বহিপীর
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত সামাজিক নাটক
বহিপীর বাংলাদেশি সাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ-র বাংলা ভাষায় রচিত একটি নাটক। এটি ১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। এর আগে ১৯৫৫ সালে ঢাকায় পিইএন ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে "বহিপীর" নাটক পুরস্কার লাভ করে।
উক্তি
সম্পাদনাপ্রথম অঙ্ক
সম্পাদনা- (হেসে) আপনার তো বুড়োর বিয়ে হয়নি, আপনি কী করে বুঝলেন কেন বা কী করে পালিয়েছি?
- তাহেরা
- ... বুড়োর কাছে বিয়ে হলেই এমন করে পালায় নাকি কেউ? বিয়ে হল তকদিরের কথা? কারও ভালো দুলা জোটে, কারো জোটে না, কেউ স্বাস্থ্য, সম্পদ সবাই পায়, কেউ পায় না। তাই বলে পালাতে হয় নাকি? ওটা কত বড় গুনাহ্ তা বোঝো না?
- খোদেজা
- ...বয়স হলেও পীর হলো পীর। তাছাড়া জোয়ান পীর তো দেখা যায় না।
- খোদেজা
- ... আমি কথাবার্তা বিলকুল বহির ভাষাতেই করিয়া থাকি। ইহার একটি হেতু আছে। দেশের নানা স্থানে আমার মুরিদান। একেক স্থানে একেক ঢঙের জবান চালু। এক স্থানের জবান অন্য স্থানে বোধগম্য হয় না, হইলেও হাস্যকর ঠেকে। আমি আর কী করতে পারি। সে সমস্যার সমাধান করিবার জন্যই আমি বহির ভাষা রপ্ত করিয়া সে ভাষাতে আলাপ-আলোচনা কথাবার্তা করিয়া থাকি, বহির ভাষাই আমার একমাত্র জবান। তাছাড়া কথ্য ভাষা আমার কানে কটু থেকে। মনে হয়, তাহাতে পবিত্রতা নাই, গাম্ভীর্য নাই। আমার কর্তব্য মানুষের কাছে খোদার বাণী পৌঁছাইয়া দেওয়া। উক্ত কার্যের জন্য পুস্তকের ভাষার মতো পবিত্র ও গম্ভীর আর কোন ভাষা নাই। কথ্য ভাষা হইল মাঠ ঘাটের ভাষা, খোদার বাণী বহন করার উপযুক্ততা তাহার নাই।
- বহিপীর
- একবার ঝুট কথা বললে উপায় নেই, তখন একটার পর একটা বলতে হয়; একবার শুরু হলে তার শেষ নাই।
- হাতেম আলি
- দুনিয়াটা মস্ত এক পরীক্ষা ক্ষেত্র। খোদা কাকে কীভাবে পরীক্ষা করেন তা বুঝিবার ক্ষমতা আমাদের নাই।
- বহিপীর
- পুত্র কন্যার শিক্ষাদীক্ষার ভার পিতা-মাতার উপরেই। সে শিক্ষাদীক্ষার গাফিলতি হইলে দোষটা পিতা মাতার ঘাড়েই পড়ে।
- বহিপীর
- ... নিজেরই ক্ষতি হইবে জানিয়া ও স্ত্রীলোক কখনো পেটে কথা চাপিয়া রাখিতে পারে না।
- বহিপীর
দ্বিতীয় অঙ্ক
সম্পাদনা- ...খোদাই রিজিকদেনেওয়ালা। যার তকদিরে যত রিজিক ধার্য করা আছে, সে তাহার বেশি ভোগ করতে পারে না। সে রিজিক ধীরে ধীরে ভোগ করিলে ভোগের সময় দীর্ঘ হইবে; দ্রুত খাইয়া ফেলিলে শীঘ্র তাহা শেষ হইয়া যাইবে। কিন্তু তবু খোদা কিছু না কিছু ব্যবস্থা করেন। যাহাকে একেবারে নিঃস্ব মনে হয় তাহারও কৃষ্ণ কিছু থাকে। আর কিছু না কিছু থাকিলেও রূহিনিয়াৎ তো থাকিতে পারে না। কেউ কখনো একেবারে নিঃস্ব হয় না।
- বহিপীর
- ...বার্তাবাহককে যে দলহীন হতে হয়। কোন দলের প্রতি একটু টান থাকলে আর ঘটনাপ্রবাহ তার অনুকূল না হলে তার পক্ষে নির্বিকার থাকা মুশকিল...
- হাশেম আলি
- বিয়ের ব্যাপার কি আইন-মকদ্দমা নাকি?
- খোদেজা
- পড়াশোনা করেছি, এটা না হয় সেটা হবে, কিছু একটা করে খেতে পারবই। একটা স্বপ্ন ভেঙে গেলে আরেকটা স্বপ্ন গড়তে পারব।
- হাশেম আলি
- লোকেরা বলে, খোদা আমার দেলে রুহানি শক্তি দিয়েছেন। কিন্তু সে কথা আমি জানি না। আমি উদার লোক। বহুরূপীকে যেমন বহুরূপী হইবার জন্য সঙ সাজিতে হয়, তেমনি পীর হইতে হইলে তাহাকে পীরের সঙ ধরিতে হইবে-একথা আমি মানি না। কিন্তু রুহানি শক্তি থাকুক বা না থাকুক, আমি টক করিয়া মানুষের মনের কথা বুঝিতে পারি।
- বহিপীর
- দায়িত্বের খাতিরে দায়িত্ব পালন করা আর স্নেহ-মমতার খাতিরে দায়িত্ব পালন করার মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক।
- বহিপীর
- সমস্ত ত্যাগ করিলে এবাদত হয় না, কারণ সমস্ত ত্যাগ করিলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, অমানুষে পরিণত হয়। শূন্যতার মধ্যে শূন্যতাই সম্ভব; যেখানে রূহ-এর মুক্তি মিলে না। তাহা হইলে খোদা কেবল আসমানই সৃষ্টি করিতেন, জমিন করিতেন না। অবশ্য অর্থ-যশ-মানের লোভ ত্যাগ করিতেই হয়, কিন্তু জীবনে সামান্য ঘনিষ্ঠ স্নেহ মমতার সিঞ্চন না থাকিলে কোন এবাদতই সম্ভব নয়। পানির অভাবে বৃক্ষ যেমন শুকাইয়া মরিয়া যায়, তেমনি সামান্য স্নেহ না থাকিলে রূহও মরিয়া যায়। তখন এক ঢোক পানি না পাইলে ঐশী প্রেমের সাধনা করা যায় না।
- বহিপীর
- লজ্জা করে কী হবে, আব্বা? তা ছাড়া করার যখন আর কিছুই নাই তখন চক্ষুলজ্জা অর্থহীন। আমরা যদি দোষী হয়েই থাকি, তবে সে দোষ চক্ষুলজ্জায় ঢাকবে না, বরঞ্চ তাতে দোষটা খুঁচিয়ে বের করে দেখানো হবে।
- হাশেম আলি
- ...বদান্যতার জোরে জান যায় মানুষের; তার নেশায় অন্ধ হয়। বুদ্ধি-বিবেচনার শক্তিও হারায়।
- হাশেম আলি
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিপিডিয়ায় বহিপীর সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।