বাউল

বাংলাদেশের বিশেষ বাঙালি লোকাচার ও ধর্মমত

বাউল শিল্পী বা বাউল সাধক বা বাউল একটি বিশেষ ধরনের গোষ্ঠী ও লোকাচার সঙ্গীত পরিবেশক, যারা গানের সাথে সাথে সুফিবাদ, দেহতত্ত্ব প্রভৃতি মতাদর্শ প্রচার করে থাকে। বাউল সাধক বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকে। মূলত বাউল সংগীত একধরনের বাংলা সুফিবাদ সংগীত ছিল। বাউল গান পঞ্চবিংশ শতাব্দীতে লক্ষ্য করা গেলেও মূলত কুষ্টিয়ার লালন সাঁইয়ের গানের মধ্য দিয়ে বাউল মত পরিচিতি লাভ করে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের নিকট। বাউলদের সাদামাটা জীবন ধারণ ও একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউলদের বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলাদেশের বাউল-সঙ্গীত শিল্পী

বাউল সম্পর্কে উক্তি

সম্পাদনা
  • বাংলার বাউল বা বাউল সংগীত গবেষকেরা অদ্যাবধি কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে পারেন নি। সাধারণত মানা হয় যে "বাউল" শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ "বাউর" থেকে, যার অর্থ স্বেচ্ছাচারী, বিশৃঙ্খল বা উন্মাদ।
  • কেউ কেউ বলেছেন, সংস্কৃত “বাতুল” শব্দ থেকে বাউল শব্দটির উৎপত্তি, এই গবেষকদের মতে- যে সব লোক প্রকৃতই পাগল, তাই তারা কোনো সামাজিক বা ধর্মের কোনো বিধিনিষেধ মানে না, তারাই বাউল।
    • মনসুর মুসা (সম্পাদিত), মুহম্মদ এনামুল হক রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, “বঙ্গে সূফি প্রভাব”, ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ১৯৯১, পৃ. ১৬০।
  • বাউলদের মধ্যে দুটি শ্রেণি আছে গৃহত্যাগী বাউল ও গৃহী বা সংসারী বাউল।
  • বাউলেরা উদার ও অসাম্প্রদায়িক ধর্মসাধক। তারা মানবতার বাণী প্রচার করে।
  • বাউল মতে বৈষ্ণবধর্ম এবং সূফীবাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বাউলরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় আত্মাকে। তাদের মতে আত্মাকে জানলেই পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তাকে জানা যায়। আত্মা দেহে বাস করে তাই তারা দেহকে পবিত্র জ্ঞান করে। সাধারণত প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও বাউলরা জীবনদর্শন সম্পর্কে অনেক গভীর কথা বলেছেন।
  • বাউল সাধকদের শিরোমণি ফকির লালন সাঁই। লালন তার বিপুল সংখ্যক গানের মাধ্যমে বাউল মতের দর্শন এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রচার করেছিলেন।
  • বাউল-ফকিরদের সাময়িক আবাসস্থলের নাম আখড়া। এসব আখড়া পল্লিগ্রামের লোকালয় থেকে একটু দূরে অবস্থিত। সাধারণত সংসারত্যাগী এবং ভেকধারী বাউল-ফকিররাই এখানে অবস্থান করে।
  • বাউল গান সাধারণত দুপ্রকার দৈন্য ও প্রবর্ত। এ থেকে সৃষ্টি হয়েছে রাগ দৈন্য ও রাগ প্রবর্ত। এই ‘রাগ’ অবশ্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ নয়, ভজন-সাধনের রাগ।
  • অতীতে বাউল বা লালনের গানে নির্দিষ্ট কোনো সুর ছিল না। পরবর্তীকালে লালনশিষ্য মনিরুদ্দিন ফকির এবং তাঁর শিষ্য খোদা বক্স এই গানের একটি ‘ছক‘ বাঁধার প্রচেষ্টা নেন।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

কাহ্নপা কাজী মোতাহার হোসেন কাজী আবদুল ওদুদ

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা