরিত
   

"বিদ্যাহীন নর যেমন পশুর সমান।
 বিদ্যার আলোকে প্রাণে জ্বলে ধর্মজ্ঞান॥


আইন সভায় যাও আমি বলি রাজা হও।
 ঘুচাও এ জাতির মনের ব্যথা॥"

গুরুচাঁদ চরিত
   

 "ইতর পশুরা আছে বেঁছে যেই ভাবে
তোরাও তাদের মত কাজে কি স্বভাবে
এমন জীবনে বল বেঁচে কিবা ফল।
আকারে মানুষ বটে পশু একদল॥"

গুরুচাঁদ চরিত
   

"যে জাতির দল নেই, সে জাতির বল নেই।
যে জাতির রাজা নেই, সে জাতি তাজা নেই॥


ভিন্ন ভিন্ন দল কেহ কর না গোসাঁই।


দুই ভাই এক ঠাই রহ মিলেমিশে।
ভাই মেরে বল কেন মর হিংসা বিষে॥

গুরুচাঁদ চরিত
   

বিদ্যা ছাড়া কথা নাই বিদ্যা কর সার।
বিদ্যাধর্ম, বিদ্যাকর্ম, অন্য সব ছার॥

গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ১০৮
   

তাই বলিভাই মুক্তি যদি চাই
     বিদ্যান হইতে হবে।
পেলে বিধ্যাধন দুঃখ নিবারণ
     চির সুখি হবে ভবে॥

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ১৩০
   

অজ্ঞান ব্যাধিতে ভরা আছে এই দেশ।
জ্ঞানের আলোকে ব্যাধি তুমি কর শেষ॥

গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ১৩৭
   

“খাও বা না খাও তা’তে কোন দুঃখ নাই।
ছেলে পিলে শিক্ষা দেও এই আমি চাই”॥

গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ১৪৪
   

ছেলে মেয়েকে দিতে শিক্ষা
  প্রয়োজনে করিবে ভিক্ষা।

গুরুচাঁদ চরিত
   

শিক্ষা আন্দোলন যবে প্রভু করে দেশে।
ভক্‌ত সুজন যত তার কাছে আসে॥
নমঃশূদ্র তেলী মালী আর কুম্ভকার।
কপালী মাহিষ্য দাস চামার কামার॥
পোদ আসে তাতী আসে আসে মালাকার।
কতই মুসলমান ঠিক নাহি তার॥
সাবাকে ডাকিয়া প্রভু বলে এই বাণী।

গুরুচাঁদ চরিত
   

“শুন সবে ভক্তগণ আমি যাহা জানি॥
নমঃশূদ্রকুলে জন্ম হয়েছে আমার।
তবু বলি আমি নাহি নমঃর একার॥
দলিত পীড়িত যারা দুঃখে কাটে কাল।
ছুঁস্‌নে ছুঁস্‌নে বলে যত জল-চল॥
শিক্ষা-হারা দীক্ষা-হারা ঘরে নাহি ধন।
এই সবে জানি আমি আপনার জন॥”

গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ১৪৪
   

শুনেছি পিতার কাছে আমি বহুবার
নারী পুরুষ পাবে সম অধিকার॥
সমাজে পুরুষ পাবে যেই অধিকার।
নারীও পাইবে তাহা করিলে বিচার॥

গুরুচাঁদচরিত
   

“শুন কন্যা, গুণে ধন্যা, আমার বচন।
জাতি-ভাগ মোর ঠাঁই পাবে না কখন॥
 নরাকারে ভূমন্ডলে যত জন আছে।
‘এক জাতি’ বলে মান্য পাবে মোর কাছে॥
আমার পিতার ভক্ত আছে যত জন।
এক জাতি বলে তারা হয়েছে গণ॥
লোকাচারে তার কেহ কায়স্থ ব্রাহ্মণ।
‘মতুয়ার’ মধ্যে তাহা নাহি নিরূপণ॥
নমঃশূদ্র, তেলী মালী, ব্রাহ্মণ কায়স্থ।
ইস্‌লাম, বৈদ্য জাতি-রোগে সিদ্ধ-হস্ত॥
মতুয়া সকলে এক, জাতি-ভেদ নাই।
বিশেষতঃ কন্যা হ’লে নাহিক বালাই॥”

গুরুচাঁদচরিত পৃঃ ২০০/২০১
   

“দেবতা-মন্দির সবে গড়’ ঘরে ঘরে।
নিত্য পূজা কর সেথা সকল অন্তরে॥
এইখানে আমি বলি’ এক সমাচার।
দেবতা-মন্দিরে পূজা করিবে কাহার?
বিশ্বভরে এই নীতি দেখি পরস্পর।
যে যারে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর॥

(গুরুচাঁদ চরিত, পৃ-৫২৯)
   

“বিদ্যা ছাড়া এ জাতির দুঃখ নাহি যাবে।
গ্রামে গ্রামে পাঠশালা কর তাই সবে॥
বালক বালিকা দোঁহে পাঠশালে দাও।
লোকে বলে ‘মা’র গুণে ভাল হয় ছা’ও॥”

গুরুচাঁদ চরিত, পৃ-৫২৯
   

“প্রভু বলে ‘শোন সবে নমঃশূদ্রগণ।
ধর্ম্ম শক্তি বিনা জাতি জাগ না কখন।’”

গুরুচাঁদ চরিত, পৃ-৫২৯
  • ‘এই মন্দিরে এমন ঈশ্বরকে স্থাপন করে পূজা করবে, যে ঈশ্বর সারা বিশ্বময় বিরাজ করছে। যে ঈশ্বর মানুষকে তাদের প্রতি অন্যায়, অত্যাচার, সামাজিক ধর্মীয় বিষয়ে জাতিভেদ ও সমস্ত অসমানতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠে সংগ্রাম করেছেন। এই সব সমস্যা থেকে পীড়িতদের উদ্ধার করেছেন। সেই ঈশ্বরের পূজা করতে হবে।’

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা